দিনাজপুরের খানসামা সেটেলমেন্ট অফিসে চরম দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ফলে ভূমি মালিকরা চরম হয়রাণির শিকার হচ্ছেন। ওই অফিসে অতিরিক্ত অর্থ ছাড়া সেবা মিলে না, ১০০ টাকার পরচা ৬০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। এতে করে চরম ক্ষুদ্ধ ওই উপজেলার ভূক্তভোগী ভূমি মালিকরা। উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের সেবা নিয়ে নাখোশ স্থানীয় লোকেরাও। সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ এ অফিসে ঘুষ ছাড়া কোনো সেবাই মিলে না। এ অনিয়মের সাথে অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। এছাড়াও রয়েছে দালালদের দৌরাত্ন্য।
সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগে জানা গেছে, জমির রেকর্ড, পরচা, মৌজার নকশাসহ জমি সংক্রান্ত সব সেবার ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত টাকা গুণতে হয়। এর যোগসূত্র হচ্ছে দালাল। খানসামা উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসের পেশকার লেবু মিয়া ও অফিস সহায়ক সুবাস চন্দ্র রায় দালালদের সাথে মিলে বিভিন্ন অনিয়ম করছেন। জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী, ভূমি মালিকদের নিকট থেকে নির্দিষ্ট অংকের ফি নিয়ে পরচার নকল, খতিয়ান ও নকশা দেয়ার কথা সেটেলমেন্ট অফিসগুলোর।
এছাড়াও ফি ছাড়াই বিভিন্ন সেবা দেয়ার কথা। কিন্তু বাড়তি টাকা ছাড়া সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। খানসামা উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, সিটিজেন চার্টারের সাথে এখানে সেবা প্রদানে কোনো মিল নেই। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ সংক্রান্ত সেবায় সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে। ঘুষ ছাড়া মিলছে না জমির পরচা ও মৌজার নকশাও। বাড়তি টাকা ছাড়া সেবা নিতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়। তবে কাজ না হওয়ার ভয়ে অনেকেই এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না। ওই অফিসের সামনে অবস্থানকালে চোখে পড়ে দালালদের আনাগোনাও। দ্রুত সময়ে কাজ শেষ করে দেয়ার কথা বলে সেবা নিতে আসা লোকজনদের নিকট থেকে বিভিন্নভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা।
নাম প্রকাশে কয়েকজন ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাঠ পরচার জন্য ২০ টাকার কোর্ট ফি এবং অনুলিপি বাবদ ডিসিআরের মাধ্যমে ১০০ টাকা আদায় করে সেবা দেয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। এখানে পরচা প্রতি ৬০০-৭০০ টাকা নেয়ার সত্যতা মিলেছে।
উপজেলার আঙ্গারপাড়া মৌজার জমির পরচা নিতে আসা আসাদুজ্জামান জানান, পরচা নিতে গেলে কর্মচারীরা ৫০০ টাকা ছাড়া দেবেন না বলে জানান। তারপরেও সেটি কয়েকদিন ঘুরেও পাইনি। আমাকে এজন্য সামনের সপ্তাহে আসতে বলেছেন।
সেবা নিতে আসা উপজেলার হোসেনপুর মৌজার সুধীর সেন বলেন, এই অফিসের মাটিতে পা দিলেই টাকা ছাড়া কেউ আসতে পারেন না। সর্বোচ্চ দূর্নীতির আঘড়ায় পরিণত হয়েছে সেটেলমেন্ট অফিস। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, ১০০ টাকার পরচা ৫০০ টাকা ছাড়া দেছেই না বাহে। সেটা নিবার জন্যও কয়েকদিন ধরে ঘুরতে হচ্ছে অফিসে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক রিকশাভ্যান চালক বলেন, সারাদিন অফিসে ঘুরেও কাজ না হওয়ায় ফেরত যেতে হচ্ছে। রিকশাভ্যান চালালেও তো কিছু টাকা উপার্জন করতে পারতাম। এখানে এত ভোগান্তি!
উপজেলার আঙ্গারপাড়া মৌজার মিঠুন অধিকারী বলেন, আমাদের জমির মাঠ পরচায় কয়েকটা দাগ নম্বর দেখতে চাইছি। এজন্য আমার নিকট ৪ হাজার টাকা চেয়েছে। কী আর বলি?
অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কার্যালয়ের পেশকার লেবু মিয়া ও অফিস সহায়ক সুবাস চন্দ্র রায় তাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, সরকার নির্ধারিত ফি'র চেয়ে কারো নিকট থেকে অতিরিক্ত কোনো টাকা তারা নেন না।
সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মির্জা জিকরুল হক বেগ মোবাইল ফোনে বলেন, সরকার নির্ধারিত ফি'র বেশি টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কয়েকটি উপজেলার দায়িত্বে থাকায় ওই অফিসে আমি নিয়মিত যেতে পারি না। তাই এ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। তবে এক ভুক্তভোগীর নিকট থেকে এ বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দিনাজপুর জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মোঃ শামছুল আজম বলেন, সেবা দিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে কাউকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। বিষয়টি তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।