দ্বাদশ জাতীয় সংসদের রাজশাহী থেকে সংরক্ষিত আসনের এমপি হতে চান রাজশাহী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মর্জিনা পারভীন। তিনি ২০০৫ সাল থেকে অদ্যাবধি সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।এছাড়াও তিনি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তিনি রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার রাজারহাতা এলাকার বাসিন্দা।
এছাড়াও তার রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে নানান অবদান। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।
তিনি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে এ সুযোগ করে দিলে তিনি সংসদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন। মহিলা আওয়ামী লীগের অনেকেরই সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে চলেছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে অনেকেই এমপি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। যারা সরাসরি ভোটে এমপি হতে পারেননি, এমন অনেককে সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি করার নজির রয়েছে। অনেকে মন্ত্রীও হয়েছেন।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মর্জিনা পারভীন বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত আওয়ামী লীগের রাজনীতি সঙ্গে জড়িত আছি। সে জন্য সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন চাইবো। দল যোগ্য মনে করলে আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আশা করি। আমি মহিলা ও সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। বাংলাদেশের পাশাপাশি রাজশাহী যেন এগিয়ে যেতে পারে আমি সে লক্ষে কাজ করবো ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ রক্ষা করে রাজনীতির পথ পাড়ি দিতে চাই।
রাজনীতি কার্যক্রম : মর্জিনা পারভীন ২০০৫ সাল থেকে অদ্যাবধি প্রায় ১৯ বছর ধরে রাজশাহী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে মহিলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করে শক্তিশালী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এক সময়ে জামায়াত-বিএনপির ঘাঁটিকে বর্তমানে মহিলা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত লাভ করেছেন।
মর্জিনা পারভীনের রাজনীতি শুরু হয় ১৯৮৬ সালের দিক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার ইউসুফ আলী কলেজ শাখার সহ-সভাপতির মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে তিনি ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত রাজশাহী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যও নির্বাচিত হন।
পারিবারিক পরিচিতি: মজির্না পারভীনের বাবা মৃত আবুল কাশেম ছিলেন একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। মাতা মৃত সালেহা বেগম গৃহিনী। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবাকে পাক হানাদার বাহিনী ক্যাম্পে ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করেন এবং হত্যার উদ্দেশ্যে তার পিতাসহ অন্যান্যের লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে সৌভাগ্য ক্রমে বেঁচে যায়। পরে সেখান থেকে পালিয়ে এসে আবার মুক্তিযুদ্ধাদের সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তার পিতাকে হত্যা করতে না পেরে নানা ও নানার ভাইকে ক্যাম্পে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। তার বড় ভাই মৃত কায়েস উদ্দিন ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক।
বড়ভাই এ্যাড. আফসার আলী ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। বড় বোন মাতুয়ারা বেগম গোমস্তাপুর উপজেলার মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। সেজো ভাই আবদুল লতিফ রাজশাহী মহানগর কৃষকলীগের সহ-সভাপতি। ছোট ভাই মনিমুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লীগের সাবেক সহ-সভাপতিসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তার অন্যান্য আত্মীয় স্বজন সকলেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্টে পর পরিবারের ভূমিকা: মর্জিনা পারভীনের পিতা এলাকায় বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে জনমত গঠনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে এবং তার বড় ভাই তৎকালীন সময়ে রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের নেতা থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করে সভা ও সমাবেশ করে।
২০০৭-২০০৮ সালে দেশে জরুরী অবস্থাকালীন ভূমিকা : দেশে জরুরী অবস্থা জারীর পর দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা আপা গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ও মুক্তির দাবীতে রাজপথে নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিল সমাবেশএবং মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের নির্মম নির্যাতনের শিকার হন মর্জিান পারভীন। দেশে জরুরী অবস্থা থাকাকালীন সেনাশাসক দ্বারা নির্যাতিত নেতাকর্মিদের আর্থিক, আইনি ও বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করেন তিনি।
রাজনৈতিক কারণে নির্যাতনের বিবরন : মর্জিনা পারভীন ১৯৮২ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগদান করেন। সেই সময়ে দেশে সামরিক ‣স্বরাচার শাসক ছিল। সেই ক্সসরাচার শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে ও বিভিন্ন সময়ে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন।
১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মি ও সংখ্যালঘু
সম্প্রদায়ের উপর নির্মম নির্যাতন নেমে আসলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলে ফলে বিভিন্ন সময়ে পুলিশি
নির্যাতন ও বিএনপি গুন্ডাবাহিনীর হাতে লাঞ্চিত হন। ২০০৭-০৮ সালে জরুরী আইনে জননেত্রী শেখ
হাসিনা গ্রেপ্তার হলে রাজপথে নেতাকর্মিদের নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেন। সেই সমাবেশে পুলিশি
নির্যাতনে নির্মমভাবে আহত হয়ে ১৫ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করেন তিনি।
কোভিড-১৯/ করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবে ভূমিকা: বিশ্ববাপী বৈশ্বিক প্রানঘাতি করোনা সর্ম্পকে সর্বস্তরে জনগনকে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে জন সচেতনতার বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্যবিধী মেনে মানববন্ধন, মাস্ক বিতরন ও হ্যান্ডস্যানিটাইজার সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকরন বিতরন। অসহায়, স্বামী পরিত্যাক্ত, রিদ্র জনগোষ্ঠি, রিক্সাওয়ালাসহ কর্মহীন জনগোষ্ঠির মাঝে খাদ্য বিতরণ করেন। সরাসরি নারীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরো গতিশীল নেতৃত্বের জন্য সংরক্ষিত ১০০ টি আসনের জন্য
মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম ব্যাস্তবায়ন করেন যা সুশিল সমাজে সমাদৃত হয়েছে।
রাজনৈতিক অঙ্গন ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে য্ক্তু হয়ে নারীসহ অসহায় মানুষদের জন্য কাজ করে চলেছেন। এসব কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ তিনি রাজশাহী বিভাগ, জেলা ও মহানগরীর শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়ে পুরস্কারসহ নানান সম্মনানা পেয়েছেন।
মর্জিান পারভীনের অঙ্গীকার ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতিমুক্ত অসম্প্রায়িক সমাজ গড়া ও মানবকল্যানে নিয়োজিত থাকা ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও জননেত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করাই তার স্বপ্ন।