আজ ছেলেটা বাড়ি ফিরছে। একমাত্র ছেলে- রাহাত। প্রায় ছ’মাস পর আসছে সে। ঈদুল আযহা পরবর্তী দিন হলেও রাশেদুল হকের যেন আজই ঈদ। শুধু তার একার নয়, ফরিদা বেগমেরও। ছেলে যে বাড়ি ফিরছে! একমাত্র নয়নের মণি। রাহাত যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো, তখনও সব ঠিকঠাক ছিল। প্রায় প্রতি মাসেই বাড়ি আসতো। কিন্তু গোল বাঁধল সে চাকরি পাওয়ার পর। কিছুতেই আর কিছু হয় না। ছ’মাস-ন’মাসে একবার বাড়ি আসে; তাও এক-দু’দিনের জন্য। সন্তান মানেই জিনের এক্সটেনশন। টানটাই আলাদা। রাশেদুল দম্পতির জীবন যেন এই ছেলে।
প্রতিদিন ফজরের সময় ঘুম ভাঙলেও বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে হয় না রাশেদুল হকের। স্ত্রীর ধাক্কাধাক্কিতে নামাজ কাযা হওয়ার আগ মুহূর্তে তিনি বিছানা ত্যাগ করেন। কিন্তু আজ আর মুয়াজ্জিন তাঁর সাথে পেরে ওঠেনি। একাএকাই ঘুম ভেঙে গেছে। মাঝে মাঝে মানুষ যখন বুকের ভেতর উত্তেজনা চেপে রাতে নিদ্রা যায়, পরদিন যখনই বা যত দ্রুতই জেগে উঠুক না কেন, এমন একটা অনুভূতি হয়, যেন একদম পরিপূর্ণ ঘুম হয়েছে। ঘুম ভাঙ্গার পরও মানুষের খানিক তন্দ্রাভাব রয়ে যায়, দেহের ভেতর আলসেমি দৌড়ে বেড়ায়। রাশেদুল হকের এসবের ছিটেফোঁটাও নেই আজ। ছেলেটাকে একটু বেশিই হয়তো ভালোবাসেন। এ জীবনে মাত্র একবার রাহাতের গায়ে হাত তুলেছিলেন তিনি। তখন রাহাতের বয়স পাঁচ, কি ছয়। বাড়িতে ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা ফরিদা বেগমের ফরমায়েশ খাটতেন। রাহাতকে তিনি অত্যন্ত আহ্লাল করতেন, তবে রাগিয়ে দেওয়াই যেন প্রিয় কাজ ছিল তাঁর। রাহাতও ছোটবেলা থেকে বদরাগী, একগুঁয়ে স্বভাবের। অল্পতেই ক্ষেপে ওঠে। কোনো এক প্রভাতে বৃদ্ধা কিছু একটা টিপ্পনী কাটলে রাহাতের ব্রহ্মরন্ধ্রে যেন আগুন জ্বলে ওঠে। ঘুম ভেঙে তখন সবে সে দাঁত ব্রাশ করছিল। বৃদ্ধা যে তার অনেক বড় এবং কোনোক্রমেই তাঁর গায়ে হাত তোলা যাবে না, রাহাতের সে জ্ঞান ছিল। কিন্তু টিপ্পনীর সাজা হিসাবে কিছু একটা না করলেও শান্তি পাঁচ্ছিল না। রক্তে যেন আগুন ধরে গেছে। সোজা গিয়ে বৃদ্ধার গায়ে মুখের পেস্ট সমেত থুথু মেরে দেয়। প্রায় একই সময়েই রোদ্রজ্জ্বল প্রভাতে বিদ্যুৎ চমকাতে দেখল যেন রাহাত। ক্ষণকাল পরই নিজেকে বাড়ির উঠোনে পড়ে থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করল। মাথার ভেতর ঘিলু তখনো নড়ছে। সব পরিষ্কার হয়ে গেল, রাহাত যখন বাবাকে অগ্নিমূর্তিরূপে অতি সন্নিকটে দেখল। বয়জোষ্ঠ্যের গায়ে ধৃষ্টতাবশত থুথু দেওয়ার সাজা মাথায় প্রচণ্ড চপেটাঘাত। ও-ই শেষ। এরপর আর কখনো ছেলের গায়ে হাত তোলেননি তিনি। এমনকি ধমক পর্যন্ত দেননি কখনো। ছেলেটা তো তারই একটা অংশ। নিজের গায়ে কেউ কখনো আঘাত করে!
ফরিদা বেগম অবশ্য এদিক দিয়ে খানিক ব্যাতীক্রম। ছেলে তাঁর যক্ষের ধন হলেও ভুলত্রটির ক্ষেত্রে তিনি শক্ত অবস্থানে। তাঁর যুক্তি- বাবার প্রশ্রয়ের সাথে যদি মায়েরটাও মিশ্রিত হয়, তাহলে ছেলে বখে যেতে বেশিদিন লাগবে না। রাহাতকে একজন শুদ্ধ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতেই ভালোবাসা বুকে চেপে তিনি এমন ছদ্মবেশে। রাহাতের বয়স তখন দশ-এগারো হবে। এখনকার মতো সে সময় প্লাস্টিক কনটেইনারে ভোজ্যতেল পাওয়া যেত না। দোকান থেকে খোলা তেল কিনতে হত। রাহাতদের একটা বেগুনী রঙের কাঁচের বোতল ছিল তেল সংরক্ষণের। কোনো এক মেঘলা দিনে রাহাতকে ফরিদা বেগম ওই কাঁচের বোতল ধরিয়ে দিয়ে দোকানে পাঠালেন তেল কিনতে। রাহাতের তখন বাজে একটা অভ্যাস ছিল। যেখানেই যেত, দৌড়ে চলত। কতবার যে তাকে এভাবে দৌড়ে চলতে মানা করেছে বাবামা, কিন্তু কানে তোলেনি সে কিছুতেই। বোতলটা হাতে পাওয়া মাত্র দৌড় লাগাল রাহাত। টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিল। এরই মাঝে বিদ্যুৎ বেগে দোকান থেকে তেল কিনে বাড়ি ফিরল সে। নির্বিঘ্নে পুরো কাজ সম্পন্ন করতে পারলেও তীরে এসে তরী ডুবল। বাড়ির বারান্দায় পা রাখা মাত্র পিছলে গেল। বৃষ্টি জলে পাকা ফ্লোর পিচ্ছিল হয়ে ছিল। কোনোরকমে নিজের পড়ে যাওয়া সামলাতে পারলেও বোতলটা আর সামলানো গেল না। বোম ফাটার আওয়াজ হল যেন! মুহূর্তে তেল-জল আর ভাঙ্গা কাঁচ পরস্পরের সাথে সখ্য গড়ে মিলেমিশে একাকার হয়ে ছড়িয়ে পড়ল। অগ্নিমূর্তী ধারণ করলেন ফরিদা বেগম। সাজা ঘোষণা করলেন ছেলের। একশ’বার কানে ধরে উঠবস। বাঘের মতো ডোরাকাটা এক বেত নিয়ে দরজায় নিজে বসে গেলেন উঠবস গণনায়। সাজার শর্ত- একশ’বারের আগে কিছুতেই থামা যাবে না। থামলেই আরো অতিরিক্ত পাঁচবার উঠবস। যতবার থামবে ততগুলো পাঁচ যোগ হবে। রাহাত মায়ের চেয়ে বেশি ভয় পেত ডোরাকাটা বেতটাকে। শরীরের যেখানে পড়ত, চামড়া ফেটে যেত। দু’তিনদিনেও বেতের বাড়ির দাগ বা ব্যথা- কিছুই যেত না। বেতখানা রাহাতের বড়মামা এনেছিলেন তাকে পিটিয়ে মানুষ বানাতে। সৃষ্টিকর্তা যদি সত্যিই ঠিকঠাক মানুষের অভিসম্পাত আমলে নিতেন, তবে এতোদিনে বড়মামা স্বর্গবাসী হয়ে যেতেন। মানুষের মামা চকলেট-খেলনা, কত কিছুই না উপহার দেয়, আর রাহাতের মামা দিয়েছে শীতল-খুনে চেহারার ভয়ঙ্কর একখানা বেত! এটা কোনো উপহার হল! যতবার বেতের বাড়ি তার ওপর পড়েছে, ততবার হৃদয় উজাড় করে বড়মামাকে গালাগাল দিয়েছে সে। এ গালাগালের খবরও যদি মামা জানতেন, তবে সৃষ্টিকর্তার আর অভিসম্পাত আমলে নেয়ার প্রশ্ন থাকতো না; তিনি নিজেই আত্মহণন করতেন!
সময় কাটছে না বলে বিছানা ছেড়ে খানিক পায়চারি করে মুখহাত ধুয়ে অযু সেরে তসবীহ হাতে নিয়ে আবার বাড়ির উঠোনে পায়চারি শুরু করলেন রাশেদুল হক। মুয়াজ্জিন ব্যাটা নির্ঘাত ঘুম থেকে উঠতে পারেনি- মনে হল একবার তাঁর। সময় যে মাঝে মাঝে সত্যিই দাঁড়িয়ে যায়, আজ তার যথার্থ উদাহরণ পাওয়া গেল। বেশ কিছুক্ষণ পায়চারি করার পর অবশেষে ফজরের আযান পড়ল। আজানের ধ্বণি কানে প্রবেশ মাত্র মসজীদ অভিমুখে যাত্রা করলেন রাশেদুল হক।
নামাজ সেরে বাড়ি ফিরেই কাজের ছেলেটার ওপর চড়াও হলেন তিনি। না, আক্রমণাত্মক নন; তবে তার চেয়ে কিছু কমও নন। ঘুম থেকে টেনে তুলে প্রায় ধাক্কাতে ধাক্কাতে কলপাড়ে নিয়ে গেলেন মুখ-হাত ধোয়াবেন বলে। ছেলেটা যখন চোখেমুখে পানি দেওয়ায় ব্যস্ত, তখন রাশেদুল হক বললেন, ‘গরুটারে একখনি নদীত নিয়া জাবি। মনে রাখিস, পোলায় জদি গরু পছন্দ না করছে, তরেই কোরবানি কইরা দিমু।’
হাত থেমে যায় কাজের ছেলে রহিমের। প্রতিবাদের সুরে বলে ওঠে, ‘আমি আবার কী করলাম চাচা!’
‘ক্যান মনে নাই, গরুর হাটে বালা বালা কইরা এই বলদটারে কিনাইলি?’ দাঁতমুখ খিঁচিয়ে বলেন রাশেদুল হক।
‘দেইহেন চাচা, ভাইজানের গরু পছন্দ অইব। আর এহন নদীত নিয়া এমুন ডলা দিমু, সোনার নাহাল চিকচিক করবো। গরু দেইহাই ভাইজান খুশিতে ফাল দিয়া উডবো।’ দাঁতাল হাসি দেয় রহিম।
‘দেহুম নে’- বলেই গম্ভীর মুখে ঘরের দিকে অগ্রসর হন রাশেদুল হক।
ফরিদা বেগম তখন ফজরের নামাজ আদায়পূর্বক কোরআন তেলাওয়াতে ব্যস্ত। রাশেদুল হক কেমন অস্থীরতায় ভুগছেন! একবার ঘরের মধ্যে পায়চারি করেন, আবার চেয়ারে বা বিছানায় গিয়ে বসেন। স্বামীর অস্থীরতা আঁচ করতে পেরে ফরিদা বেগম তেলওয়াত সংক্ষিপ্ত করে ফেলেন। জায়নামাজ ছেড়ে ওঠা মাত্র রাশেদুল হক তাঁকে বলেন, ‘হুন, পোলায় সকাল দশটার সুময় রওনা অইব। তার মানে বাড়ি আইবো সইন্দার এট্টু পর। কী রানবা রাইতে?’
‘আফনের পোলায় তো জমিদার। ছুডমাছ খায় না, কাডা-আলা মাছ খায় না, কইল্লা খাইনা, কত কী জে খায় না! গোস্তের সালুন অইলে দুই-চাইরডা বাত মুহে দেয়।’ ফরিদা বেগম কোরআন শরীফ আর রেহাল জায়গামত রাখতে রাখতে শান্ত গলায় বললেন।
‘তাইলে কী গোস্ত নিয়া আসুম?’ চিন্তিত গলায় সহধর্মিনীকে জিজ্ঞাস করেন রাশেদুল হক।
‘নাহ! কাইল তো কুরবাণীই। কাইল থেইকা তো গোস্তের উফরেই থাকবো। এক কাম করেন, কচুর লতি আর লাল শাক নিয়া আহেন। গরে কাডালের বিচি আছে; পোলায় কাডালের বিচি দিয়া কচুর লতির চডচডি পছন্দ করে। লগে মাসের ডাইল ভর্তা আর লালশাক ভাইজ্জা দিমুনে। পোলায় খুশি অইব। ঢাহায় কী খায় না খায়, কেডায় জানে!’ চাপা এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে বুকের ভেতর থেকে ফরিদা বেগমের।
‘তাইলে এইডাই করি’- বলেই উঠতে গেলেন রাশেদুল হক। প্রায় সাথে সাথে চিৎকার করে ভ্রুকুঁচকে ফরিদা বেগম বলেন, ‘এহন কই জান?’
‘ক্যান, কচুর লতি আর লাল শাক নিয়া আহি।’ একটু বোকা বোকা হয়ে রাশেদুল হক বলেন।
‘আফনে কি পাগল হইয়া গেলেন? হবায় কেবল সহাল; এহনই কি বাজার বইছে?’ একটু বিরক্তি নিয়ে বলেন ফরিদা বেগম।
‘তাও তো একখান কতা! তাইলে করমুডা কি এহন? সুময় তো জায় না!’ একটু হতাশা নিয়ে বলেন রাশেদুল হক।
‘এক কাম করেন- পোলারে একখান মুবাইল করেন। এহনো মনে অয় পইরা পইরা গুমাইতাছে।’ মৃদু হেসে বলেন ফরিদা বেগম।
‘হ, বালা কতা কইছ। পোলায় জে আইলসা! গুমাইলে আর উডবার চায় না! দেহা জাইবো, দশটার সময় টেরেন ছাইরা দিছে, হে তহনো গুমাইতাছে!’ খানিক ক্ষোভ, খানিক আহ্লালার্দ্র প্রশ্রয় নিয়ে বলেন রাশেদুল হক। চশমাটা চোখে লাগিয়ে বালিশের নিচ থেকে মোবাইল ফোন টেনে বের করলেন তিনি।
সকাল দশটা না বাজতেই রাশেদুল হক বেরিয়ে পড়লেন বাজারের উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে দেখা হয়ে গেল জহির খানের সাথে। নাটক, সিনেমা অথবা গল্পে খান-মণ্ডলের তেল-জলসম সম্পর্কের কথা প্রচলিত থাকলেও এ গ্রামে এদের বেশ সখ্য। জহির খান রাশেদুল হক তথা রাশেদ মণ্ডলের পরম বন্ধু। দেখামাত্র জহির খান উচ্ছ্বসিত গলায় বলে উঠলেন, ‘কই জাও মণ্ডল?’
‘আইজ পোলায় আইতাছে। বাজারে জাই।’ আনন্দ চিকচিক করে ওঠে রাশেদুল হকের চোখেমুখে।
‘পোলায় কি আগের নাহাল এক-দুইদিনের জন্যে আইতাছে, নাহি হাতে সুময় আছে?’ উচ্ছ্বাস খানিকটা জহির খানকেও সংক্রমিত করেছে।
‘এইবার পাঁচদিনের ছুডি পাইছে। তোমার মাইয়ারে এইবারেই কাবিন করামু ভাবছি।’ ছোটবেলা থেকেই জহির খানের ছোটমেয়ে নীতুর সাথে রাহাতের বিয়ে পারিবারিকভাবে পাকাপাকি হয়ে আছে। রাহাতের ছুটির সমস্যার কারণেই বিয়েটা বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিয়ের প্রতি রাহাতের অনীহার কারণেও দুই ঘণিষ্ঠ বন্ধু এখন পর্যন্ত আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেননি।
রাশেদুল হকের কথায় জহির খান বলেন, ‘মাইয়া তো তুমারে হেরা ছুড থাকতেই দিয়া দিছি। তুমার মাইয়া, যহন খুশি লইয়া জাইবা। তা, বাজারে কী কিনবার জাও?’
‘পোলায় কাডালের বিচি দিয়া কচুর লতির চডচডি পছন্দ করে। হ্যার মায়ে কইল, কচুর লতি আর লালশাক লইয়া জাইতে।’
‘পোলায় আইব কহন?’
‘এট্টু আগে হ্যার টেরেন ছারছে। মুবাইল করছিল। আইতে আইতে সইন্দা পার অইয়া জাইবো।’
‘কাইল তুমরা রাইতে আমার বারি দাওয়াত নেও।’ কিছুটা অনুনয় ফুটে ওঠে জহির খানের গলায়।
‘কাইল না দোস্ত, পরশু রাইত। মাইয়াডারে দোয়া কইরা আংটি পরাইয়া আসমু।’ হাসতে হাসতে বলেন রাশেদুল হক।
এদিকে রাশেদুল হক বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কিছু পরই গুটিগুটি পায়ে নীতু এসে ঢোকে। চাহনি-অঙ্গভঙ্গি বলে দেয় ফরিদা বেগমের সন্ধ্যানে আছে সে।
‘কী রে মা, এদিকে আয়।’ রান্নাঘর থেকে হাঁক ছাড়েন ফরিদা বেগম। গৃহস্ত বাড়ি। পরিবারের মূল সদস্য তাঁরা তিনজন হলেও কাজের লোকসহ সবমিলিয়ে প্রতিবেলা দশ-বারজনের রান্না হয়। দুপুরের খাবার সময়মত তৈরি করতেই তিনি এখনই রান্নাঘরে চলে গেছেন। গ্রামে গৃহস্থবাড়ির বধূদের জীবনের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি কাটে রান্নাঘরে। একবেলার খাওয়া শেষ হতে না হতেই আরেকবেলার রান্নার সময় হয়ে যায়। কাজের মেয়েটা কাটাকুটায় ব্যস্ত। ফরিদা বেগমও বসে নেই। তিনি কূলায় চাল নিয়ে ময়লা-পাথর খুঁটে খুঁটে বেছে বের করছেন। নীতু চুপচাপ গিয়ে কাজের মেয়টার পাশে বসে যায়। পুঁইয়ের ডাটা টুকরো করায় মগ্ন হয়ে পড়ে।
‘লাটসাবের পুত আইজ আইতাছে। রওনা করছে।’ হালকা হেসে স্বগোতিক্ত নীতুকে উদ্দেশ্য করে বললেন ফরিদা বেগম। এ কথার পর নীতু যেন একটু গুটিয়ে যায় নিজের ভেতর। সেই কবে থেকে রাহাতকে ভালোবাসে! বুকের ভেতর সন্তর্পনে স্বপ্ন লালন করছে। প্রতিদিনই স্বপ্নগুলো একটু একটু করে বড় হয়। নীতু নিজ কাজে মগ্ন থাকে চুপচাপ।
‘এইবার আহুক। তর লগে বাইন্দা দিমু। হেরফর দেহুম, ক্যামনে মাসের পর মাস দূরে থাহে আমাগো থেইকা।’ ফরিদা বেগম আপন মনে বলে চলেন। হয়তো আরো কিছু বলতেন, কিন্তু তার আগেই হুড়মুড় দৌড় লাগায় নীতু।
‘ওই, কই জাস?’ জিজ্ঞেস করেও উত্তর পান না ফরিদা বেগম। নীতু ফিরে তাকায় না।
‘শরম পাইছে’- বলে দাঁতাল হাসি দিয়ে নিজ কাজে ব্যস্ত হয় কাজের মেয়টা। ফরিদা বেগমও হাসিতে যোগ দেন।
এক দৌড়ে বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ে চলে আসে নীতু। চেহারায় সলজ্জ হাসি। আনমনে ওড়নার কোনা ধরে টানাহেঁচড়া চলতে থাকে। কখনো কোনোদিন কাউকে বলা হয়নি, রাহাতকেও বলা সম্ভব হয়নি, কতখানি ভালোবাসে। নীরবে ভালোবেসেছে আর বুকের গভিড়ে স্বপ্ন জমা করেছে। অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে! জীবনের কাছে আর কিছুই চাওয়ার নেই। সব পেতে চলেছে নীতু। পুকুরের জলে একটা মাছ মনের আনন্দে নড়েচড়ে ওঠে। জলের বুকে মৃদু কম্পন সৃষ্টি হয়। আনাচেকানাচে ছড়িয়ে পড়ে সে কম্পন।
সন্ধ্যা ঘণিয়ে আসছে। পশ্চিমের আকাশ লালবর্ণ ধারণ করেছে। কিছু পরই মাগরিবের আযান পড়বে। মিনিট দশেক আগে ছেলের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে রাশেদুল হকের। ঘণ্টা দুই পরই ট্রেন থেকে নামবে সে। এরপর রিকশায় বাড়ি পৌঁছাতে লাগবে আরো একঘণ্টা। কলিজাটা জুড়াবে রাশেদুল হক দম্পতির। কাজের ছেলে রহিম কুরবাণীর গরুটাকে যত্ন করে খাওয়াচ্ছে। রাশেদুল হক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য দেখছেন। হঠাৎ মোবাইল ফোন বেজে উঠল। অপরিচিত নাম্বার। রিসিভ করে গ্রাম্যটানে তিনি ‘হ্যালো’ বললেন। আর কিছু বলা হয় না। চুপচাপ শুনে যান। অপর প্রান্তের কথা শেষ হল কী হলো না, ধপাস করে বসে পড়লেন তিনি ভূমিতে। পৃথিবীটা যেন দুলছে! রহিম ছুটে যায় তাঁর কাছে অজানা আশঙ্কায়। কে বা কারা রেললাইনের ফিশপ্লেট তুলে রেখেছিল। শ’খানেক যাত্রী হতাহত হয়েছে। ছেলে এবার বাড়ি ফিরছে; একেবারেই ফিরছে!
অথবা : একটি দিন বদলের গল্প
মুহাম্মদ মেহেদী হাসান
এফএনএস সাহিত্য : আপনার পোলার আঁতুড় ঘর কোটে হবি? পেটের উপর হাতটা রেখে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করে আলেয়া। কথাটা শুনে জয়নাব সিদ্দীকের মেজাজটা খিচড়ে ওঠে। কিন্তু যথাসম্ভব চাপা রেখে তিনি উত্তর দেন হবি-হবি। পালঙ্কের উপর হবি। ঐ নিয়ে তুই চিন্তা করিস না তো। নরম তোশক থাকপি। তার উপর পশমের চাদর। আরও ওপর তুই আর তোর পোলা।
যদি মাইয়া হয়? কথাটা বলা শুরু করে ধীরে ধীরে থেমে যায় আলেয়া। মাইয়া শব্দটার কাছাকাছি যখন বাক্যটা পৌঁছায় ততক্ষণে ফিসফিসানি ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না।
আলেয়া জানে জয়নাব সিদ্দীকের মেজাজটা এখন বিগড়ায় দেয়া ঠিক হবে না। সারা দিনের হাজারো ঝামেলা শেষে এই একবারই মানুষটা আসে এখানে তার সাথে কী আর কথা কাটাকাটি করা যায়?
প্রসঙ্গ ঘোরানর জন্য জয়নাব সিদ্দীক মতলব আটতে থাকে। আইচ্ছা, তোর ওলান দুটো দেখি দিন দিন টসটসা হয়া উঠতাছে।
মৃদু অন্ধকারেও স্পষ্ট বোঝা যায় আলেয়ার মুখ কুচকে গেছে। চোখ বন্ধ হয়ে এসেছে নাভির চারপাশটা থর থর করে কাঁপছে। পোলা বিয়ানের আগের লক্ষ্য বুঝি এটা, তাই’ন। এবারও চুপ করে থাকে মেয়েটা, আধারি হাতড়ে পানির ডিবাটা খুঁজে নিয়ে অলেয়ার হাতে দেয় সিদ্দীক।
নে, খা।
বড়িটা ঠিক মত মুখের মাঝে গেলো কি না বুঝে ওঠা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে সে। যেই না ডিবাটা নেমে রাখে, যাইরে বলে আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে না সিদ্দীক।
পুকুরপাড়ের টং-ঘরটায় কচ্-কচ্ শব্দ তুলে যখন বাড়ির দিকে পা বাড়ায় জয়নাব সিদ্দীক, আলেয়া তখন তার জন্য দোয়া আওড়ায় বিড় বিড় করে। আর সিদ্দীক ভাবে মেয়েটা কী কোন দিনই বুঝতে পারবে যে, নেছম কবিরাজের যৌনশক্তি বর্ধক বড়ি বলে রোজ ওকে যা খাওয়ায় তা আসলে জন্মনিয়ন্ত্রক পিল!
জয়নাব সিদ্দীক বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে গেলেও খেয়াল করে না ঠিক একই সময় পুকুর পাড়ের দুপ্রান্ত থেকে আরও দু’জন তার প্রস্থান দৃশ্য নজরবন্দী করলো। যার একজন যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিল, ঠিক সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে কিছুক্ষণ। আর অপরজন রাতের নির্জনতা চীরে টং-ঘরটাতে কচ্-কচ্ ছন্দ তুলবে কিছুক্ষণের অল্পক্ষণ পরেই।
সে প্রায় পনের বছর পূর্বের কথা। রতন তখন কোষা চালাতো অনেকটা পেটের দায়ে, অনেকটা কৈশরের ভারে। একদিন অমাবশ্যার সন্ধ্যায় জয়নাব সিদ্দীক ঘাপটি মেরে আছে ঘাটের হাত বিশেক দূরে। খালের ওপারে গ্রামপুলিশের একটা দলকে ঘিরে জটলা তাকে স্বস্তি দেয় না। তিনি যখন কোন দিশা খুঁজে পান না, তখন কোষা বেয়ে গুনগুনির চলা এক কিশোর তার নজরে পরে। কোষায় দুটো মাঝারি সাইজের ব্যাগ রেখে কিশোরের হাতে একটা শ’টাকার নোট গুজে দেন। কিশোর যদি না ফেরে, এমন ভাবনা যে হয়নি তা নয়। তবে কিই-বা বিকল্প ছিল আর। মাঝ রাতের পরে ব্যাগ দু‘টো নিয়ে খালের ওপারের তিন নম্বর ঘাটটাতে আসতে বলেন কিশোরকে পাঁচশ’ টাকার লোভও দেখান।
নাহ, কিশোর সেদিন যথাসময়েই এসেছিল। সেদিনের সেই পরিচয় আজ জয়নাব সিদ্দীকের ডান হাত। অনেকটা পথ মাড়াতে হয়েছে তাকে এই পর্যায়ে আসতে। সবটা সময় ছাড়ার মত ছিল রতন। আজ রতনকে খুব মনে পরে সিদ্দীকের। এমপি ইলেকশনের মাত্র পাঁচ দিন। এত দিক তিনি সামলান কীভাবে? রতনটা নাই। থাকলে হয়তো এত ভাবতেই হত না। তিনি মনে মনে রতনের জন্য শুকরিয়া আদায় করেন। ছেলেটা খুনের দায়টা নিজের কাঁধে নিয়ে না পালালে হয়তো আজ ইলেকশানেই দাঁড়ান হত না।
হ্যালো, চাচা?
কী খবর রে রতন? কেমন আছিস? এই তো চাচা, শোয়া-বসা দিন-মান আরকি। চাচা কিছু কইবেন?
নাহ, তুই কেমন আছস তাই জানবার চাইলাম আর কি?
ঠিক আছি চাচা। খাই দাই, ঘুমাই আর ডিস দেহি। এলাকার সেটেলমেন সব ঠিক মত আছে তো?
পূর্ব পাড়ার ক্যাচালটা মিটছে।
উত্তরের মাস্টার যে ফ্যাকরা লাগাছিল, কী কয়?
ঠিক আছে, ঠিক আছে।
সব সহি মতন আছে, তুই ডরাসনা। উপরওয়ালার ফজিলতে দেখিস গদিত যাওয়া এক-কে বারে পাকা।
হ-চাচা, তাই হবি জানি। এখন সব সালামতে শেষ হইলেই হয়।
রতন শোন, এখন রাখি উত্তর পাড়ায় একটা মিটিং আছে। আর তোর বউ, বউ ভালো আছে। তোর খোঁজখবর জিগায়। তাই চিন্তা করিস না।
জয়নাব সিদ্দীক ফোন রেখে দেয়। পুকুর পাড়ের টং-ঘরটা দিলে টান দেয়। কিন্তু যাওয়ার সময় করে উঠতে পারে না।
সিদ্দীক চাচার জন্য রতন নামাজ আদায় করে। ঐ কোষাটা ছাড়া কিছুই ছিল না তার। চাচা ভাত দিছে, মানুষ করছে, সুন্দরী মাইয়া দেইখা বিয়া দিছে। চাচা এমপি মিনিস্টার হলে রতনরে আর পায় কে! চাচা তো কইছেই গদিত বসার দুই দিনের মাথাত ওর মামলাটা বন্ধ করায় বাকি কাজ। তখন আবার পাখির মত ওড়া। একসময় রেললাইন ধরে দুইজন ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটতো। সেই দিন কী আর থাকবে! চাচা গাড়ি পাইবে না গদির সাথে? রতনের মন নেচে ওঠে। শুধু যুয়ান বউটার জন্য টান লাগে কোথায় জানি? আজ দুই বছর হইয়া গেল বউটার মুখ দেখে না সে।
বাশার। জয়নাব সিদ্দীকের একমাত্র ছেলে। একমাত্র উত্তরধিকারী। বাবার পায়ের কাছে বসে আছে। ঘামে তার মাথা থেকে পা অবধি ভেজা। সে হয়তো কাদছেও খানিকটা, কিন্তু ঘামের প্রবাহে ধরা যাচ্ছে না। বাপণ্ডছেলেকে ঘিরে আছে জনা পঞ্চাশেক মানুষ। তারা সকলে নিজেদের মাঝে কথা বলছে। মাঝে মাঝে শুধু বিষ্ময়সূচক আওয়াজগুলো ছাড়া যার কিছুই শোনা-বোঝা যাচ্ছে না। সন্ধ্যা গড়িয়ে যাচ্ছে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ইলেকশনের চূড়ান্ত খবর আসবে। এখন পর্যন্ত সিদ্দীক সাহেবের এমপি হওয়া কনফার্ম। তবুও রাজনীতির ময়দান বলে কথা। শেষ হয়েও শেষ হয় না যার কিছুই।
গ্রামের বর্তমান চেয়ারম্যান মুখ খোলেন। স্যার, বলাই থেকে ঢাকা পর্যন্ত শোভাযাত্রা ঠিক করা আছে। তিরিশটা গাড়ি আর শ’তিনেক মোটরসাইকেল থাকবে। অধিবেশনের অন্তত এক সপ্তাহ আগে পার্টি অফিস পর্যন্ত এই শোভাযাত্রা। বলা তো যায় না, যদি উপরাজত্ব, প্রতিরাজত্ব কিছু একটা পাওয়া যায়।
পূর্ণরাজত্ব যে এবার পাওয়া সম্ভব না তা জয়নাব সিদ্দীক ভালই বোঝে। চমৎকার আয়োজন করেছ চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানকে তোষামোদের পুরষ্কারে উত্তর করেন। এখন বিভেদ নয়। এখন সবাই স্ব-স্ব ইচ্ছাতেই তার পকেটে আসবে। অথচ দুই সপ্তাহ আগেই এই চেয়ারম্যান উত্তর পাড়ার মাষ্টারের সাথে যোগ দিয়ে কী ঝামেলাটাই-না বাঁধিয়েছিল। তা ভেবে সিদ্দীক মনে মনে হাসে।
নিজের অবনত দিনগুলো চোখে ভাসে একে একে। কতবার এই উঁচু মাথাটা নামিয়ে দিয়েছি উদ্র্ধতন প্রভুর হাঁটুর নিচে- দিয়ে তাদের খুশি করতে হয়েছে। কতবার যে কতকিছু দেখে ফেলে এই চোখ দু‘টো বুঝে থাকতে হয়েছে। নিরপেক্ষ থাকার ভান ধরতে হয়েছে।
নিরপেক্ষ! শব্দটা দ্বিতীয়বার আওড়ে ঠোঁটের কোনায় হাসিটা ধরে রাখতে চেষ্টা করেন। জানি, নিরপেক্ষ থাকার মত কৌতুক আর হয় না। তবু সেই কৌতুকের জোকার সাজতে হয়েছে। যেন নিজের মৃতদেহ বহন করে নিজেই হাঁটার মত কিছু একটা।
রাজনৈতিক বন্ধুরা সব ছিল একেকটা প্রেতাত্মা। পাঁচ দশটা মানুষকে টপকে রাজনীতিবিদ হওয়া যায়, কিন্তু একটা প্রেতাত্মাকে টপকানো অসাধ্য। আজ সেই অসাধ্য তার ধরাছোঁয়ার মধ্যে। তিনি কিছুটা আত্মপ্রসাদ বোঁধ করার প্রস্তুতি নেন।
জয়নাব সিদ্দীকের এমপি হওয়ার খবর নিশ্চিত হয়ে সবাই যখন বাড়ি ফেরে ততক্ষণে রাত বসেছে। রতনকে খবরটা নিজমুখে জানাতে ইচ্ছে করে। অন্ধকার রাস্তায় একাকী বহুদূর হেঁটে যেতেও ইচ্ছে করে। রাস্তার কোথাও কোথাও ফিনকির মত আলো, অজস্র নির্বাচনী পোস্টার, সারি সারি দোকানগুলোতে রঙ্গিন কাগজের সাজ, অসহ্য নিস্তব্ধতা, আর ঘর্মাক্ত মানুষের মত কটু গন্ধ তাড়িয়ে ফেরে। ইলেকশন জয়ের পর এখন সবকিছুই তার কাছে বিরক্তিকর লাগতে থাকে। পাগল হয়ে যাওয়ার মাতলামি ভর করে। সবশেষে পুকুর পাড়ের টং-ঘরটার কথা মনে পড়ে। এবং যথানিয়ম অথবা তথা অভ্যাসেই সেদিকে পা দু‘টো বাঁক নেয়।
পুকুর পাড়ের খুব কাছে এসে সিদ্দীক সাহেবের পূর্ব নিয়মে কাশি দেওয়ার কথা, আগমনী জানান দেয়ার নিয়মে। কিন্তু আজ তিনি শব্দটা করতে ভুলে যান। চারপাশটা একটু বেশিই অন্ধকার লাগে তার।
টং-ঘরটার কাছাকাছি এসে তার ভ্রম ভাঙ্গে। ঘরটা এমন কচ্-কচ্ করে দুলছে কেন? তিনি চারপাশে তাকান। বাতাসের বেগ বোঝার চেষ্টা করেন।
নাহ, তেমন কিছু অনুভব হয় না। তিনি কিছুটা পিছিয়ে এসে যথাদূরত্ব বজায় রেখে পূর্ব নিয়মে কাশি দেন। কচ্- কচ্ শব্দটা হঠাৎ থেমে যায়। বিদ্যুৎ চমকের একটা মনুষ্য প্রকৃতীর জমাট ছায়া অন্ধকার চিরে ছুটে যেতে দেখেন। তিনি আর পা বাড়ান না। নিজের উত্তরাধিকারীর অবয়বটা চিনতেও তার ভুল হয় না। তাছাড়া তার অনুপস্থিতিতে এই রাজনীতির ময়দান, এই পুকুর, এই সর্বস্ব তো একমাত্র ছেলেরই সামলানোর কথা যথানিয়ম।
জয়নাব সিদ্দীক বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে গেলে আজও খেয়াল করেন না, ঠিক একই সময় পুকুর পাড়ের দু’প্রান্ত থেকে দু’জন তার প্রস্থান দৃশ্য নজরবন্দি করল। যার একজন সেই বিদ্যুৎ বেগে ছুটে চলা অবয়বটা, যে অসমাপ্ত ক্রিয়ার পরিণতিটুকু সেইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে দীর্ঘক্ষণ। আর অপরজনকে দীর্ঘক্ষণের অপেক্ষার পর পর্যন্ত দেখে যাবে। ক্ষমতার পালা বদলের চিত্র, অথবাঃ নিতান্তই একটি দিন বদলের নাট্য।
তাছাড়া টং-ঘরটা যদি পুকুরমাত্রিক ঘিরে থাকা ব-দ্বীপ হয়, আর রতন-রতনের বউ আলেয়াকে যদি প্রজা গণনায় ধরা হয় তবে এতদিন তাদের প্রজাতান্ত্রীয় করে তো আজ তিনি পুরস্কৃত জয়ীই। বিরোধীরাই যখন পর্যায়ক্রমে ব-দ্বীপের উত্তরাধিকারী, তবে আজ যে দৃশ্য মঞ্চায়িত হল, তা কি একটা পরিপূর্ণ বাদলের দিন চিত্রনাট্য নয়?
জনাব সিদ্দীকের মোবাইল বেজে ওঠে।
হ্যা, রতন। খবর পাইছস? কয়েকদিনের মাঝেই আসতেছি। সব ঠিক হয়া যাবে। আর তোর বউ, বউ ভালো অছে। তোর কথা জিগায়। কথা বাড়তেই থাকে............। এ যেন এক লাগ ভেলকি লাগ!
ততক্ষণে টং-ঘরটা আবার দুলতে শুরু করেছে। কচ্- কচ্ আওয়াজ তুলে অবশ্যই।