নিজের প্রথম ওভারে রনি তালুকদারকে ফেরালেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ। এক বল পরই তার শিকার সাকিব আল হাসান। শেষ ওভারে পরপর দুই উইকেট নিয়ে জাগালেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। তা না পারলেও ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে রংপুর রাইডার্সকে অল্পে আটকাতে খালেদ রাখলেন বড় ভূমিকা। ছোট লক্ষ্য পেয়ে জয়ে মাঠ ছাড়ল ফরচুন বরিশাল। মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার রংপুরকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বরিশাল। প্রতিপক্ষের ১৩৪ রান ৫ বল হাতে রেখে টপকে গেছে তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন দল। বরিশালের লক্ষ্য নাগালে রাখার কারিগর খালেদ। সাম্প্রতিক সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ সময় কাটানো এই পেসার ৩১ রানে নেন ৪ উইকেট। এই সংস্করণে এটিই তার প্রথম ৪ উইকেট। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার। গত আসরের সেরা তিন দলের প্রতিটিই এবারের যাত্রা শুরু করল পরাজয় দিয়ে। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী দিন এই তিক্ত স্বাদ পায় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও রানার্সআপ সিলেট স্ট্রাইকার্স। রান তাড়ায় বরিশালকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন তামিম। প্রায় চার মাস পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলতে নেমে প্রথম ওভারে আজমতউল্লাহ ওমারজাইয়ের বলে তিনটি চার মারেন অভিজ্ঞ ওপেনার। প্রথম বাউন্ডারি আসে ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে। পরের দুটি চমৎকার দুটি ড্রাইভে। অন্যপ্রান্তে ইব্রাহিম জাদরান পারেননি সাবলীল ব্যাটিং করতে। পঞ্চম ওভারে ফেরার আগে ১৬ বলে ১২ রান করেন আফগান ওপেনার। ১ উইকেটে ৫১ রান নিয়ে পাওয়ার প্লে শেষ করে বরিশাল। অষ্টম ওভারে মোহাম্মাদ নাবির বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন তামিম। পরের বল আবারও একই ধরনের শট খেলার চেষ্টায় স্টাম্পড হন বরিশাল অধিনায়ক। ৫ চার ও ১ ছক্কায় তিনি করেন ২৪ বলে ৩৫ রান। পরের ওভারে সৌম্য সরকার অল্পেই ফিরলে খানিক চাপে পড়ে বরিশাল। চতুর্থ উইকেটে তা সামাল দেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও মুশফিকুর রহিম। দলকে একশর কাছাকাছি রেখে ফেরেন ১৮ বলে ২০ রান করা মিরাজ। জয়ের জন্য ২২ রান বাকি থাকতে সাকিব আল হাসানের আর্মারে বোল্ড হন মুশফিক। ২ চারে ২৭ বলে ২৬ রান করেন তিনি। ওই ওভারে সাকিব দেন স্রফে ৩ রান। শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য বরিশালের প্রয়োজন ছিল ২১ রান। সেখান থেকে মাহমুদউল্লাহ ও শোয়েব মালিকের ব্যাটে সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বরিশাল। নাবির বলে বাউন্ডারি মেরে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১৩ হাজার রান পূর্ণ করেন মালিক। এই সংস্করণে এই কীর্তি আছে আর শুধু ক্রিস গেইলের। শেষ ওভারে দুই রানের সমীকরণে শেখ মেহেদি হাসানের প্রথম বলেই ছক্কা মেরে দেন মাহমুদউল্লাহ। ২ ছক্কায় ১১ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। বিশ্বকাপের পর প্রথমবার খেলতে নেমে আঁটসাঁট বোলিংয়ে ৪ ওভারে স্রফে ১৬ রান খরচায় ২ উইকেট নেন সাকিব। এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে রংপুরের শুরুটা হয় বাজে। মোহাম্মদ ইমরানের করা প্রথম ওভারের প্রথম বলে দারুণ ইনসুইং ইয়র্কারে বোল্ড হন ব্র্যান্ডন কিংস। পরের ওভারে খালেদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দেন রনি। ওই ওভারেই চমৎকার ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে সাকিবকে বোকা বানান খালেদ। স্রফে ১৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে রংপুর। তাদের বিপদ আরও বাড়ে পঞ্চম ওভারে ওমারজাইও আউট হলে। শামীম হোসেনকে নিয়ে চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। কিন্তু বড় হয়নি তাদের জুটি। দশম ওভারে শোয়েব মালিকের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে কট বিহাইন্ড হন ২ ছক্কায় ২৩ বলে ২৩ রান করা সোহান। একশর আগে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন নাবি এবং শামীমও। মিরাজের বলে সুইপ করার চেষ্টায় বোল্ড হন শামীম। ফেরার আগে দলের সর্বোচ্চ ৩৪ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। শেষ দিকে মেহেদির ১৯ বলে ২৯ রানের ক্যামিওর সৌজন্যে লড়াই করার পুঁজি পায় রংপুর। যদিও তা মোটেও যথেষ্ট হয়নি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৩৪/৯ (কিং ০, রনি ৫, সাকিব ২, সোহান ২৩, ওমারজাই ৬, শামিম ৩৪, নবি ১০, মেহেদি ২৯, মুরাদ ৭*, হাসান ০, সালমান ৮*; ইমরান ৪-০-৩২-১, খালেদ ৪-০-৩১-৪, ওয়েলালাগে ৪-০-১৭-১, রকিবুল ৪-০-৩১-০, মিরাজ ৩-০-১৩-২, মালিক ১-০-৯-১)
ফরচুন বরিশাল: ১৯.১ ওভারে ১৩৮/৫ (তামিম ৩৫, ইব্রাহিম ১২, মিরাজ ২০, সৌম্য ১, মুশফিক ২৬, মালিক ১৭*, মাহমুদউল্লাহ ১৯*; ওমারজাই ১-০-১২-০, সালমান ২-০-১৫-০, হাসান ৩-০-২৫-০, মেহেদি ২.১-০-২৪-০, সাকিব ৪-০-১৬-২, নবি ৩-০-২৫-১, মুরাদ ৪-০-১৭-২)
ফল: ফরচুন বরিশাল ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সৈয়দ খালেদ আহমেদ