খুলনা মহনগরীর খালিশপুর থানার ৩টি জ্বালানি তেল ডিপো কতিপয় জ্বালানি তেল চোর সিন্ডিকেট চক্রের হাতে জিম্মী। এ চক্রের প্রধান কাজই হলো এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় হীন স্বার্থের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ৩ টি জ্বালানি তেল ডিপোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জিম্মী করে ট্যাংক লোরীর মাধমে জ্বালানি তেল পাঁচার ও সেগুলো বিক্রি করে রাতারাতি কালো টাকার পাহাড় গড়ছে। দিন দিন ক্ষতিগ্রস্ত করছে তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স পদ্মা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড, মেসার্স মেঘনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড ও মেসার্স যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড নামে ৩ টি জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। পাশাপশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ৩ টি তেল ডিপো'র ডিলারগণ ও সরকার হারাচ্ছে পুঁজি ও রাজস্ব।
সূত্র থেকে জানা গেছে, খুলনা জেলার খালিশপুর থানার কাশিপুর গ্রামে অবস্থিত তিনটি বৃহৎ জ্বালানি তেল ডিপো মেসার্স পদ্মা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড, মেসার্স মেঘনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড ও মেসার্স যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড। এ ডিপোগুলো থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় তেল সরবরাহ কাজে নিয়োজিত থাকে বিভিন্ন মালিকানা ট্যাংকলরি। এ সকল ট্যাংকলরি চালক ও শ্রমিকগণ ডিপো গেজারসহ নানা কর্মচারীদের সাথে গোপন আঁতাত করে বেশি পরিমানে জ্বালানি তেল লোড নেয়। এ সকল ট্যাংকলরী চালকগণ ডিপোগুলো থেকে বের হয়ে এসে গেটের বাইরে সড়কের দুই ধারের অবৈধ দোকান মালিকগণ ট্যাংকলরীর হোচপাইপ গুলো খুলে দিয়ে বালতি অথবা ড্রাম ঝুলিয়ে তেল চুরি করে আসছে। এ তেল চুরির কাজে জড়িত আছে খালিশপুর থানার কাশিপুর এলাকার সুসংগঠিত জ্বালানি তেল চোর সিন্ডিকেট। এরা এলাকায় এতটাই প্রভাব খাটিয়ে এ জ্বালানি তেল চুরি কারবার পরিচালনা করে আসছে যে কেউ এদের এ অবৈধ স্থাপনা ও তাদের অবৈধ তেল পাঁচার ব্যবসা বন্ধ করতে পারেনি। একসময় যৌথবাহিনী ও র ্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান সদস্যরা অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ তেল চুরি বন্ধ করতে পারলেও বর্তমানে এ তেল চুরি ডিপোগুলোর সামনের সড়কের দুই ধার দিয়ে শতাধিক দোকান নির্মান করেছে। এ সকল দোকান মালিকগণ মূল তেল চোর সিন্ডিকেটের সাথে গোপন আঁতাত করে তেল চুরি কারবার পরিচালনা করে বছরের পর বছর ধরে। আইন প্রয়োগকারী সকল সংস্থার সদস্যরা প্রতিনিয়ত লাখ লাখ টাকার তেল চুরি কারবার পরিচালিত হলেও অজ্ঞাত কারণে নিরব। এদিকে এ সিন্ডিকেট জ্বালানি তেল সরবরাহকারী রেলের ওয়াগন থেকে হোসপাইপ খুলে তেল পাঁচার করার কাজে এলাকায় গড়ে তুলেছে মজবুত টেকসই বেড়া দিয়ে ঘেরা দেওয়া অবৈধ স্থাপনা। খালিশপুর রেলের ওয়াগনের যাতায়াত পথের পাশেই রেল থেকে তেল চুরি কাজে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। এখানেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিরব দর্শকের ভূমিকায়। আর এভাবে তেল চুরি কাজের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জ্বলানি তেল সরবরাহ কাজে ব্যবহৃত ট্যাংকলরীর চালক ও রেলের ওয়াগন কর্মকর্তা- কর্মচারীগণ। যে সকল জ্বালানি তেল চুরি হয় তার মধ্যে রয়েছে কেরোসিন, ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল, ফার্নেস ওয়েল উল্লেখযোগ্য। কাশিপুর ডিপো এলাকায় যে সকল ব্যক্তবর্গ এ তেল চুরির সাথে জড়িত তারা হলো- (১) নাসির (২) লোকমান (৩) রবিন (৪) পলাশ (৫) মাসুম (৬) বাপ্পী (৭) আজগর (৮) তরিকুল (৯) অন্তু (১০) জিয়াসহ আরে অনেকে। তেল চুরির সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ দাম্ভিকতার সাথে বলেন, লেখালেখি করে লাভ হবে না। আমাদের পিছনে শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। তাছাড়া আমরা সকলকে মাসোহারা দিয়ে আমাদের ব্যবসা পরিচালনা করি। অতএব ভয় করব কাকে। কোন প্রতিষ্ঠান থাকল না গেল এ হিসেব করার সময় আমাদের নেই।
এদিকে মেসার্স যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড, মেসার্স মেঘনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড ও মেসার্স পদ্মা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড এর বহিঃ গেট থেকে ট্যাংকলরী সমিতির কার্যালয় পর্যন্ত ২ শতাধিক অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকান দেখা যায় রাস্তার দুই পাশ দিয়ে তেল চোর সিন্ডিকেট চক্রের নিয়ন্ত্রিত। তবে এ জ্বালানি তেল চোর সিন্ডিকেট সদস্যদের অবৈধ ব্যবসা বৈধ দেখানোর জন্য ডিলারশীপের কাগজপত্র আছে বলে জানা যায়। তবে নানা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে এ সকল কাগজপত্র প্রটেকশন কাজে ব্যবহার ছাড়া আর কিছু নয় এমনটিই জানিয়েছেন একটি সূত্র।
এদিকে জ্বালানি তেল পরিবহন কাজে নিয়োজিত সকল ট্যাংকলরী মালিক সমিতি, ট্যাংকলরী শ্রমিক সমিতি, ট্যাংকলরী ড্রাইভার্স ইউনিয়ন সহ সকল ইউনিয়নের চাঁদা আদায় নিজস্ব কার্যালয়কে উপেক্ষা করে স্পর্শকাতর সংরক্ষিত এলাকা ডিপোগুলোর অভ্যন্তরে বসে রশিদ বই ছড়িয়ে রেখে আদায় করতে দেখা যায় যা সুস্পষ্ট আইন ও নীতিমালার পরিপন্থী বলে বিজ্ঞমহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তবে মেসার্স যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড এর ডিপোতে এর ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হয়েছে। সেখানে ডিপোর বাইরে বসে রশিদ কাটতে দেখা গেছে।
এদিকে মেসার্স পদ্মা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড এর ডিপো সুপার এ ব্যাপারে এ প্রতিবেদককে ট্যাংকলরী সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন কর্তাদের সাথে যোগাযোগের জন্য বলেছেন। তবে এ ইউনিয়ন কর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে ডিপোগুলোর সুপারদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সবার সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে কথা হয় কেএমপি খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার হোসেন এর সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।