পটুয়াখালীর কলাপাড়ার পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) মো. নাসির উদ্দিন এবং নির্বাহী প্রকৌশলী (জেটি) মোস্তফা আশিক আলী দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি-জামায়াত ও সরকার বিরোধী রাজনীতি এবং ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত। পায়রা বন্দরের ঠিকাদারী কাজ তাদের পছন্দের ঠিকাদারকে পাইয়ে নিয়ে অবৈধ অর্থের পাহাড় গড়েছেন। আর বঞ্চিত করছেন বন্দর নির্মাণে জমি হারানো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের। এমনকি তাদের চাকুরীও দেয়া হচ্ছে না। এর প্রতিবাদ করায় উল্টো ছাত্রলীগের কর্মীরা চাঁদাদাবি করছে এমন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের এ উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে রেখেছে। এতে ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে সরকারের। শুক্রবার সকাল ১১ টায় কলাপাড়া প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার তৌহীদুর রহমান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন এ অভিযোগ করেন কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব তালুকদার। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পায়রা বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিনের আপন বড় ভাই হলেন হাসান মাহমুদ। তার এ ভাইয়ের ওয়াটার বার্ডস লিমিটেড এবং এবিএম ওয়াটার কোম্পানী লিমিটেড নামে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠান পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের একান্ত সহযোগী হলেন উপজেলা এক ছাত্রদলের নেতার মালিকানাধীন মেসার্স নুরজাহান এন্টারপ্রাইজ। পায়রা বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী (জেটি) মোস্তফা আশিক আলী স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে রনি বিশ্বাস, নিজাম বিশ্বাস, রিয়াজ তালুকদার, তুহিন মৃধা, তপন বিশ্বাসসহ নিজস্ব আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। প্রধান প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন পায়রা বন্দর নির্মাণের শুরুতে একটি প্রকল্পে কাজ করতেন। পরবর্তীতে উর্দ্ধতনদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে সরাসরি পায়রা বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। তাঁর এই নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে পায়রা বন্দর নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় লোকজনের পরিবারে বিপত্তি ঘটে। প্রধান প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিনের বাড়ি নোয়াখালী। তিনি সেখান থেকে নিজের লোকজন এনে পায়রা বন্দরের বিভিন্ন প্রকল্পে এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনকে চাকুরি দিয়েছেন। পায়রা বন্দরের এ দুই কর্মকর্তার আত্মীয় স্বজন ও আশীর্বাদপুষ্টরা বিএনপি-জামায়াতের কিছু নেতা কর্মীদের নিয়ে একটা সিন্ডিকেট তৈরি করে পায়রা বন্দরের সকল ঠিকাদারী কাজ নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে, কমিশন বানিজ্য করে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের মহোৎসব করে যাচ্ছেন। সব কিছু মিলিয়ে পায়রা বন্দরে কর্মরত প্রধান প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তফা আশিক আলী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পায়রা বন্দরে লুটপাট করছে। এমনকি বিএনপি-জামায়াতকে প্রতিষ্ঠিত করার একটি মিশন নিয়ে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছে। লিখিত বক্তব্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা বন্দর নির্মাণে জমি অধিগ্রহনকালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পুনর্বাসন করে তাঁদের পরিবারের শিক্ষিত ও বেকার যুবকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকুরিসহ কাজ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। অথচ পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ পায়রা বন্দর নির্মাণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের বিছিন্ন করে রাখা হয়েছে। পায়রা বন্দরে কর্মরত প্রধান প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তফা আশিক আলীর সিন্ডিকেট এ জন্য দায়ী। তিনি বলেন, পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়াটার বার্ডস লিমিটেড এবং এবিএম ওয়াটার কোম্পানীর কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বেকার যুবকদের তাঁদের প্রতিষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিল বলে মোতালেব তালুকদার জানান। এ আশ্বাসের ভিত্তিতে পৈত্রিক ভিটি-বাড়ি, কৃষি জমি হারানো ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরা কাজের সন্ধানে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানে গেলে প্রধান প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিনের আপন বড় ভাই হাসান মাহমুদ পরিচালিত ওয়াটার বার্ডস লিমিটেড এবং এবিএম ওয়াটার কোম্পানীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অশ্লীল ভাষায় দুর্ব্যবহার করে বিতাড়িত করে দেন। প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্ব্যবহার, মারমুখী আচরণকে ধামাচাপা দিয়ে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য দলীয় ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করে ছাত্রলীগের নামে চাঁদাবাজীর তকমা দেয়া হয়েছে। যা সম্পুর্ণ অসত্য, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। এ অভিযোগের বিষয়ে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) মো. নাসির উদ্দিন এবং নির্বাহী প্রকৌশলী (জেটি) মোস্তফা আশিক আলীর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা কল রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার, পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ নাসির উদ্দিন, কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নির্মল কুমার নন্দী ও শহীদুল ইসলাম বিশ্বাস, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলমসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।