দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছেন নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ ঘোষণা দেন। এর আগে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে প্রথম কর্মদিবসে উপলক্ষে মিলিত হন এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ডা. সামন্ত লাল বলেন, আমার প্রথম কাজ হবে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে যেন চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে পারি। এটা একদিনে পারবো না, আমি সচিব এবং ডিজি মহোদয়দের সঙ্গে বসে আলোচনা করবো, কীভাবে কি করা যায়। আমরা যদি চিকিৎসা সেবাটাকে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারি তাহলে ঢাকা শহরে মাটিতে শুয়ে রোগীদের চিকিৎসা নিতে হবে না। স্বাস্থ্য সেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে নিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ কি মনে করে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যারা চিকিৎসক রয়েছেন, তাদের মেধা বিশ্বের কোনো দেশের চেয়ে কম নয়। আমি যদি একজন চিকিৎসককে ভালো একটি কাজের পরিবেশ দিতে পারি, তাহলে নিশ্চয়ই তারা কাজ করবে। যেমন পাটগ্রাম সেখানে যদি একটি ভালো অপারেশন থিয়েটার, ভালো ফ্যাসিলিটি থাকে, তাহলে তাদের আর ঢাকায় আসতে হবে না। আমি চেষ্টা করে দেখি কতদূর কি করতে পারি। কাজের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় অগ্রাধিকার দেবেন জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমার প্রথম কাজ হবে আমি প্রত্যেকটা হাসপাতাল ভিজিট করবো। শুধু ঢাকা শহরের হাসপাতাল নয় টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সব হাসপাতাল আমি ভিজিট করবো। গ্রামে গঞ্জে প্রতিটা হাসপাতালে গিয়ে দেখতে হবে তাদের কি কি সমস্যা রয়েছে। এ কাজটাই আমি প্রথমে করবো। সরকারি হাসপাতালে সেবা বৃদ্ধি করা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, আমি যেন দেশের হাসপাতালগুলো নিজে পরিদর্শন করে দেখি এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিই। আমি খুব দ্রুতই দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেবো। আমার বিশেষ লক্ষ্য থাকবে গ্রামের হাসপাতালগুলোর প্রতি। গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা সেবা নিতে যেন ঢাকায় আসতে না হয়, গ্রাম থেকেই যেন ভালো চিকিৎসা পায়, সেটি নিয়ে আমরা কাজ করবো। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একটা জিনিস মনে রাখবেন, আমরা যে ডাক্তার তৈরি করছি সে কিন্তু আমারও চিকিৎসা করবে। আমি যদি কোথাও যাই, রাস্তায় যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে আমার চিকিৎসা সেই ডাক্তার করবে, তাই আমাদের সেই রকম কোয়ালিফাইড ডাক্তার তৈরি করতে হবে। আপনারা দোয়া করবেন আমি যেন আপনাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি। আমি একনিষ্ঠভাবে চেষ্টা করব এতে কোনো সন্দেহ নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি দূর করতে আপনারা কি করবেন জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির বিষয়ে আমিও শুনেছি কিন্তু ভেতরের বিষয় আমিও জানি না, তবে এটুকু বলতে পারি দুর্নীতির ব্যাপারে আমার জিরো টলারেন্স থাকবে। আমি নিজেও কোনোদিন দুর্নীতি করি না। এ ব্যাপারে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি আমাকে বলেছেন, তুমি করো, কোথাও কোনো সমস্যা হলে আমাকে ফোন করবা, আমি সেটাই করবো। ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আমরা যদি সবাই সিনসিয়ারলি কাজ করি, কিছুই অসম্ভব নয়। পাঁচ থেকে পাঁচশ বেডে (বার্ন ইউনিট) নিয়ে আসতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। আমি অনেকের কাছে গিয়েছি। প্রথম প্রথম আমাকে অনেকেই ফিরিয়ে দিয়েছেন, ফাইল ছুড়ে মেরেছেন, এ রকম ঘটনাও আছে। কিন্তু আমি ধৈর্য ধরে সবার সহযোগিতা নিয়েই এ জায়গায় এসেছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আপনাদের সবার কাছেই অনুরোধ, এ মন্ত্রণালয়ে যারা কর্মকর্তা আছেন এবং যারা বাইরে আছেন, আপনারা যেকোনও সময় আমার অফিসে চলে আসবেন। আপনাদের জন্য আমার দরজায় কোনো প্রটোকল থাকবে না। আমি আগের মতোই থাকবো, আমাকে একটু উপদেশ দেবেন। আপনাদের উপদেশ পেলে আমরা নির্দ্বিধায় কাজ করতে পারবো। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, একটি মেডিকেল কলেজ খুললেই হবে না। সেখানে চিকিৎসকসহ অনেক কিছু লাগবে। আমি সবগুলো বিষয় দেখবো। গ্রামে ডাক্তাররা কেন থাকেন না, তার কারণ বের করতে হবে; তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সব দেখে আমি ব্যবস্থা নেবো। ব্রিফিংকালে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, বিএসএমএমইউ এর ভিসি শারফুদ্দিন আহমেদ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহান আরা বানু, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটু মিয়াসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।