তিন বছর পূর্বে স্বামী রহিম হাওলাদারের মৃত্যুর পরপর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন গৃহবধু নাজমা বেগম (৩৫)। পরিবারের অস্বচ্ছলতার কারণে সুচিকিৎসা করাতে পারেনি তার বৃদ্ধ বাবা। তবে স্থানীয় বিভিন্ন কবিরাজের কাছে চিকিৎসা করিয়েছেন, তাতে কোন লাভ হয়নি। ফলে গত দুইবছর যাবত শিকল বন্দি হয়েই মানববেতর জীবনযাপন করে আসছেন তিন মেয়ে ও এক ছেলের জননী নাজমা বেগম। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের সালতা গ্রামের। মানসিক ভারসাম্যহীন নাজমা সালতা গ্রামের বৃদ্ধ উমর আলী হাওলাদারের মেয়ে। রোববার সকালে সরেজমিনে নাজমার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট্ট একটি টিনের চালাঘরের খুঁটির সাথে শিকল দিয়ে এক পা বেঁধে রাখা হয়েছে নাজমাকে। ঝড়-বৃষ্টি, শীত-গ্রীস্মে ওই ঘরের মেঝেতে খরের ওপর শুয়ে কিংবা ঘরের দরজার সামনে বসে সারাদিন শিকলে বন্দি হয়েই দিন কাটে নাজমা বেগমের। নাজমার বৃদ্ধ মা মনোয়ারা বেগম জানান, নাজমার স্বামী রহিম হাওলাদারের মৃত্যুর পর তার মেয়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। সে যেন অন্যত্র চলে যেতে না পারে, সেজন্য গত দুইবছর যাবত নাজমাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, যেখানে আমাদের তিন বেলা খাবার জুটেনা, সেখানে মেয়েকে সুচিকিৎসা করাই কিভাবে? তাই বাধ্য হয়েই মেয়েকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি। স্থানীয় বাসিন্দা রিফাত সরদার ও মাসুম ফকির বলেন, পরিবারটি এতটাই অস্বচ্ছল যে মানসিক ভারসাম্যহীন নাজমা বেগমকে সুচিকিৎসা করানোর মত সক্ষমতা তাদের নেই। এছাড়াও পরিবারের একজন মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনিও ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক। তার ওপরই সাত সদস্যের ভরনপোষনের দায়িত্ব। রাষ্ট্রীয় ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতায় সুচিকিৎসা পেয়ে শিকল বন্দি নাজমা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে বলেও তারা উল্লেখ করেন। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু আব্দুল্লাহ খান জানান, বিষয়টি সবেমাত্র গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।