ভোলার দৌলতখানে আলোচিত রাব্বি হত্যা মামলার পলাতক এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত আসামি শাকিলের বাড়ি উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নে। শাকিলের বাবা ইসমাইল হোসেন ভবানীপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দৌলতখান থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। জানা যায়, শুক্রবার ১মার্চ বিকালে পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দৌলতখান লঞ্চঘাটের একটি যাত্রীবাহী। লঞ্চে তল্লাশি চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সে লঞ্চের টয়লেটে আত্নগোপন করে। পরে পুলিশ সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। হত্যা মামলার আসমি শাকিল দৌলতখান থানায় পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। দৌলতখান থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সত্য রঞ্জন খাসকেল সাংবাদিকদের জানান, রাব্বি হত্যার পলাতক আরও দুই আাসামি বাবু ও সিয়ামকে গ্রেপ্তারে মাঠে নেমেছে পুলিশ। এছাড়া পুলিশের পাশাপাশি র ্যাব, ডিবি ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাদা পোশাকদারি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও কাজ করছে। জানা যায়, পলাতক বাবু হত্যা মামলার প্রধান আসামি আর সিয়াম মামলার দ্বিতীয় নম্বরের আসামি। বাবু দৌলতখান বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তফা বানিয়ার ছেলে। আর সিয়ামের বাড়ি ও ভবানীপুরের ৮নং ওয়ার্ডে। তার বাবার নাম আবু সাইদ আলাউদ্দিন। যে কারনে রাব্বি হত্যা কান্ডের শিকার হয়। : জুনিয়র সিনিয়র দ্বন্দ্বে আলোচিত রাব্বি হত্যার নির্মম ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছে বলে নিহত শাহিনুর রহমান রাব্বির ছোট ভাই রাজিব হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছে। রাজিব জানায়, ২২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দৌলতখান বাজার উত্তর মাথা বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে ক্রিকেট খেলার আয়োজন করে মাহিদ গ্রুপ। খেলাকে কেন্দ্র করে জুনিয়র সিনিয়র গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। এসএসসি পরীক্ষার্থী রাজিব হোসেন তার ভাষায় সাংবাদিকদের বলেন তার বন্ধু আশরাফুলকে মাহিদ তুই তাঙ্গার করে । এরপর মাহিদকে নাকি আশরাফুল থাপ্পর মারে। আশরাফুল অষ্টম শ্রেণিতে আর মাহিদ সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ঘটনার দিন ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজিব দৌলতখান বাজারের মাহফিলে যাওয়ার পথে মাহিদের বাবা দৌলতখানের ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন সবাইকে ডেকে নিয়ে বলেন আমার পোলারে থাপ্পড় দিছে হেইয়ার এত বড় সাহস হেইয়ায় কে ? হেয়ারে পিডামু। আমি বলছি কাকা আমনে যারে মনে কয় তারে পিডান আমারে টাইনেন না ৷ এই কথায় পিছন থেকে টক্কর দিছে সিয়াম। আমি বলছি তুই কথা কইস না এইতে যা করে করুক। এরপর আমরা চকবাজার আইয়া পড়ছি। এরপর আমরা শুনছি যে মহিউদ্দিন কাকা নাকি হুমকি দিছে যারে যেয়ানে পাও আগে মারবি মারিয়া লাবি। এরপর চকবাজার যাইয়া শাকিব আর সিয়াম আমার কলার পাচাইয়া ধরছে। একধাপ হাতাহাতি হইছে চকবাজারের ভিতরে । এরপর আমরা শহীদ মিনারে আসিয়া পরছি। তারপর ওরা লাঠি সোটা লইয়া আইছে। তারপর আমি রাব্বি ভাইয়ারে আর তামিম মামারে ফোন দিছি। ভাইয়া আইয়া জিগাইয়া শাকিবেরে নাকি একটা থাপ্পর দিছে আমার কলার ধরছে দেইখ্যা। শাকিব মনিরের মুদি দোকানে কাজ করে। তারপর ভাইয়ারে পিছন থেকে বাইন্না মোস্তফার কর্মচারী নাকি ছেলে লাঠি দিয়া একটা বাড়ি দিছে। এক বাড়িতেই ভাইয়া শুয়ে পড়ছে। মেইন সূত্রপাতই হইছে মাহিদে। মহিউদ্দিন কয় হেইতের ছেলে মাহিদ মেইন সূত্রপাত। মহিউদ্দিন কয় হেইতের উস্কানি পাইয়া হেইয়ারা এত কিছু করছে। হেইতের ছেলের গায়ে হাত দিছে হেইতে কি বইয়া থাকবো? রাব্বি হত্যার বিশদ বর্ণনা দিয়ে নিহত রাব্বির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় হত্যার প্রতিবাদে বিচারের দাবিতে এলাকাবাসী ফুঁসে ওঠে। পুলিশ মাহিদের বাবা দৌলতখান বাজারের ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন কে আটক করে। জিজ্ঞাসা শেষে তাকে পরদিন থানা থেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এদিকে রাব্বি হত্যার বিচার দাবিতে শনিবার বিকালে দৌলতখান শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিল শেষে শহীদ মিনার চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে রাব্বি হত্যার তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করা হয়। রবিবার সরেজমিন নিহত রাব্বির বাসায় গেলে তার বাবা জামাল মাঝি জানায় , রাব্বির মাথায় আঘাত করলে তাকে রাতেই দৌলতখান হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে মাথায় ছয়টি সেলাই করা হয। এর পর রাব্বির অবস্থার অবনতি হলে তাকে পরদিন শুক্রবার ভোরে ভোলা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে ডাক্তারের পরামর্শে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে নেয়ার পথে রাব্বি মারা যায়। ২৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার নিহত রাব্বির লাশের ময়না তদন্ত শেষে তাকে দাফন করা হয়। দৌলতখান থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সত্য রঞ্জন খাসকেল জানিয়েছেন, রাব্বির নিহতের ঘটনায় তিনজনকে আসামী ও আরো চারজনকে অজ্ঞাত করে দৌলতখান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।