এক সপ্তাহ ধরে নীলফামারীতে সূর্যের দেখা নেই। প্রচণ্ড শীতে কাবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। কুয়াশার ঘনত্ব এতটাই বেশি যে দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় রেলপথ ও সড়ক পথে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার পরও সূর্যের দেখা মেলেনি। এদিন নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন বলেন, হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। রোববার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দিনের চেয়ে রাতে অনেক বেশি ঠান্ডা বেশি অনুভূত হচ্ছে। ভোর আর সন্ধ্যায় গ্রামে গ্রামে জটলা বেঁধে আগুন পোহানোর মাধ্যমে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে অনেকে। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের উষ্ণতা নিতে গিয়ে কোথাও কোথাও ঘটছে অগ্নিদগ্ধের ঘটনাও। সন্ধ্যার পরে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। প্রচণ্ড শীতে কাজে বের হতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। ঠান্ডা বাতাসে ঘরে থাকা দায় হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষদের। ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডায় নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা ও আলুখেত। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ঠান্ডায় কষ্ট পাঁচ্ছে গরু-ছাগল। রামগঞ্জ বাজার এলাকায় রিকশা নিয়ে গুটিসুটি হয়ে বসে থাকা রব্বানী ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ ধরে ঠান্ডায় যাত্রী ঠিকমত পাই না। শহর ফাঁকা, লোকজন নাই। রিকশার জমার টাকা কামাই হয় না। তিনি আরও বলেন, সামর্থ্যবানরা শীত থেকে বাঁচতে পারলেও হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের অবস্থা খুবই করুণ। তারা না পারছে শীত নিবারণ করতে, না পারছে খাবার সংগ্রহ করতে। ফলে দুর্বিষহ অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। সদরের চওড়া এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, কুয়াশা আর ঠান্ডায় বাড়ির সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। গরু-ছাগলের অবস্থা খারাপ। খুব কষ্টে দিন পার করছি। এ ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হওয়া বড় দায়। ওই এলাকার কৃষক দেয়ানত আলী বলেন, এক সপ্তাহ ধরে কুয়াশায় কিছুই দেখা যায় না। ঠান্ডায় কৃষিকাজও করতে পারছি না। নীলফামারীর জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, শীত মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা প্রস্তুত রয়েছে। শীতবস্ত্র হিসেবে জেলার ৬ উপজেলা ও চার পৌরসভায় তিন দফায় ৩৬ হাজার ৮৮০টি কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও শীতার্ত মানুষদের কথা চিন্তা করে আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।