বেইলি রোডের ভবনে যখন আগুন লাগে তখন এটির ষষ্ঠ তলায় ছিলেন ঢাকার সজল রায়। আগুন থেকে বের হবার পথ পাচ্ছিলেন না তিনি। নামার সিঁড়ি ছিল ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। আলাদা কোনো জরুরি নির্গমন পথ ছিল না।
মি. রায় কোনোমতে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে পড়েন। কিন্তু সেখান থেকেও নামার কোনো উপায় ছিল না। শেষ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ক্রেন গিয়ে আটকে পড়া অন্যদের সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে।
“কার্নিশ বেয়ে বেয়ে দুয়েকজন নেমে গেছে। একজন নামতে গিয়ে পড়েও গিয়েছিলো। কিন্তু আমি সে সাহস করিনি। ফায়ার সার্ভিস আসার পর ফ্লোরের কাঁচ ভেঙে এবং আরো কিছু ভেঙে আমাদের নামানোর ব্যবস্থা করে। আর কোনো পথ ছিল না,” বলছিলেন সজল রায়।
ঢাকায় যেসব বহুতল ভবন বা মার্কেট আছে সেখানে অনেক ক্ষেত্রেই আগুন লাগলে বের হওয়ার জন্য আলাদা করে জরুরি নির্গমন সিড়ি থাকে না।
কোথাও কোথাও আগুন নেভানোর প্রাথমিক ব্যবস্থাও নেই।
আবার যেসব ভবন রেস্টুরেন্ট চালানোর মতো করে তৈরি হয়নি, সেখানেও রেস্টুরেন্ট হয়ে ভবনগুলোকে অগ্নিকাণ্ডের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
বেইলি রোডের ঘটনার পর রাজউক, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা এখন অভিযান চালাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বা রেস্টুরেন্ট পেলে সেগুলো সিলগালাও করে দেয়া হচ্ছে।
কিন্তু অগ্নিঝুঁকিতে থাকা এসব ভবনের কী হবে?
সেগুলো কি ভেঙে ফেলতে হবে?
নাকি ভেঙে না ফেলেও ভবনগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব? এমন নানা প্রশ্ন ঘিরে এখন আলোচনা হচ্ছে।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কি ভাঙতে হবে?
ফায়ার সার্ভিসের হিসেব মতে, ঢাকায় অগ্নিঝুঁকিতে আছে এরকম ভবনের সংখ্যা ২ হাজার ৬০০ টিরও বেশি। তবে সংখ্যাটা বাস্তবে আরো বেশি হবে কারণ খোদ ফায়ার সার্ভিস বলছে ঢাকার সবগুলো ভবন তাদের জরিপে আসেনি।
কিন্তু ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হলেই সেটি ভাঙতে হবে এমনটা নয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, যেসব বহুতল ভবন আগুনের ঝুঁকিতে আছে সেগুলোতে কিছু পরিবর্তন এনেই ঝুঁকিমুক্ত করা যায়।
তিনি বলেন, “এখানে মূল বিষয়টা হচ্ছে যে ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা বাড়াতে হবে। আপনি যে ভবনেই থাকেন, সেখানে সহজে বের হওয়ার রাস্তা আছে কি না সেটা গুরুত্বপূর্ণ। বহুতল ভবনে একাধিক সিঁড়ি রাখতে হয়। সেটা যদি না থাকে তখন সিড়ির ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক সময় ভবনের বাইরেও আলাদা করে সিঁড়ি যুক্ত করা যায়। এছাড়া ফায়ার ডোর দিতে হবে, যেন আগুনটা সিঁড়িতে চলে আসতে না পারে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”