জামালপুরের সরিষাবাড়িতে চাষীদের ভুট্টা চাষে আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভুট্টা চাষ অধিক লাভ জনক বলে চাষীরা ইরি-বোরোসহ অন্যান্য ফসল চাষ করা বাদ দিয়ে ভুট্টার ফসল ফলাতে ওঠে পড়ে লেগেছে। এ ফসল ফলাতে যেমন সার বীজ পানি নিড়ানী খরচ কম তেমনি আয় বেশী পরিশ্রম কম। এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে বলেও জানিয়েছেন ভুট্টা চাষীরা। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সরিষাবাড়ি উপজেলার পশ্চিমে যমুনা তীরবর্তী চরাঞ্চলের ইউনিয়ন গুলিতে ভুট্টার আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে সাতপোয়া ইউনিয়নের জামিরা, আদ্রা, মাজারিয়া, ছাতারিয়া চুনিয়াপটল, রৌহা, চর সরিষাবাড়ি, রাখালগাছা, কোনারপাড়, শিশুয়া, বাঘমারা, হেণাঞ্চাবাড়ি, পোগলদীঘা ইউনিয়নের চর পোগলদীঘা, মালি পাড়া, টাকুরিয়া, বিন্নাফৈর, মানিক পটল, গোবিন্দপটল আওনা ইউনিয়নের মেন্দার বেড়, কুলপাল, ঘুইঞ্চা কুমার পাড়া, বারইকান্দী, দামাদরপুর, রঘুনাথপুর, পিংনা ইউনিয়নের ঘইঞ্চার চর, নলসন্ধা, ডাকাতিয়া মেন্দা, কাওয়ামারা, চর কুবলিবাড়ি, চর বাসুরিয়া, পানিবাড়ি, বালিয়া মেন্দা এই গ্রাম গুলিতে প্রচুর পরিমাণ ভুট্টার চাষ করা হয়েছে। যেখানে এতদিন কৃষকেরা ইরি-বোরোসহ বিভিন্ন ফসল চাষে ব্যস্ত ছিল কিন্তু আজ তারা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে চর জামিরা গ্রামের কৃষক আফজাল ফকির জানান, ‘আমি ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। ভুটা চাষে আয় বেশী খরচ কম। সুতরাং এ বছর ইরির চাষ কমায়ে দিয়ে ভুট্টার চাষ করেছি’। একই গ্রামের জহুরুল ইসলাম মেম্বার বলেন, ‘ভুট্টাতে সার, বীজ, পানি, নিড়ানী, আগাছা সাফ, কাটা, মাড়াইয়ে খরচ কম বলে এই চাষ করছি’। ছাতারিয়া গ্রামের কৃষক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘গত বছর আমি ইরি চাষ করেছিলাম ৮ বিঘা আর ভুট্টার আবাদ করেছিলা ২ বিঘা, কিন্তু আমার ইরির থেকে ভুট্টার ফসলে লাভ বেশী হয়েছে। তাই আমি এ বছর ভুট্টার আবাদ করেছি ৫ বিঘা আর ইরি ধানের আবাদ করেছি ৩ বিঘা। সারা বছর খেতে যা প্রয়োজন তাই লাগিয়েছি। আল্লাহ চাহে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে’। পোগলদীঘা গ্রামের চাষী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এক বিঘাতে ভুট্টা হয় ৩০ থেকে ৩৫ মন। বর্বাতমার বাজার দর ১২ থেকে ১৩ শত টাকা। বিঘা প্রতি আয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার। আর খরচ হয় প্রতি বিঘায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। এদিকে ধান প্রতি বিঘায় উৎপন্ন হয ১৮ থেকে ২০ মন। বাজার দর ২২-২৫ হাজার টাকা। খরচ প্রতি বিঘায় ১৫-১৬ হাজার টাকা। এখন আপনারা বুঝতেই পারছেন আমরা কেন এবার ভুট্টা চাষের প্রতি ঝুুঁকে পড়েছি’। আদ্রা গ্রামের ভুট্টা চাষী রবিউল ইসলাম জানান ‘ভুট্টার আয় বেশী খরচ কম। তা ছাড়া বছরে একই জমিতে তিনবার ভুট্টার ফসল করা যায়’। সরিষাবাড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপ সিংহ জানান এ বছর এই উপজেলায় ১০ হাজার ৩’শ ৭৮ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে বেশী ভুট্টার চাষ করা হয়েছে। বিশেষ করে যমুনা তীরবর্তী এলাকায় ভুট্টা চাষ ভালো হচ্ছে। আমরা এই এলাকার কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করতে উন্নত মানের বীজ, সার কীটনাশক, আর্থিক সহযোগিতা করেছি। আশা করছি এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভেনা রয়েছে।