যশোরের চৌগাছায় হারিয়ে যাওয়ার ২৪ বছর পর বাড়ি ফিরে এসেছে এক ব্যবসায়ী। বিষয়টি নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার বিবরনে জানা যায়, উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের হাজরাখানা গ্রামের মৃত হোসেন আলীর ছেলে তোতা মিয়া চৌগাছা বাজারে স্টেশনারির ব্যবসা করতেন। ২০০০ সালে ভারতীয় নদীর উপচে পড়া পানিতে চৌগাছা উপজেলার পশ্চিমাঞ্চল ও মহেশপুর উপজেলার বিস্তৃর্ণ অঞ্চল বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। এসময় চৌগাছা উপজেলার শতশত মানুষ ত্রাণ নিয়ে ছুটে যায় বন্যাকবলিত মানুষের কাছে। এক বৃহস্পতিবার চৌগাছা উপজেলার ব্যবসায়ীদের সাথে তোতা মিয়াও ত্রাণ নিয়ে যায় বন্যাকবলিত মানুষের কাছে। সেদিন বেশ রাতে বাড়ি ফিরে আসে তোতা মিয়া। তোতা মিয়ার ভাই ফরহাদ হোসেন ফিন্টু জানান, পরদিন শুক্রবার সকালে আমার ছোট ভাই তোতা চৌগাছা শহরে দোকানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে টর্চ লাইট হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু রাতে সে আর ফিরে আসে না। পরদিন থেকে অনেক বছর ধরে আমি আমার ভাইকে সারা বাংলাদেশ খুঁজে বেড়িয়েছি,কিন্তু তার কোন হদিস পাইনে। অবশেষে ৫ মার্চ মঙ্গলবার আমাদের গ্রামের ভ্যানচালক আলতাফ হোসেনের ভ্যানে চড়ে সে বাড়ি এসে হাজির। কিন্তু এতদিন কোথায় ছিল কিভাবে আসলো কিছুই বলতে পারছেনা। ভ্যানচালক আলতাফ হোসেন বলেন, আমি চৌগাছা শহরে প্যাসেঞ্জারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলাম,এমন সময় একজন বলল হাজরাখানা যাবে? আমি বললাম যাবো,লোকটা বলল একটু দাঁড়ান আমি মিস্টি কিনে নিয়ে আসি। মিস্টি নিয়ে আসার পর জিজ্ঞেস করলাম হাজরাখানায় কার বাড়ি যাবেন, সে যখন বললো ফিন্টুর বাড়ি তখন আমি দেখলাম সে ফিন্টুর ভাই তোতা, আমি তো উত্তেজনায় এক প্রকার কাঁপতে কাঁপতে তাকে নিয়ে ফিন্টুর বাড়ি গিয়ে হাজির। এ খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে গ্রামের আবাল, বৃদ্ধ বণিতা তোতাকে এক নজর দেখার জন্য তার বাড়িতে ভিড় করে। বুধবার সকালে তোতার বাড়িতে গিয়ে দেখাযায় বাড়ি ভর্তি মানুষ আর মানুষ। ঘরের মেঝেতে নির্বাক বসে আছে তোতা কিছুই বলছেনা। তার স্ত্রী ঝরনা বেগম বললেন বিবাহ হওয়ার দুই বছর পর ছেলে তৌফিক হাসান ইমরান জন্মগ্রহণ করে। ইমরানের বয়স তিন বছর হলে ২০০০ সালের বন্যার সময় এক শুক্রবার উনি হারিয়ে যান, তারপর আজ ২৪ বছর পার হয়ে গেছে আমরা তো তাকে মৃতই মনে করেছিলাম হঠাৎ গতরাতে উনি বাড়ি ফিরে এসেছেন কিন্তু কোথায় ছিলেন কিভাবে আসলেন কিছুই বলতে পারছেননা। তাকে ডাক্তার দেখাবো তারপর দেখি উনি স্বাভাবিক হন কিনা তারপরও আমরা খুব খুশি আল্লাহতালার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া। তোতা মিয়ার একমাত্র ছেলে তৌফিক হাসান ইমরান যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড মার্কেটিং বিষয়ে মাস্টার্স এর ছাত্র। সে জানায় বাবার স্মৃতি বা মুখাবয়ব কিছুই আমার মনে নেই,বাবা হারিয়ে গেছে এতটুকুই জানি। গতরাতে বাবা ফিরে আসলে মা,চাচি ও চাচার কাছ থেকে নিশ্চিত হলাম এই তোতা মিয়াই আমার বাবা ভাল লাগছে তিনি ফিরে আসায়। তোতা মিয়ার বড় ভাইরা মহেশপুর উপজেলার জলিলপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, ২০০০ সালে যে বৃহস্পতিবার তোতা ত্রাণ নিয়ে মহেশপুর গিয়েছিল সেদিন আমার সাথে দেখা হয়েছিল, তারপরদিন সে হারিয়ে যায়। গতরাতে ফিরে এসেছে শুনে আজ আসলাম দেখা করতে, নাম পরিচয় বললে ইশারা করলো চিনেছে,তবে কোন কথা বলছেনা। তোতার মামা চৌগাছা কারিগর পাড়ার মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ভাগনে তোতা ২৪ বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিল, আজ ফিরে এসেছে শুনে দেখা করতে আসলাম। এদিকে তোতা ফিরে এসেছে এ কথা প্রচার হওয়ার সাথে সাথে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের মুখে একই কথা কোথায় ছিল কি করতো কিভাবে আসলো চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কেউ বলছে পাগলা গারদে ছিল, কেউ বলেছে জেলখানায় ছিল,আবার অনেকে বলছে জ্বিনে নিয়ে গিয়েছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে তোতা যতদিন মুখ না খুলছে বা সুস্থ না হচ্ছে ততদিন রহস্যবৃত থেকে যাচ্ছে তোতার হারিয়ে যাওয়ার কাহিনি।।