গাজীপুরের কাপাসিয়ার তরগাঁওয়ের রূপনগর পালকি কমিটি সেন্টারের মালিক ও ভূমিদস্যু মোঃ নাজমুল করিমের অত্যাচার, নির্যাতন, জমি জবরদখল ও অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী। ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের তরগাঁও পালকি কমিউনিটি সেন্টারের সামনে শুক্রবার সকালে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, থানায় অভিযোগ দিয়ে কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আইনকে নিজের মতো ব্যবহার করছেন। মামলা হামলা দিয়ে এলাকার মানুষকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। তার ভয়ে এলাকায় কেউ শান্তিতে বসবাস করতে পারছে না। তার স্বার্থের জন্য যে কাউকে যে কোন সময় মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করে। উপজেলার তরগাঁও গ্রামের মোঃ গিয়াসউদ্দিন বেপারীর ছেলে মোঃ মাসুদ রানা (৫২) জানান, তরগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও তরগাঁও গ্রামের মৃত সাজেদুল করিমের পুত্র মোঃ নাজমুল করিম বেশ কয়েক বছর আগে ‘রূপনগর পালকি কমিউনিটি সেন্টার’ নামে একটি বিনোদন পার্ক গড়ে তুলেছেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে তাদের এলাকার প্রায় ১৫ টি নিরীহ মানুষের জমি দখল করে নিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই পার্কে নিযুক্ত নিজস্ব বাহিনী দ্বারা তাদের উপর আক্রমণ চালায় এবং মামলা দিয়ে থানা পুলিশের মাধ্যমে হয়রানি করেন। মাসুদ রানার দাবি, পার্কের ভিতরে তার প্রায় ৩২ শতাংশ পৈত্রিক সম্পত্তি রয়েছে। তাছাড়া তার বসত ভিটার প্রায় দুই শতাংশ জমি দখল করে পার্কের মূল ফটক তৈরি করেছে নাজমুল এবং তার ঘর থেকে বের হওয়ার দরজা বাউন্ডারি দেয়াল দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। স্থানীয় মোঃ বোরহানউদ্দিন জানান, তার ছেলে মোঃ শরিফুল ইসলাম পার্কের উত্তর পাশে প্রায় পাঁচ শতাংশ জমি কিনে সীমানা প্রাচীর তৈরি করেন। পরে ভবন তৈরি করতে গেলে নাজমুল করিম তাদের নামে তিনটি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। গত বুধবার গভীর রাতে তাদের সীমানা প্রাচীর ও আরসিসি পিলার ভেঙ্গে জমি দখলের চেষ্টা করে সে। তারা রাতের বেলা খবর পেয়ে থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পায়। একই এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে মোঃ হেলালউদ্দিন জানান, পার্কের ভিতরে তার প্রায় আট শতাংশ জমি পাঁচ লাখ টাকায় কিনে নেওয়ার কথা বলে সে দলীল করে একটি টাকাও পরিশোধ করে নি। মোঃ ইব্রাহিম জানান, পার্কের ভিতরে তাদের পরিবারের প্রায় পঁচিশ শতাংশ জমি রয়েছে। ওই জমিতে ফল ও ফসল করতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অস্ত্র ও ফৌজদারিসহ নানা ধারায় প্রায় পনেরটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করা হচ্ছে। একই এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী মোসাঃ জাহানারা জানান, নাজমুল করিম তাদের বিভিন্ন দাগ খতিয়ানের প্রায় দশ শতাংশ জমি জবর দখল করে নিয়েছে। মোঃ মনির হোসেন জানান, তারা তিনজন মিলে পার্কের দক্ষিণে ৪৯ শতাংশ জমি বায়না সূত্রে ক্রয় করেন। পরবর্তী সময়ে নাজমুল করিম ওই জমির মালিকদের একজনের কাছ থেকে সাড়ে চার শতাংশ জমি কিনে পুরো ৪৯ শতাংশ জমিতেই বালু ফেলে দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, পার্কের সামনের তরগাঁও মধ্যপাড়া বায়তুল আমান জামে মসজিদের প্রায় দুই শতাংশ জমি নাজমুল করিম দখল করে নিয়েছে এবং মসজিদের টাকায় কেনা ইট, বালু ও সিমেন্ট তার পার্কের নির্মাণ কাজে ব্যবহার করেছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ নেতা নাজমুল করিম জানান, কারোর জমি জবর দখল আমি করিনি। আমি কাগজ পত্রে মালিকানা হয়েই জমি ভোগদখলে রয়েছি। এ সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমার বিরুদ্ধে একটি চক্র গভীর ষড়যন্ত্র করছে। তারা দীর্ঘদিন যাবত পরিকল্পিত ভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এ বিষয়ে তরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি আয়ুবুর রহমান সিকদার জানান, তার সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল করীমের বিরুদ্ধে একটি মানববন্ধন হয়েছে বলে শুনেছেন। বিষয়গুলো তদন্ত করে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাপাসিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আবু বকর মিয়া জানান, নাজমুল করিমের জমি জবর দখলের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন এবং বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। দোষী প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।