নওগাঁর পত্নীতলায় ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ৩য় ও ৪র্থ কিস্তিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও পুনর্বাসন কর্মসূচীর অধীনে ১৭টি ঘর নির্মাণ না করে অর্থ উত্তোলন করার অভিযোগে সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ রোমানা আফরোজ এর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল সোমবার কয়েকটি পত্রিকায় এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়। সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, পত্নীতলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার (বর্তমানে বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলায় কর্মরত) গত ১৪ আগষ্ট ২০২২ তারিখে পত্নীতলা উপজেলায় যোগদান করেন। উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই তার স্বভাবসুলভ কর্মকান্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করতে তিনি সক্ষম হন। শিল্প, সাহিত্য, ক্রীড়া সকল ক্ষেত্রেই তার অসামান্য অবদান পত্নীতলাকে একধাপ এগিয়ে দেয়। সাধারণ মানুষের পাশে থাকার কারণে তিনি এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন যে, একসময় তার বদলীর আদেশ হলে সাধারণ মানুষ তার পক্ষে রাস্তায় নেমে বদলীর আদেশ স্থগিত করে দেন। তবে তার এ সকল জনবান্ধব কাজের ফলে অসুবিধায় পড়ে যান কিছু স্বার্থানেষী মানুষ। সাধারণ মানুষ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমানা আফরোজকে পত্নীতলায় ধরে রাখতে চাইলেও একটি স্বার্থানেষী গোষ্ঠী তাকে পত্নীতলা থেকে সরানোর জন্য উঠেপড়ে লাগেন। সরকারি আদেশে তিনি ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে পত্নীতলা থেকে ট্রান্সফার হন। বর্তমানে তিনি বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। মোসাঃ রোমানা আফরোজ পত্নীতলা উপজেলায় দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ৩য় ও ৪র্থ কিস্তিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও পুনর্বাসন কর্মসূচীর অধীনে ৪৫টি ঘর বরাদ্দ আসে। যার প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এ সকল ঘরের ২৫টি নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয় এবং অবশিষ্ট ১০টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে সরকারি আদেশে গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে তিনি পত্নীতলা থেকে আদমদিঘী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে যোগদান করেন। আদমদিঘী উপজেলায় যোগদান করলেও তিনি নির্মাণাধীন ১০টি ঘরের কাজ নিজ ব্যবস্থাপনায় প্রতিনিধির মাধ্যমে চলমান রাখেন। এদিকে নির্মাণাধীন ১০টি ঘরকে পুঁজি করে পত্নীতলার একটি স্বার্থানেষী মহল সাংবাদিকদের নিকট ভুলভাল তথ্য প্রচার করে এবং সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ রোমানা আফরোজ এর বিরুদ্ধে বানোয়াট নিউজ প্রকাশে উদ্বুদ্ধ করলে সাংবাদিকরা কোন প্রকার সত্যতা যাচাই না করেই পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করে। সরেজমিনে সোমবার বিকেলে উপজেলার আকবরপুর ইউয়িনয়নের বেলপুকুর, পত্নীতলা ইউনিয়নে শম্ভুপুর, হাসানবেগপুর, খরাইল, ঘোষনগর ইউনিয়নের কোচ খিরসীন, কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সুবর্ণপুর, নজিপুর ইউনিয়নের ফহিমপুর কামারপাড়া, উজিরপুর রাজোয়ার পাড়াসহ বিভিন্ন ই্উনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে ৩৫টি ঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শুধুমাত্র নির্মইল, শিহাড়া, দিবর ইউনিয়নের ১০টি ঘরের ৩০ভাগ কাজ বাঁকী আছে। যেগুলো সম্পন্ন করণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সরেজমিনে প্রকল্প কার্যক্রম পরিদর্শনের সময় উজিপুর গ্রামে কথা হয় ঘর নির্মাণ মিস্ত্রী ফারুক এর সাথে। তিনি বলেন, তিনি ২৮টি ঘর নির্মাণ করেছেন এবং ১মাস আগেই ঘর হস্তান্তর করেছেন। পত্নীতলা ইউনিয়নের সুবর্ণপুর গ্রামে কথা হয় ঘর নির্মাণ মিস্ত্রী জসিম এর সাথে। তিনি বলেন, তিনি ১৭টি ঘর নির্মাণ করছেন। এর মধ্যে ৭টি ঘরের শুধু রংয়ের কাজ বাঁকি। অবশিষ্ট ১০টি ঘরের ৩০ভাগ কাজ বাঁকী রয়েছে। এ সকল কাজ আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলেও তিনি জানান। ঘর নির্মাণ মিস্ত্রী ফারুক ও জসিম এই প্রতিবেদককে জানান, প্রকল্পের ঘরগুলো বিচ্ছিন্ন এলাকায় অবস্থিত হওয়ার কারণে নির্মাণ কাজে সময় কিছুটা বেশী লেগেছে। ঘরের নির্মাণ সামগ্রী ও শ্রমিকের মজুরি তারা বুঝে পেয়েছেন বলেও জানান।
ফহিমপুর কামারপাড়া গ্রামে গিয়ে কথা হয় উপকারভোগি তুলশি রাজোয়ার ও সনজিত রাজোয়ারের সাথে। তারা জানান, বরাদ্দ পাওয়া ঘরে তারা বর্তমানে থাকছেন। ঘরের কাজ খুব ভালো হয়েছে। ঘরে থাকতে তাদের কোন সমস্যা হচ্ছেনা।
এ বিষয়ে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পত্নীতলা ইউনিয়নের বাসিন্দা নরেন পাহান বলেন, ঘর নির্মাণ করা বিষয়ে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ রোমানা আফরোজ যতদিন পত্নীতলায় ছিলেন আন্তরিকতার সাথে তিনি আদিবাসীদের পাশে ছিলেন। আদিবাসীদের ঘর নির্মাণের টাকা তিনি আত্নসাৎ করেননি। ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। তিনি যে সকল ঘর নির্মাণ করেছেন তার গুনগতমান বেশ ভালো। তিনি যেহেতু একটা দায়িত্বে ছিলেন আর দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় বদলী হয়েছেন সঙ্গত কারণেই কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। অবশিষ্ট কাজে দ্রুত শেষ হবে। পত্নীতলা উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ রোমানা আফরোজ বলেন, পত্নীতলায় অবস্থানকালে আমি আন্তরিকতার সাথে কাজ করে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। বদলীজনিত কারণে কয়েকটি ঘরের কাজ আংশিক শেষ না করেই নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে হয়। এপরও আমি কাজ চালিয়ে গেছি। টাকা আত্নসাৎ করলে ঘর নির্মাণের কাজ কিভাবে সম্পন্ন হলো। সীমানা জটিলতা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে কয়েকটি ঘরের কাজ সম্পন্ন করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। একটি স্বার্থানেষী মহল সরকার ও আমার ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য বিভ্রান্ত ছড়ানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। আমি মনে করি এ সকল বিভ্রান্ত তারাই ছড়াচ্ছে আমার কাজের কারণে যাদের স্বার্থে আঘাত লেগেছে। আমি প্রকল্পের কাজে শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে সম্পন্ন করেছি। সুতরাং স্বার্থানেষী মহল যতই ষড়যন্ত্র করুক তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না। এ বিষয়ে পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার টুকটুক তালুকদার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য প্রদানে অপারগততা প্রকাশ করেন।