প্রায় দিনই বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে চলে আসে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। এ শহর দূষণের সবচেয়ে বড় কারণ হলো এর চারপাশে গড়ে ওঠা শত শত অবৈধ ইটভাটা। সর্বোচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা থাকার পরও যেগুলো পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশেই রয়েছে এরকম অসংখ্য স্থাপনা, যেগুলো বায়ু দূষণের মূল কারণ। আর বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৮০ হাজার মানুষের মৃতু্য হয় বায়ুদূষণের কারণে। এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মানুষ হাঁপানি, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে, কিন্তু বায়ুদূষণ না কমে দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইটভাটার বায়ুদূষণ রোধে আইন রয়েছে, কিন্তু সে আইনের প্রয়োগ হচ্ছে না। এসব ইটভাটা শুধু বায়ুদূষণ নয়, পাহাড় কেটে সমতল করে দিচ্ছে। কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে সেসব কৃষিজমি ফসল উৎপাদনক্ষমতা হারাচ্ছে। আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং ভাটার দূষণ রোধে যাঁদের ভূমিকা রাখার কথা, অজানা কারণে তাঁরা এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকছেন। ইট প্রস্তুত ও ভাঁটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৯ অনুযায়ী বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কিংবা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে এবং বনাঞ্চল থেকে কমপক্ষে দুই কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। একইভাবে আবাসিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভার সীমানার মধ্যে ইটভাটা করা যাবে না। বাস্তবে দেখা যায়, লোকালয়ের মধ্যখানে, বনাঞ্চল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গা ঘেঁষে ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। সম্প্রতি এ রকম অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে। বেশির ভাগ ইটভাটায় কম উচ্চতার ড্রাম চিমনি ব্যবহার করা হয়, যেগুলো অনেক বেশি পরিমাণে বায়ুদূষণ করে। কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ হলেও প্রায় শতভাগ ইটভাটায়ই কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। আইনে পাহাড়, টিলা ও কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, কিন্তু প্রায় কেউই তা মানছে না। আর এটি দেখভালেও তেমন জোর দেখা যায় না। ফলে প্রশ্ন ওঠে, ছাড়পত্র বা লাইসেন্স ছাড়াই যদি ইটভাটা চালানো যায়, তাহলে ভাটার মালিকরা সরকারকে ফি দিয়ে এসবের জন্য অনুমতি সংগ্রহ করবেন কেন? এর উত্তর অনেক ভাটা মালিকই দিয়েছেন। আবেদন করেও অনুমতি পেতে অনেক ঝামেলা হয়। অনুমতি এখন দেওয়াও হয় না। তার চেয়ে সংশিস্নষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভাটা পরিচালনা করা অনেক সহজ। আর সংশিস্নষ্ট ব্যক্তিরা হাত মেলান বলেই দিন দিন বেড়ে চলেছে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা। বাড়ছে বায়ুদূষণের কারণে মৃতু্যর সংখ্যা। আমরা চাই, অবিলম্বে ইটভাটার এই নৈরাজ্য বন্ধ হোক। মানুষের জীবন বাঁচাতে হলে পরিবেশকে রক্ষা করার বিকল্প নেই।