মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির যুদ্ধ চলছে। চলতি ববছরে এর ভয়াবহতা ব্যাপক আকারে ধারণ করেছে। দেশটি ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে শুরু হওয়া সংঘাত থেমে নেই। ১৯৬২ সালে সামরিক বাহিনী দেশটির ক্ষমতা দখল করে নেয়। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একজোট হয়ে হামলার সামাল দিতে পারছেনা সামরিক জান্তা। প্রাণ বাঁচাতে সশস্ত্র অবস্থায় পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের সদস্যরা। সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার ঘুমধুম-তমব্রু সীমান্ত এলাকায় গত কয়েক দিন ধরে টানা সংঘাতের পর উত্তেজনা কমলেও থেমে থেমে গুলি আর মর্টার শেলের বিকট শব্দে এখনো কেঁপে উঠছে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের টেকনাফ অঞ্চল। তবে এই সংঘাতের পর মঙ্গলবার রাখাইন রাজ্যটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি। এদিকে গত সোমবার উখিয়ার পালংখালী সীমান্তে এক নিখোঁজ বাংলাদেশি জেলের মরদেহ উদ্ধার করা করেছে পুলিশ। গত পহেলা ফেব্রুয়ারি নাফ নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে সীমান্তের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হাতে অপহৃত হয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান নামে ঐ মৎস্যজীবী। টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে গোলাগুলির কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এবস্থায় সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে ও স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। তারপরও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে এই যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই বাংলাদেশের উচিত এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতিবেশী দেশ ভারত, মিয়ানমার, চীন ও মার্কিন যুদ্ধরাষ্ট্রকে নিয়ে একটা যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা। বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়ায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থী বসবাস করছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রায়ই হত্যা, মাদকচোরাচালানের মতো ঘটনা ঘটছে। অনেকে রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প থেকে বের হয়ে মিয়ানমারে গিয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়ার খবর গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। এদিকে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির একটি থিংট্যাংকের আলোচনায় বলেছেন, যে পরিস্থিতি এখন মিয়ানমারে আছে, এই পরিস্থিতির কারণে বিশেষ করে রাখাইনের সঙ্গে যে যুদ্ধ চলছে, সে কারণে বাংলাদেশের নিরাপত্তা, এমনকি বাংলাদেশ-ভারত দুটি দেশেরই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের আরো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক যেসব গোষ্ঠী আছে, যারা এখানে আছেন, বিশেষ করে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন-এদের কাছে বিষয়টা উপস্থাপন করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার আগামী সপ্তাহে তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসতে পারেন বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা অনু বিভাগ) খন্দকার মাসুদ আলমের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করবেন। এর পাশাপাশি পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন তিনি। আমরা আশকরি আলোচনার টেবিলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ আলোচনা হওয়া জরুরী।