নওগাঁর মহাদেবপুরে ভূমিহীন না হলেও মো: শামসুুদ্দিন সরদার (৪৫) নামে একজন প্রভাবশালীর নামে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত সরকারি আবাসন প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে তিনি সেই ঘরে বসবাস না করলেও নিয়ন্ত্রণ করেন আবাসন প্রকল্পের সব কিছু। অভিযোগ করা হয়েছে যে, তার পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া বাড়ি, পুকুর, জমি থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে তিনি ওই আবাসন প্রকল্পে নিজের নামে ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন। প্রকল্পের সমিতির সভাপতির পদও হাসিল করেছেন। তার কথা কেউ না শুনলে তাদের বিরুদ্ধে শুরু করেন নানান অত্যাচার, মিথ্যা মামলা, হামলা। প্রশাসন বলছেন, ঘর বরাদ্দে অনিয়ম হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আলোচিত শামসুদ্দিন সদর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের মৃত মহির উদ্দিন সরদারের ছেলে। কিন্তু তিনি নিজেকে তেলিহার আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা এবং তেলিহার আবাসন প্রকল্প সমবায় সমিতির সভাপতি বলে পরিচয় দেন। সরেজমিনে ওই আবাসন প্রকল্পে গিয়ে জানা যায়, ২০০৮ সালে এখানে ৬০টি পরিবারের জন্য ঘর বরাদ্দ করা করা হয়। এখানে বসবাসকারি কয়েকজন গৃহবধূ জানালেন প্রকল্পের গেটে ঢুকতেই বাম পাশের প্রথম ঘরটি শামসুদ্দিন সরদারের। ঘরটি তালাবদ্ধ দেখা গেল। গত ৭-৮ বছর থেকে শামসুদ্দিন এখানে বসবাস করেন না বলে তারা জানালেন। বছরের পর বছর ঘরটি তালাবদ্ধই থাকে। রহিমপুর গ্রামে গিয়ে খোঁজ করলে গ্রামবাসী শামসুদ্দিনের বাড়ি দেখিয়ে দিলেন। বেশ বড় টিনের ছাউনি দেয়া মাটির বাড়ি তার। বাড়ির সাথেই লাগানো পুকুর। কয়েকজন গ্রামবাসী জানালেন, শামসুদ্দিন পৈত্রিকসূত্রে বাড়ি, পুকুর, জমি সবই পেয়েছেন। এখানেই বসবাস করেন দীর্ঘদিন থেকে। বাড়ির অদূরে মাঠে দেখা হলো শামুদ্দিনের স্ত্রীর সাথে। তিনি জানালেন, তারা দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে আবাসনে থাকেন না। তার শ^শুড়ের মৃত্যুর পর পাওয়া বাড়িতেই থাকেন। ক্ষেতের জমিতে কাজ করে সংসার চলে যায়। এসময় তার স্বামী বাজারে গিয়েছেন বলেও জানান। মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে শামসুদ্দিন সরদার জানান, পৈত্রিকসূত্রে সাড়ে সাত শতক বাড়ি ভিটা পেয়েছেন। তবে কিছু জমি পেলেও পুকুরে তার কোন ভাগ নেই। আবাসনে না থাকলেও তিনি আবাসন সমবায় সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বলে স্বীকার করেন। আবাসনে না থাকলেও আবাসনের অন্যদের নামে বিভিন্ন মামলার বিষয় স্বীকার করে জানান, এসব বিষয় কাগজ দেখে বলতে হবে। স্থানীয়রা এব্যাপারে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তারা শামসুদ্দিনের নামে বরাদ্দকরা ঘর বাতিলের আবেদন জানান। জানতে চাইলে সহকারি কমিশনার (ভূমি) রিফাত আরা জানান, আবাসন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দে অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আবাসন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ সংক্রান্ত উপজেলা টাক্সফোর্স কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান সোহাগ মোবাইলফোনে জানান, বিষয়টি তাঁকে জানানো হলে তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।