রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী চতরা ইউপির সংরক্ষিত মহিলা আসনের ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে কৌশলে সাধারণ মানুষের নিকট থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ওই এলাকার সাধারণ মানুষরা তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে কস্টার্জিত অর্থ খুইয়ে এখন সুবিচার চাচ্ছেন প্রশাসনের নিকট। চলতি মাসের ১তারিখে” সস্তাব াজার”কার্ডে মুদিপণ্য ক্রয়ে এসে বর্ণিত তিন মহিলা ইউপি সদস্য’র টাকা হাতানোর কৌশলের চিত্র জন সম্মুখে প্রকাশ পায়। এতে হত ভম্ব হয়ে যায় ওই এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। উপজেলার ১৪ নং চতরা ইউনিয়নের ১,২, ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আসমা বেগম, ৪,৫,৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাজমা বেগম, ও ৭,৮,৯নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য নাজমুন্নাহার বেগমসহ ৩জন ইউপি সদস্য মিলে টিসিবি’র পণ্য’রঅনুরুপ"সস্তাবাজার"নামে একটি কার্ড তৈরি করে। কার্ড তৈরীর পর সেই কার্ড গোপনে অত্যন্ত সর্তকতার সাথে ২ থেকে ৩ মাস ধরে ওই ইউনিয়নের বদনাপাড়া, সোনাতলা, গোবিন্দপাড়া, চতরাবন্দর, গিলাবাড়ি, কাটাদুয়ারসহ ১৪ থেকে ১৫টি গ্রামের ২৮০জন মধ্যম, হতদরিদ্র ও নি¤œ আয়ের মানুষদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী মুদিপণ্য টিসিবি’র বিকল্প হিসেবে বিতরণের লোভ দেখিয়ে জন প্রতি ৫’শ থেকে ১২’শ টাকা হারে হাতিয়ে নেয় কার্ড তৈরী বাবদ। চলতি মাসের ১ ফেবুয়ারী বৃহস্পতিবার ”সস্তাবাজার” কার্ডধারীদের মুদিপণ্য সংগ্রহে আসমা বেগমের বাড়িতে আসতে বলা হয়। সেখানে উপস্থিত কার্ডধারীরা সকলে উপস্থিত হয়। ওই দিন কার্ডধারীদের ৭’শ টাকায় ফ্রেস কোম্পানীর ২(দুই)লিটার সয়াবিন তেল, সুর্য মার্কা২(দুই) কেজি ডিটারজেন পাউডার, রাহুল কোম্পানীর১(এক) কেজি ময়দা এবং খোলা বাজারের প্যাকেটকৃত ১ (এক) কেজি মসুর ডাল সংগ্রহ করতে বলা হয়। যার বাজার মূল্য ৬৬২ টাকা। এ সময় কার্ড ধারীরা প্রতিবাদ করে মালামাল গ্রহনে অস্বীকৃতি জানান। এতে বর্ণিত তিন মহিলা মেম্বারের টাকা হাতানোর কৌশল প্রকাশ হয়ে পড়ে। সেখানে উপস্থিত আসমা বেগম জানান,৪টি পণ্য’রমুল্য অনেক বেশি। ”সস্তাবাজারের”কার্ড থাকায় তা আপনাদের দিতে ৭’শ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে পুর্বের জমাকৃত টাকা বাদ দিয়ে নতুন করে ৭’শ টাকা দিয়ে কার্ডধারীদের মালামাল কিনতে বলা হয়। আসমা বেগমের এমন কথায়’মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে কার্ডধারীদের। যেই পণ্যগুলো ৭’শ টাকায় তাদের "সস্তাবাজারের"কার্ডে কিনতে হবে ওই একই পণ্য বাজারের যে কোনমুদি দোকান থেকে আরও কম দামে কেনা সম্ভব। এ কারণে বিতরণে জটিলতা ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরী হয়। ক্ষোভে, দু:খে ও প্রতিবাদে ফুঁসে উঠে কার্ডধারীরা। ধীরে ধীরে আশপাশে জানাজানি হতে থাকে। সেখানে উৎসুক জনতার ভীড় বাড়তে থাকে। অবস্থার বেগতিক দেখে বিতরণ বন্ধ করে সটকে পড়েন তিন মহিলা মেম্বার। ঘটনা প্রকাশের পর ভয়ে আবারও নতুন কৌশল অবলম্বন করেন ইউপি সদস্যগণ। কার্ডধারীদের কিছুদিনের মধ্যে আরও বেশিম ালামাল বিতরণের লোভ দেখিয়ে’সস্তাবাজার’নামের কার্ডগুলো নিজেদের হেফাজতে নিচ্ছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তিরা জানান। কাঁটাদুয়ার গ্রামের আবদুর রশিদ জানান মেম্বার নাজমুন্নাহার বেগমেরস্বামী মিলন’সস্তাবাজারের’কার্ড তৈরীর বিনিময়ে ১১’শ টাক ানিয়েছে। সোনাতালা গ্রামের জয়নাল আবেদীন জানান, ’সস্তাবাজার’কার্ড তৈরীতে মেম্বার নাজমা বেগমকে আমি ৭’শ টাকা দিয়েছি। কাটাদুয়ারের ফাইমা খাতুন জানান, মেম্বার নাজমুন্নাহার বেগমের স্বামী মিলনকে কার্ড তৈরীর বিনিময়ে ১১’শ টাকা দিয়েছি। চতরা আদিবাসি পাড়ার রোজিনা জানান,কার্ড তৈরীর বিনিময়ে মেম্বার আসমা বেগমকে ৬’শ টাকা দিয়েছি। এ প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য আসমা বেগম কার্ড তৈরীর বিনিময়ে টাকা গ্রহনের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, নিজ উদ্যোগে ডিলার মূল্যে মধ্যম শ্রেণীর মানুষদের মুদিপণ্য সরবরাহে এই উদ্যোগ আমি নিজে নিয়েছিলাম। ’সস্তাবাজার’নামে কার্ড বিতরণের কথা জানতে পেরে সহকর্মী অপরাপর ইউপি সদস্য নাজমা বেগম ও নাজমুন্নাহার বেগম আগ্রহ প্রকাশ করলে বিষয়টিতে তারাও সম্পৃক্ত হয়। অপর প্রশ্নের জবাবে বলেন, যাদের কার্ড তাদের নিকট রয়েছে, ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহীন এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। এ প্রসঙ্গে ইউপিসদস্য নাজমা বেগমঘটনারসত্যতা স্বীকারকরেবলেন,সহকর্মীআসমা বেগমেরনির্দেশনায়জনপ্রতি ৫’শ টাকা নিয়ে ২০/২২টি কার্ড বিতরণ করেছিলাম। আমি অলরেডি ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছি। এ প্রসঙ্গে নাজমুন্নাহার বেগম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান,আমার স্বামী মিলনকার্ড বিতরণ করেছে, তবে আমার জানা মতে কার্ড প্রতি ৫’শ টাকা নিয়ে মেম্বার আসমা আপাকে দিয়ে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে চতরা ইউপির চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহিন বলেন, কয়েক মাস আগে এনজিও’র উদ্দৃতি দিয়ে ইউপি সদস্য আসমা বেগম জানিয়েছিলেন টিসিবি’র মতো কম দামে মানুষ কে চাল, ডাল, তেলসহ মুদিপণ্য বিতরণ করা যাবে, সেখানে এনজিও ভুতুর্কি দিবে। তৎক্ষনাৎ ইউপি সদস্য আসমা বেগমের প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করে সর্তক করি। কিছুদিন পর ’সস্তাবাজার’নামে কার্ড বিতরণের খবর পেয়ে আবারও মৌখিক ভাবে সর্তক করি। সাধারণ মানুষ আমাকে কেউ কেউ জানালে নিরুৎসাহিত করি। ১ ফেব্রুয়ারী ঘটনার দিন ঢাকায় ছিলাম। টেলিফোনে একাধিক অভিযোগ পেয়ে জড়িত মেম্বারদের দ্রুত কার্ডধারীদের জমাকৃত টাকা ফেরতে নির্দেশনা প্রদান করি। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হাসান জানান, মৌখিকভাবে অভিযোগ পেলেও এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ পাই নাই। ভুক্তভোগীদের নিকট থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।