রবি ও খরিপ ২ মওসুমেই বছরে ২ বার কৃষকরা ভুট্টার আবাদ করে থাকেন। চলতি রবি মওসুমে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলাসহ জেলার ৮টি উপজেলা ও মেট্রো এলাকায় ২১ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯২৮ মেট্রিকটন। রংপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন ভুট্টা চাষের ওই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, চলতি বছর চলমান রবি মওসুমে রংপুর কৃষি অধিদপ্তরের অন্তর্ভুক্ত জেলার ৮টি উপজেলা ও মেট্রো এলাকায় ২১ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি অতিরিক্ত ১০ হেক্টর জমিতে রবি ভুট্টা চাষ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষি বিভাগের প্রণোদনার আওতায় উন্নতমানের ভুট্টার বীজ সরবরাহ, প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণসহ মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারীদের সহযোগিতা ও কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকায় জেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানান, চলতি মওসুমে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় বরাবরের মতো এবছরও অধিক জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। গতবছর পীরগঞ্জ উপজেলায় ভুট্টার চাষ হয়েছিল ৬ হাজার ৮’শ হেক্টর। এ মওসুমে চাষ হয়েছে ৭ হাজার ২’শ হেক্টর জমিতে। এদিকে চলমান রবি মওসুমে মিঠাপুকুর উপজেলায় ৩ হাজার ৭’শ ৪০ হেক্টর, বদরগঞ্জ উপজেলায় ২ হাজার ৮’শ ২০ হেক্টর, গংগাচড়া উপজেলায় ২ হাজার ৪’শ হেক্টর, পীরগাছায় ২ হাজার ২’শ ৮০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১ হাজার ২’শ ৫০ হেক্টর, তারাগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ১’শ ৩০ হেক্টর, কাউনিয়া উপজেলায় ৮’শ ৭৫ হেক্টর ও মেট্রো এলাকায় ১’শ ৭৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়ে ১০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ বেশি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবছর রবি মওসুমে প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ বেশি হয়েছে। আবহাওয়া প্রতিকুল থাকলে জেলায় প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ১১ মেট্রিক টন হারে ভুট্টার ফলন উৎপাদন সম্ভব। গত বছর জেলার কৃষকেরা ভুট্টা চাষ করে কাঁচা ভুট্টা জমি থেকে ভালো মূল্যে বিক্রি করতে পেরেছেন। অনেকেই কাঁচা ভুট্টা শুকানোর পর বিক্রি করে আরো অতিরিক্ত লাভবান হয়েছে। গত বছর ভুট্টার ফলন ভালো হওয়ায় এবং কৃষকরা লাভবান হওয়ায় চলতি বছর জেলার কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠে। এবছর জেলার পতিত জমিসহ নদীর চর অঞ্চলে ভুট্টা চাষ বেশি হয়েছে। পীরগঞ্জ উপজেলা চরাঞ্চলের কৃষক ঘাষিপুরের মানিক উল্লা,কুয়েতপুরের আবুল কাশেম, বাবলু, আবদুল মতিন, হাফিজুর, কাটাদুয়ারের জাকির হোসেন ও সৈকত জানান, উপজেলার করতোয়া নদীর চরে পতিত জমি গুলোতে ভুট্টা চাষে সেচ এর প্রয়োজন কম হয়। চরাঞ্চলের কৃষকেরা কৃষি বিভাগের সাথে পরামর্শ করে এসব জমিতে অধিকহারে ভুট্টা চাষ করেছেন। দিনে দিনে চাষীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভুট্টা চাষে সফলতা এসেছে এবং ফলনও ভালোর সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি বিভাগের সরবরাহ করা উন্নত জাতের ভুট্টার বীজে ভুট্টা চাষ করেছেন তারা। ভুট্টার গাছে ফলন ভালো লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এছাড়াও পার্শ্ববতী গ্রামগুলোতে কৃষকেরা অনেকেই ভুট্টা চাষ করেছেন। গত বছরের মতো এবারও বাজার মূল্য ভালো পাওয়া যাবে এমন প্রত্যাশা তাদের। অধিক লাভের আশায় এবার উপজেলায় আগাম জাতের ভুট্টা চাষ বেশি হয়েছে। পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, কৃষিবান্ধব সরকারের কৃষি প্রণোদনা ও অত্র উপজেলায় স্থানীয় সাংসদ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পরামর্শ ও নির্দেশনায় এবং কৃষি বিভাগের সকল পর্যায়ের সহকর্মীদের প্রচেষ্টায় কৃষকরা বাণিজ্যিক ভাবে লাভবান ভুট্টা ফসল চাষে কৃষকরা উৎসাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ভুট্টা থেকে মাছ ও মুরগির খাদ্য উৎপাদন এবং গাছ জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় এটি লাভজনক। এ মওসুমে উপজেলার ১৮ হাজার ২’শ কৃষককে প্রণোদনা আওতায় ধান, গম, ভুট্টা, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ ও বিনামূল্যে সার সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯’শ ৫০জনকে ভ্ট্টুার বীজ ও বিনামুল্যে সার বিতরণ করা হয়েছে।