‘আমি তুমার লাগি দোয়া করুম মায়া, তুমারে জানে-মালে হগলবায় আল্লাহ যাতে ভালা রাহে’ এইভাবেই কান্না জারিত কন্ঠে কথা গুলো বলছিলেন অসহায় বৃদ্ধা মোছাঃ হালিশজান বেগম (৭০)। নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের মেলাডহর গ্রামের বাসিন্দা হালিশজান বেগমের মানবেতর জীবনযাপন ও অসহায়ত্তের কথা শুনে বিনামূল্য চিকিৎসা ও নিজ টাকায় ওষুধ কিনে দেওয়াসহ সকল চিকিৎসা ভার নেন দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাকসুদা আক্তার রিমি। এই খুশিতে টল টল চোখের পানি মাখা মুখে চিকিৎসক রিমির মাথায় হাত রেখে উপরের কথা গুলো বলছিলেন হালিশজান বেগম। ২১ ফেব্রুয়ারি বুধবার সন্ধায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের একপর্যায়ে ডাঃ মাকসুদা আক্তার রিমির ব্যক্তিগত চেম্বারে এ দৃশ্য চোখে পড়ে প্রতিবেদকের। জানতে চাইলে হালিশজান বেগম বলেন, দীর্ঘ সময় যাবত ধরে বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তিনি। তবে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য তার ছিলোনা। তাই কষ্ট করেই বেঁচে থাকতে হচ্ছে। তবে এবার এলাকাবাসীর সাহায্যে ডাঃ রিমির কাছে চিকিৎসা নিতে আসলে কষ্টে জীবনযাপনের কথা শুনে তার সকল চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন ডাঃ রিমি, এমনকি ঐ বৃদ্ধাকে একখানি শাড়ী কাপড়ও কিনে দিয়েছেন ঐ ডাক্তার। হালিশজান বেগম জানান, স্বামী মারা গেছেন প্রায় বছর ৪০ আগে। দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান নিয়ে ছিল তার ছোট্ট সংসার। প্রায় ১০ বছর আগে প্রতিপক্ষের হাতে মারা যায় বড় ছেলে। ছোট ছেলে হয়ে পড়ে অসুস্থ। এরপর থেকেই জীবনে নেমেআসে অন্ধকার। আপনজন বলতে কেউ নেই। বলতে গেলে আছে শুধু এলাকাবাসী। বর্তমানে অন্যের বাড়িতে থাকেন সে। আশপাশের মানুষের দেওয়া খাবারেই কোনোরকম বেঁচে আছেন। তবে এখন বয়সের সঙ্গে শরীরেও বাসা বেঁধেছে বিভিন্ন রোগ। যেখানে তিনবেলা খাবার মেলেনা সেখানে চিকিৎসা পাওয়া ছিল শুধুই স্বপ্ন। অসহায় ও হতদরিদ্র রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে ভিজিট কম রাখেন কখনও আবার একেবারেই রাখেন না এমন চিকিৎসকও আছেন। যাদেরকে বলা হয় মানবিক ডাক্তার। অনেকে তাদের গরিবের ডাক্তারও বলে থাকেন। এমনই একজন এক প্রচারবিমুখ গরিবের ডাক্তার নেত্রকোনার দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাকসুদা আক্তার রিমি। তার ব্যক্তিগত চেম্বারে সামর্থ্যবানদের জন্য ৩০০ টাকা ভিজিট নির্ধারণ করা আছে। যদিও তার এখানে বেশির ভাগ রোগীই নিম্ন আয়ের। তাই ঐ ফি কেবল সামর্থ্যবানদের জন্যই নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিদিন আসা সামর্থ্যবান রোগীদের থেকে ভিজিট নিলেও প্রায়ই হতদরিদ্র রোগীদের ভিজিট ছাড়াই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন রিমি। এমনকি অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষদের জন্য প্রতি বৃহস্পতিবারে ফ্রি চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তিনি। এ বিষয়ে ডাঃ মাকসুদা আক্তার রিমির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হালিশজান বেগম আমার কাছে চিকিৎসা নিতে আসলে ওনার অসহায় জীবনযাপনের কথাগুলো শুনে আমার কাছে মনে হয়েছে ওনি খুবই কষ্টে আছেন। আপনজন বলতে কেউ নেই। তাই আমি ওনার সব ওষুধ কেনাসহ সকল চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমি দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আমার অফিস টাইম শেষ করে সংসারের কাজকর্ম শেষে যতটুকু সময় পাই আমার চেম্বারে অসহায় রোগদের পেছনে বাঁকি সময়টুকু দিয়েথাকি। ডাঃ মাকসুদা আক্তার রিমি ২০১৮ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ৩৯তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের ৮তারিখ সুনামগঞ্জ জেলার হাসান ফাতেমাপুর ইউনিয়ন সাব সেন্টারে মেডিকেল অফিসার হিসেবে প্রথম যোগদান করেণ। সেখানে সাফল্যের সঙ্গে চিকিৎসাসেবা দিয়ে পরবর্তীতে ২০২২ সালের মে মাসের ২৮ তারিখ দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেণ। ডাঃ রিমি মনে করেণ, অর্থ উপার্জন করাই সফলতা নয়, বরং একজন অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তুলতে পারলেই আমি মানসিক শান্তি বোধকরি।