দরজায় কড়া নাড়ছে একুশে বইমেলা। বইমেলায় স্টল তৈরির প্রাথমিক কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এবারের বইমেলায় বরাদ্দ পাঁচ্ছে নতুন ২৩টি স্টল। তবে এখনো কোন প্রকাশনী কোন স্থানে স্টল বরাদ্দ পাবেন তা নির্ধারিত হয়নি। বরাদ্দ না হওয়ায় স্টলের সাজসজ্জার কাজ শুরু করেনি প্রকাশনাগুলো। বাংলা একাডেমি সূত্র জানায়, আগামী ২৩ জানুয়ারি লটারির মাধ্যমে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে। এরপরই সাজসজ্জার কাজ শুরু করবেন প্রকাশনাগুলো। ২০০৬ সালের পর এ বছর আবারও বইমেলা এককভাবে উদ্বোধনের দায়িত্ব নিয়েছে বাংলা একাডেমি। অধিবর্ষ হওয়ায় এবছর মেলার সময় একদিন বেড়ে ২৯দিন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্যমতে, ২০০৬ সাল পর্যন্ত একাডেমি কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে সার্বিক ব্যবস্থাপনাসহ মেলা পরিচালনা করে এসেছে। পরে মেলার পরিসর বৃদ্ধি পেয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ায় বাংলা একডেমি হিমশিম খায়। তাই বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সব কাঠামোসহ অন্যান্য কিছু কাজ সম্পন্ন সম্পন্ন করা হতো। তাদের বিভিন্ন অসহযোগিতা ও সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার পুরো মেলার দায়িত্ব বাংলা একাডেমি একাই সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বছর বইমেলায় স্টল বাড়ানোর কোন চিন্তা নেই বাংলা একাডেমির। তবে বইমেলায় প্রথমবারের মতো আবেদন করা নতুন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমির তথ্যমতে, এবছর স্টলের জন্য ৭৭টি প্রকাশনী প্রথমবারের মতো আবেদন করেছে। তারমধ্যে ২৩টি প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বইমেলা আয়োজন কমিটি। কমিটির সদস্যসচিব ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, স্টল বাড়ানোর কোনো চিন্তা আমাদের নেই। পূর্বে যা ছিল, তা রাখা হবে। তবে এবছর নতুন ২৩টি স্টলকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নতুনদেরকে সুযোগ করে দিতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বছরের বইমেলায় বিন্যাসে কোনো পরিবর্তন রাখছে না বাংলা একাডেমি। গতবছর যে বিন্যাসে বইমেলা আয়োজিত হয়েছে, এবছরও একই বিন্যাস রাখা হয়েছে। প্যাভিলিয়নের ও স্টলের জন্য আলাদা সারি রাখা হয়েছে। বাংলা একাডেমি জানায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে গতবারের মেলার বিন্যাস সর্বমহলে প্রশংসিত হওয়ার এবারও তা অপরিবর্তিত রেখে কাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। গত ১১জানুয়ারি থেকে এ কার্যক্রম চলছে। তবে টিএসসি গেট দিয়ে বাম পাশের যে অংশটি তা সরিয়ে মন্দিরের ঝরনা চত্বরে স্থানান্তর করা হয়েছে। মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, গতবার কয়েকটি প্রকাশনীর অভিযোগ ছিল, টিএসসি গেট দিয়ে প্রবেশ করলে বাম পাশে প্রকাশনীগুলো ভুক্তভোগী হয়। ফলে তাদেরকে স্থানান্তর করে মন্দিরের ঝরনা চত্বরে ফাঁকা জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া, লিটল ম্যাগকে মুক্তমঞ্চের পাশে ফাঁকা জায়গায় স্থান দেওয়া হয়েছে, যেখানে আগে ফায়ার সার্ভিস ছিল। তিনি বলেন, খাবারের দোকান নিয়ে প্রতিবার অনেক গন্ডগোল হয়। অনেকেই খাবারের দোকান মেলার সঙ্গে একত্র হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে আমরা ২২ তারিখ একটি সিদ্ধান্তে আসব। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি মেলায় খাবারের দোকান প্রয়োজন আছে। এখানে মা-বোন, বাচ্চা-বৃদ্ধ অনেকেই আসেন, যাদের কাছাকাছি কোথাও খাওয়ার জায়গা নেই। আমরা দূরবর্তী স্থান ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের কাছে এটির প্রস্তাব করেছি। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। বাংলা একাডেমির তথ্যমতে, মেলার প্রবেশ ও বাহির গেট বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন, মন্দির কমিটি ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী অংশে পুরো মেলার নিরাপত্তার স্বার্থে টিনের নিরাপত্তা বেষ্টনীর কাজ প্রায় ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, মেলায় সুষ্ঠুভাবে আলোকে বিন্যাস, নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা, আর্চওয়ে, বাংলা একাডেমি স্টল, বাংলা একাডেমি প্যাভিলিয়ন, তথ্যকেন্দ্র, মোড়ক উন্মোচন ও ‘লেখক বলছি’ মঞ্চের ইন্টেরিয়র কাজ সম্পন্নের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। ২৫ জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের একটি সভা হবে। ৩০ জানুয়ারি সকালে মেলার সার্বিক বিষয় নিয়ে আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হবে। পহেলা ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন করবেন। সার্বিক বিষয়ে মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের মেলা প্রস্তুতির কার্যক্রম ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর আবারও বাংলা একাডেমির একক নেতৃত্বে বইমেলা আয়োজিত হচ্ছে। এর আগে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দিলেও ঠিকঠাক তথ্য পাওয়া যেত না। পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে এ বছর কথা বলার পর তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাই আমরা আবারও এককভাবে শুরু করছি। তিনি বলেন, অনেকেই আপত্তি করবে, তবে কি বইমেলা বাণিজ্যিকীকরণ হয়ে যাচ্ছে? আমাদের আইনে কোনো সূত্র থেকে টাকা গ্রহণে বাধা নেই। তবে মেলা শেষে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব অডিট করে বুঝিয়ে দিতে হবে। উল্লেখ্য, গতবছরের বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া ৩৮টি প্যাভেলিয়ন ও লিটল ম্যাগ চত্বরে ১৫৩ টি স্টলকে স্থান পেয়েছিল।