চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মাঠে আবাদি জমির মাটি নির্বিঘ্নে বিক্রির যত্রতত্র মহোৎসব চলছে। প্রশাসনের নেই কোন কার্যকরী পদক্ষেপ। এতে আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে কৃষিজমি। দিনদিন কৃষি জমির পরিমান হ্রাস পাওয়ায় কমছে উৎপাদনও। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাটি কাঁটার সাথে জড়িতরা প্রশাসনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করেন বলে জানা যায়। এছাড়াও এসব মাটি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই কৃষকরা লিখিত অভিযোগ করতে সাহস পাঁচ্ছেন না। মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও মিলছে না কোনো প্রতিকার। ফসলি জমিতে এক্সকাভেটর (ভেকু) বসিয়ে কাটা হচ্ছে মাটি। এসব মাটি ডাম্প ট্রাক দিয়ে ক্রেতার কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে কৃষিজমির পাশাপাশি গ্রামীণ এবং পাকা রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগি জানান, স্থানীয় তহসিল অফিস ও থেকে উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এসব হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করার সাাহস পাঁচ্ছেনা। সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের টাকার লোভ দেখিয়ে ফসলি জমিতে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন বিভিন্ন বাড়ি-ভিটে,পুকুর ভরাটে এবং ইটভাটায়। নির্বিচারে চলছে মাটি কাটা। এভাবে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে যেমন ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে এলাকার ঘরবাড়ি। তেমনি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। এ ছাড়া মাটিবোঝাই ভারী ডাম্প ট্রাক চলার কারণে ধুলোবালিতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট। স্থানীয় কৃষকরা বলেন,দীর্ঘদিন ধরেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার তিন ফসলি কৃষিজমিতে খননযন্ত্র (ভেকু) বসিয়ে মাটি কেটে স্থানীয় বসতবাড়ি ভরাটের কাজ করে আসছেন। অন্যের ফসলি জমির ওপর দিয়ে ট্রাক চলাচলের জন্য বানানো হয়েছে রাস্তা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বাধা দিলে নানা হুমকি-ধমকি ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। হাজীগঞ্জ উপজেলার ৪ নং কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের প্যারাপুর গ্রামের কৃষক আবদুর রশিদ ও করিম মিয়া বলেন, আমার পাশের জমির মালিক মাটি বিক্রি করেছেন। এই মাটি নেওয়ার জন্য আমাদের ফসলি জমির উপর দিয়ে নেওয়া হচ্ছে ভেকু ও ডাম্প ট্রাক। বাধা দিলে মাটি ব্যবসায়ীরা বলেন,ফসল তো নষ্ট হয়েছে। এখন জমির মাটি বিক্রি করে দেন। ৫ নং সদর ইউনিয়নের মৈশাইদ গ্রামের কৃষক মো.আনোয়ার হোসেন বলেন,মাটিবোঝাই ভারী ট্রাক চলাচলে রাস্তাটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে ট্রাক চলাচলে বাধা দেওয়ায় আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং জোর করেই রাস্তা নষ্ট করে ট্রাক চালানো হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ী শহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি কবরস্থানে মাটি দিচ্ছি। এক ফসলি জমি কিনে মাটি কাটছি। তিন ফসলি জমি কেউ বিক্রি করতে চাইলে আমি কিনি না। আমি জোর করে কারো জমিতে মাটি কাটি না। হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে অনুমোদন লাগে। এ ছাড়া ঐ ছোট সড়ক দিয়ে ডাম্প ট্রাক চলাচল করার নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। কৃষিজমি থেকে যারাই মাটি কাঁটার সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।