ইউনাইটেড হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই ভুল চিকিৎসায় ঝরে গেছে আরও এক শিশুর প্রাণ। রাজধানীর মালিবাগের জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টার ও হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে আহনাফ তাহমিদ নামের ১০ বছরের শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার ছাড়াও হাসপাতালটি বন্ধ করা হয়েছে। সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিলেও ফুটফুটে শিশুটির আর বাবা-মায়ের কোলে ফেরা হবে না। এসব ঘটনার জন্য দায়ী অনভিজ্ঞ চিকিৎসক, অনুমোদনহীন ও অব্যবস্থাপনায় পরিপূর্ণ নামসর্বস্ব চিকিৎসাকেন্দ্র। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, এসব হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হলেও যথাযথ তদন্ত ও অপরাধীর শাস্তি হচ্ছে না। ফলে এমন ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এর আগে আয়ানের মৃত্যুর বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে গত ২৯ জানুয়ারি মামলার শুনানিকালে তার মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির রিপোর্টকে ‘আইওয়াশ’ ও ‘হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। ফের তদন্তের নির্দেশের পাশাপাশি নতুন কমিটিও করে দেন হাইকোর্ট। সন্দেহ নেই এসব ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়ালেও অভিযুক্ত ও তদারকি প্রতিষ্ঠানের চাপে প্রকৃত তদন্ত বাধাগ্রস্ত হয়। শুধু অলিগলির ভুঁইফোঁড় ক্লিনিকও নয়, দেশের পাঁচতারকা মানের হোটেলসদৃশ হাসপাতালগুলোতেও এ ধরনের অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটছে; কিন্তু এর দায় কেউ নিচ্ছে না। স্বভাবতই এতে দেশের স্বাস্থ্য খাত ও চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে রোগী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমরা মনে করি, দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো যদি তাদের অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করত, তাহলে স্বাস্থ্য খাতের এই দৈন্যদশা আমাদের দেখতে হতো না। সাধারণ মানুষ সুচিকিৎসার আশায় নামি-দামি হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে ছুটত না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তির আগেই রাজধানীসহ দেশের নানা স্থানে ছড়িয়ে থাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিকগুলোকে নজরদারি ও আইনের আওতায় আনা। ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হলে চিকিৎসকেরও কোনোভাবে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তাদেরও সচেতন থাকতে হবে। কেউ ভুল চিকিৎসার শিকার হলে দায়ী প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক, তদারককারী দপ্তর যেমন-স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে (বিএমডিসি) জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে। ওষুধ প্রেসক্রাইবের ক্ষেত্রেও চিকিৎসককে প্রলোভনমুক্ত থেকে ভালো মানের ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিতে হবে। বিশ্বের অধিকাংশ স্থানে চিকিৎসকরা কোনো প্রতিষ্ঠানের ওষুধ নয়, বরং ওষুধের মূল উপাদান তথা জেনেরিকের নাম দেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ গত বছর এ বিধান মানতে চিকিৎসকদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করে আমাদেরও যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসাসেবা আইন পাশ করতে হবে।