নওগাঁর মহাদেবপুরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় প্রায় তিন যুগ আগে স্থাপিত গভীর নলকূপের সেঁচ কমান্ডিং এলাকায় অবৈধভাবে বিদ্যুৎচালিত অগভীর নলকূপ এসটিডব্লিউ স্থাপনের অভিযোগ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি ওই অবৈধ অগভীর নলকূপের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও তিন দিন পরই পূণ:সংযোগ দেয়। এনিয়ে গভীর নলকূপের সেঁচ এলাকার চাষিদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অবৈধ অগভীর নলকূপ এসটিডব্লিউ মালিকের খুঁটির জোর কোথায় তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উপজেলার চাঁন্দাশ ইউনিয়নের পন্ডিতপুর গ্রামের অফেল বর্ম্মণের ছেলে শ্রী কর্ণেক বর্ম্মণ অভিযোগ করেন যে, পন্ডিতপুর মৌজায় ১৯৯০ সালে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিএমডিএ বিস্তর সরকারি টাকা ভর্তুকি দিয়ে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করে। গত তিন যুগ থেকে এই গভীর নলকূপের আওতায় তিনশ একর জমিতে সেঁচ দিয়ে আসছেন। উপকারভোগী কৃষকদের নিয়ে সমিতি গঠন করে স্বল্প ব্যয়ে সেঁচ দেয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি একই মৌজায় ওই গ্রামের পরেশ চন্দ্র বর্ম্মণের স্ত্রী কামনা রাণী একটি বিদ্যুৎচালিত অগভীর নলকূপ এসটিডব্লিউ স্থাপন করে গভীর নলকূপের আওতাভূক্ত জমিতে অবৈধভাবে সেঁচ দিচ্ছেন। অগভীর নলকূপের আশেপাশের চাষিদের এখান থেকে পানি নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে চাষিদের সেঁচ বাবদ গভীর নলকূপের চেয়ে বেশি টাকা দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া গভীর নলকূপের সেঁচের আওতা কমে যাওয়ায় গভীর নলকূপ পরিচালনাকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গভীর নলকূপ স্থাপন ও পাকা ড্রেন তৈরি করলেও অবৈধ অগভীর নলকূপ থেকে একই এলাকায় ফিতা পাইপ ও কাঁচা ড্রেন খনন করে সেঁচ দেয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় হচ্ছে। এভাবে বেশিদিন চললে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গিয়ে এলাকা মরুকরণের দিকে যাবে। তিনি অভিযোগ করেন যে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কামনা রাণীর নামে পন্ডিতপুর মৌজার ৩১৫ দাগে বিদ্যুৎচালিত অগভীর নলকূপ এসটিডব্লিউ স্থাপনের অনুমোদন দেয়। এখান থেকে গভীর নলকূপের দূরত্ব মাত্র ৭০০ ফুট। অথচ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত ক্ষুদ্রসেঁচ নীতিমালা ২০১৪ এর ধারা ৫.৩.১ (ঙ) ২ অনুযায়ী একটি গভীর নলকূপ থেকে অগভীর নলকূপের দূরত্ব কমপক্ষে ১৭০০ ফুট হতে হবে। এ ছাড়া বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিএমডিএ ৩১৫ দাগে অগভীর নলকূপটি স্থাপনের অনুমোদন দিলেও এর বোরিং করা হয় এর থেকে বেশ কিছু দূরে ৩১৯ দাগে। অভিযোগ করা হয়েছে যে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়মানুযায়ী কোন বিদ্যুৎ খুঁটি থেকে ১৩০ ফুটের বেশি দূরত্বে সংযোগ দেয়া যায়না। ৩১৫ নং দাগে বোরিং করা হলে তা ২০০ ফুটের বেশি দূরত্বে হতো। তাই ৩১৯ দাগে এটি খনন করা হয়। বিএমডিএ এর নিয়মানুযায়ী অনুমোদিত স্থান স্থানান্তরের কোন বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই অন্য দাগে খনন করা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারাও অবৈধভাবে ৩১৫ দাগের পরিবর্তে ৩১৯ দাগে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়। শ্রী কর্ণেক বর্ম্মণ গত ১৪ জানুয়ারি এ ব্যাপারে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কতৃপক্ষ মহাদেবপুর জোনের সহকারি প্রকৌশলী ইমাদাদুল হক ১৬ জানুয়ারি ওই অবৈধ অগভীর নলকূপের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ মহাদেবপুর জোনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বরাবর পত্র দিলে সে অবৈধ অগভীর নলকূপের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। বিএমডিএ এর সহকারি প্রকৌশলী তার পত্রে উল্লেখ করেন যে, ১৯৯০ সালে স্থাপিত গভীর নলকূপ থেকে মাত্র ১০৫০ ফুট দূরে ওই অগভীর নলকূপটি স্থাপন করা হয়েছে যা সমন্বিত ক্ষুদ্রসেঁচ নীতিমালা ২০১৯ এর পরিপন্থি। ওই অগভীর নলকূপের কোন বৈধ কাগজপত্র নাই ও সঠিক দাগ নম্বরে স্থাপন করা হয়নি। বর্তমান দাগ ও খতিয়ান নং সঠিক নয়। বিধিবহির্ভূতভাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া একই কমান্ডিং এরিয়ায় অযাচিতভাবে দুইটি সেঁচযন্ত্র স্থাপন করার কোন প্রয়োজন নাই। এতে পানি ব্যবহার নিয়ে কৃষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও অসন্তোষ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। বিধিবহির্ভূতভাবে অন্য দাগে স্থাপন, সেঁচ নালা স্থাপন ইত্যাদি কর্মকা- সেঁচ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অনিয়ম। সার্ভিস ড্রপ তার টেনে অনুনমোদিতভাবে এসটিডব্লিউ স্থাপন ভূগর্ভস্থ পানি নীতিমালার পরিপন্থি। নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ওই সংযোগটি সেসময় বিচ্ছিন্ন করলেও মাত্র তিন দিন পর তাতে পূণ:সংযোগ দেয়। বিষয়টি জানতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ বিএমডিএ এর মহাদেবপুর অফিসে গিয়ে জানা যায় সহকারি প্রকৌশলী ছুটিতে আছেন। তার দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি প্রকৌশলী এবাদুল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, গতবছরের নতুন সার্কুলার অনুযায়ী একটি গভীর নলকূপ থেকে এসটিডব্লিউ এর দূরত্ব হবে কমপক্ষে ১৫৫০ ফুট হতে হবে। পন্ডিতপুরের এসটিডব্লিউটি এর চেয়ে কম দূরত্বে রয়েছে। বিষয়টি সংশোধন করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। এ ব্যাপারে মোবাইলফোনে অভিযুক্ত কামনা রাণীর স্বামী পরেশ চন্দ্র বর্ম্মণের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। জানতে চাইলে, নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ মহাদেবপুর জোনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রবিউল আলম ৩১৯ দাগে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, কাগজে কলমে ৩১৫ দাগ থাকলে তার কর্মীরা সে দাগেই বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। কিন্তু অগভীর নলকূপটি যে ৩১৯ দাগেই খনন করা হয়েছে তা তিনি মানতে নারাজ। উপজেলা সেঁচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান সোহাগ জানান, যে সব জায়গায় অনিয়ম হয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পন্ডিতপুরে গভীর নলকূপের কমান্ডিং এরিয়ার মধ্যে অবৈধভাবে অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়ে থাকলে সেটাও সংশোধন করা হবে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গত কয়েক বছর ধরে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অসংখ্য গভীর নলকূপের কমান্ডিং এরিয়ায় বিদ্যুৎচালিত অগভীর নলকূপ এসটিডব্লিউ স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। এনিয়ে এলাকার চাষিদের মধ্যে চরম বিরোধ চলে আসছে। এনিয়ে দলাদলী, মারামারি সংঘটিত হয়েছে। উদ্ভব হয়েছে অসংখ্য মামলা মোকদ্দমার। সচেতন মানুষ এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অবৈধ ও অপ্রয়োজনীয় সেঁচযন্ত্র বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।