ভুয়া ডাক্তার, টেকনোলজিস্ট, মানহীন মেশিন সংবলিত ল্যাব, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই প্যাথলজির ভুয়া রিপোর্ট প্রদানসহ দালাল নির্ভর ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্লিনিক-হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি বরিশালে। এসব প্রতিষ্ঠানের খপ্পরে পরে গ্রামাঞ্চল ও শহরতলী থেকে আসা রোগীরা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। সূত্রমতে, বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় ১২৯টি ও জেলার দশ উপজেলায় ১৩৩টি বৈধ ক্লিনিক-হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর বাইরে শত শত বেসরকারি অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বাণিজ্য করে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যে অভিযান চললেও স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিভিল সার্জনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে রমরমা ব্যবসা চলছে। সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর সদর রোড, গির্জা মহল্লা মোড়, আগরপুর রোড, কাকলির মোড়, বাটারগলি, বিবির পুকুর পাড়, অশ্বিনী কুমার হল চত্বর, শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের সামনে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য। তাদের মধ্যে নির্দিষ্ট পার্সেন্টেজের বিনিময়ে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার তুমুল প্রতিযোগিতা চলছে। দালালরা ওৎপেতে থাকে নগরীর রূপাতলী, নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল ও লঞ্চ টার্মিনালে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা রোগীদের জন্য। দালালরা তাদের পছন্দের ডাক্তার ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। সূত্রমতে, নগরীতে সব থেকে বেশি ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে। এখানে ৩০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিক রয়েছে। প্রতিটিতেই জড়িত রয়েছেন হাসপাতালের কোনো না কোনো চিকিৎসক কিংবা কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ছাড়া কিছু চিকিৎসক প্রতি রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর পাচ্ছেন সর্বনিন্ম ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কমিশন। এসব চিকিৎসকের কাছ থেকে রোগী নিজেদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসতে রয়েছেন মার্কেটিং কর্মী নামধারী দালাল। ঠিক একই অবস্থা বরিশাল সদর হাসপাতালের সামনেও। এ হাসপাতালের সীমানা থেকে প্রায় ৫০ গজের মধ্যেই রয়েছে একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিক। এসব প্রতিষ্ঠানের নেপথ্যেও রয়েছেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক এবং কর্মচারী। অভিযোগ রয়েছে, শুধু ডাক্তার এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীই নন; একের পর এক গড়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা। তাদের নেতৃত্বেই এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত রোগীদের জিম্মি করে গলাকাটা হচ্ছে। ভুক্তভোগী রোগীর স্বজন ঝালকাঠির সদর উপজেলার বিনয়কাঠি এলাকার বাসিন্দা হাকিম হাওলাদার বলেন, মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য নগরীর বাটার গলিতে এসে দালালের খপ্পরে পরেছি। প্রথমে দালালরা ভুল বুঝিয়ে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে ভুয়া ডাক্তার দেখানো শেষে প্রেসক্রিপশনের প্যাডে আটটি পরীক্ষা করতে বলে ৬ হাজার ৩০০ টাকা ও ডাক্তার ফি আরও ৮০০ টাকা নিয়েছে। কিন্তু তার মায়ের রোগ ভালো হয়নি। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল জেলার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, নগরীতে কত ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে তার সংখ্যা জানার জন্য আমরা সিভিল সার্জনের কাছে আবেদন করেছিলাম। তবে সিভিল সার্জন থেকে আমাদের বলা হয় স্বাস্থ্য বিভাগে যেতে। সেখানে আবেদন করার পর তারা বলছে, হালনাগদ নেই। তারা মাঠেনেমে এর একটি তালিকা প্রস্তুত করবেন। কিন্তু আজও আমরা তালিকা পাইনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার পর সারাদেশে অভিযান হলেও বরিশালে কোনো অভিযান পরিচালিত হয়নি। এতে করে সচেতন মানুষ মনে করছেন কোনো সমঝোতার কারণে এমনটা হয়েছে। এ ছাড়া সির্ভিল সার্জনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন সুফল মিলছেনা। বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডাঃ শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল জানান, অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে প্রায়ই আমরা অভিযান পরিচালনা করি। বর্তমানেও অভিযান চলমান রয়েছে।