প্রতিদিনের মতো রাতে দিনমজুর ফজলু মন্ডল ও তার সহধর্মিণী পরিশ্রান্ত শরীরে নিজ ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখেন আগুনের লেলিহান শিখায় দাউ দাউ করে জ¦লছে তার পাশের ঘর। কোনো রকমে প্রান নিয়ে দু’জনে ঘর থেকে বের হয়ে পাড়া প্রতিবেশির সহায়তায় ঘণ্টা খানেক প্রচেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হন। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে লাগা আগুনে ততক্ষণে পুড়ে সব শেষ। অভাব অনটনের সংসারে মাটি ও টিনের তৈরি দুই ঘরে থাকা সংসারের খুঁটিনাটি জিনিসপত্র সব কিছুই পুড়ে গেছে। আগের দিন কেনা এক বস্তা চালও পুড়েছে আগুনে। দু’জনের পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই রক্ষা করতে পারেননি তারা। এমনই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের খালকুলা গ্রামের আনারুল মন্ডলের ছেলে ফজলু মন্ডলের বসত বাড়িতে বুধবার রাদে এ ঘটনা ঘটে।জানা যায়, ৩ মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার কোনো রকমে চলে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় শুধু স্বামী-স্ত্রী থাকেন বাড়িটিতে। বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে বাড়িতে আগুন লেগেছে বলে সকলে ধারণা করছেন। শীতের এসময়ে থাকা খাওয়ার কষ্টের কথা চিন্তা করে ফজলু মন্ডল স্ত্রীকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর নিজে পাশের ছোট চটে মোড়ানো খুপরি একটা রান্না ঘরে কনকনে এই শীতে কোনোরকমে রাত কাটাচ্ছেন। পাড়া প্রতিবেশির দেওয়া খাবারে মেটাচ্ছেন পেটের ক্ষুধা। অগ্নিকান্ডের এই ঘটনার ৬ দিন পার হলেও নতুন করে ঘর নির্মাণের অর্থ না থাকায় পোড়া ঘর বাড়ি ওই অবস্থায় পড়ে রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা সমাজের সামর্থ্যবান কেউই অবস্থায় ফজলুর পাশে এসে দাড়ায়নি। ইতিকা মজুমদার বলেন, বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটারের বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে শুনি, ভেদুর বাড়ি আগুনে পুড়ছে। তড়িঘড়ি করে উঠে সবাই মিলে আগুন নেভাতে নেভাতে সব শেষ। ফজলু ভাই খুব গরিব। সমাজের বিত্তবান মানুষের উচিত অসহায় এই মানুষের পাশে দাঁড়ানো। সরেজমিনে অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্থ ফজলু মন্ডলের বাড়ি যেয়ে দেখা যায়, তিনি রান্না ঘরে একটি খাটের ওপর শুয়ে আছেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আগুনে আমার ঘরবাড়ির সঙ্গে সঙ্গে সংসারটাও পুড়ে গেছে। নতুন করে ঘর নির্মাণ করার সামর্থও আমার নেই। আমি কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধা পাই না। এই ঘটনার দিন শুধুমাত্র উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী আমাকে ৩ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। ওই টাকা দিয়েই খাট,লেপ ও একটি লুঙ্গি কিনেছি। আর কোনো সাহায্য সহযোগিতা কারও থেকে পাইনি। ঘর নির্মাণে আমি সকলের সহযোগিতা চাই। কোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, অগ্নিকান্ডের ঘটনা শুনে আমি গিয়েছিলাম তার বাড়িতে। আমি ব্যক্তিগত ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি তাকে। অসহায় এই মানুষটির পাশে দাঁড়াতে সমাজের সামর্থবানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।