দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় কর্মসৃজন প্রকল্পের এক হাজার ৭৬১ জন শ্রমিক কাজ শেষ করার ২০ দিনেও কাজের মজুরির টাকা পাননি। মজুরির টাকা না পাওয়ায় শ্রমিকেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বিধি অনুযায়ী, তাদের প্রতি সপ্তাহে মজুরির টাকা দেওয়ার কথা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবারে ফুলবাড়ী উপজেলায় কর্মসৃজন প্রকল্পের অধিনে মাটি কাটার কাজ করেছেন এক হাজার ৭৬১ জন। বিধি অনুযায়ী দৈনিক কাজের বিনিময়ে সাধারণ শ্রমিক ৪০০ টাকা এবং দলনেতারা (সর্দার) পাবেন ৪৫০ টাকা। কাজ শুরু হয় গত বছরের ১১ নভেম্বর শেষ হয় ৮ জানুয়ারি। উপজেলা ৭ ইউনিয়নে ৩৪ টি প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রমিকেরা রাস্তা, কবরস্থান, ঈদগাহ মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে মাটি ভরাটের কাজ করেছেন। উপজেলার বেতদীঘি ইউনিয়নের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের দলনেতা (সর্দার) ফরিদাবাদ গ্রামের ধনিরাম বর্মন বলেন, আগে সাত দিন পর পর টাকা দেওয়া হচ্ছিল। এবার ৪০ দিন মাটি কাটার কাজ শেষ করেও কোনো টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। টাকা না পাওয়ায় খুব বিপদে আছেন, পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। উপজেলার কাজিহাল ইউনিয়নের কর্মসৃজন প্রকল্পের নারী শ্রমিক আঁখিঘটনা গ্রামের নূরজাহান বেগম বলেন, তার আয় দিয়েই পরিবারের চারজনের সংসার চলে। কাজ করলে চুলায় হাঁড়ি ওঠে, না হলে থাকতে হয় অনাহারে। দিনে কাজ করেন, দিনে নগদ টাকা নিয়ে খরচ করে বাড়ীতে গিয়ে স্বামী-ছেলে-মেয়ে নিয়ে খান। কিন্তু ৪০ দিনের মাটি কাটার কাজ করে পড়েছেন খুব যন্ত্রণায়। সরকারি কাজ করে কিসের অভাব পালাবে, আরো বেশি করে অভাব চেপে ধরেছে। উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের আরেক শ্রমিক পূর্ব নারায়ণপুর গ্রামের হাসিবুল হক বলেন, মাটি কাটা শেষ হবার ১৪ দিন পার হয়েছে, তাও এক টাকাও মজুরি দেয় না। আর কত হাতপেতে চলবেন। ধার-দেনায় পরে গেছেন। মজুরির টাকাটা দিলে ভালো হতো। উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম নারায়ণপুর গ্রামের আরেক নারী শ্রমিক হাসিনা বেওয়া বলেন, কত কষ্ট করে মাটি কাটেন টাকার আশায়। তারা দিন আনেন, দিন খাওয়ার মানুষ। ৪০ দিনের কাজ করেও টাকা দিচ্ছে না। সংসারটা চালানো ধুমশুম হয়ে গেছে। উপজেলার কাজিহান ইউনিয়নের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের দলনেতা (সর্দার) আঁখি ঘটনা গ্রামের আকবর আলী বলেন, প্রকল্পের শ্রমিকরা প্রায়ই ফোন করে জানতে চান কোনদিন টাকা দেবে। কিন্তু কিছু করতে পারছি না। মেম্বার-চেয়ারম্যানও বলতে পারেন না কবে টাকা দেবে। সরকারের কি এত অভাব পড়েছে যে আমাদের দিন আনি দিন খাওয়ার মানুষের টাকা আটকে দিচ্ছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. শফিউল ইসলাম বলেন, কর্মসৃজন প্রকল্পের এক হাজার ৭৬১ জন শ্রমিকের ২০ কর্মদিবসের মজুরি বাবদ এক কোটি ৪০ লাখ ৫৬ হাজার টাকার বিল গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর তারিখে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অধিদপ্তর থেকে অর্থ ছাড় দিলে শ্রমিকদের মধ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই বিতরণ করে দেওয়া হবে।