গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। সরকার সবকিছুর যোগান দিলেও ডাক্তারদের দায়িত্বের উদাসীনতা, সময়মতো স্বাস্থ্য কেন্দ্রে না আসা, অনিয়মিতভাবে ডিউটি করা এখানে নিয়মে পরিণত হয়েছে। রয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। হয় না প্যাথলজির পরীক্ষা। কোটি টাকার ডিজিটাল এক্সরে মেশিন ও আধুনিক জেনারেটর মেশিন দীর্ঘদিন ধরে বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। রোগীদের টয়েলেটের অবস্তা নাজুক। এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনিয়মই যেন এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যার হাসপাতাল চালু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এালাকার হাসপাতাল হওয়ায় হাসপাতালটিতে বরাদ্দ দেওয়া হয় চিকিৎসার সকল আধুনিক সরঞ্জামাদী। অন্যান্য ১০০ শয্যা হাসপাতাল থেকে জনবলও এখানে অনেক বেশি। ধাপে ধাপে চিকিৎসক বাড়িয়ে এখন কর্মরত রয়েছে ২২ জন চিকিৎসক। আছে কার্ডিওলজি, চর্ম ও যৌণ, মেডিসিন, গাইনী, শিশু, এ্যানেস্থেশিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আছে ডেন্টাল চিকিৎসক। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে সকাল ৮ টায় আউটডোরে চিকিৎসকদের বসার কথা থাকলেও এই নিয়ম মানছেন না কেউ। আউটডোরে রোগীদের জন্য টিকেট কাউন্টারই খোলা হয় সাড়ে ৯ টার পর। চিকিৎসক আসেন ১০ টার দিকে। তাও ২ থেকে ৩ জন। বাকি চিকিৎসকদের কোন হদিস পাওয়া যায় নাই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালটিতে সব মিলিয়ে ২৪ জন চিকিৎসকরে ৪ থেকে ৫ জন রোগী দেখায় নিয়োজিত থাকেন। তাও আবার ১০ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত বাকিদের কোন খবর নেই। এ যেন কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই অবস্থা। এদিকে জুনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি, চর্ম ও যৌণ, মেডিসিন, গাইনী, শিশু, এ্যানেস্থেশিয়া ও ডেন্টাল সার্জন পোস্টিং থাকলেও এসব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাউকেই পাওয়া যায় না হাসপাতালে। ২/১ জন কালেভাদ্রে আসেন বলে রোগীরা অভিযোগ করেন। সকাল ১০ টার দিকে দেখা গেল ডেন্টাল সার্জন ডাঃ নাজিয়া ইয়াসমিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের যন্ত্রপাতিহীন একটি ফাঁকা কক্ষে বসে চিকিৎসা দেন। অথচ পুরাতন ভবনে দাঁতের চিকিৎসার জন্য যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ একটি ডেন্টাল ইউনিট রয়েছে। যা বর্তমানে স্টোর রুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। একযুগ আগের এনালগ এক্সরে মেশিনে সনাতনি পদ্ধতিতে নাম মাত্র চলছে এক্সরের যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা। লোক দেখানোর জন্য এটা করা হচ্ছে বলে রোগীদের অভিযোগ রয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া কোটি টাকা মূল্যের পোর্টঅ্যাবল ডিজিট্যাল এক্স-রে মেশিন ৬-৭ বছর ধরে বাক্সবন্দী অবস্থায় রয়েছে। যা কোন কাজে লাগছে না। এক্সরে করার জন্য নিয়োজিত রয়েছে ২ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিও এন্ড ইমেজিং)। একই অবস্থা ডিজিটাল জেনারেটর মেশিনেরও। কোটি টাকা মূল্যের জেনারেটর মেশিনটি ব্যবহার না করে বাক্সবন্দি অবস্থায় রায়েছে বছরের পর বছর। এদিকে ১০০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে প্যাথলজি পরীক্ষার যন্ত্রপাতিসহ সকল উপকরণ থাকলেও বন্ধ রয়েছে এই সেবা। শুধুমাত্র থেরোলজি কিছু পরীক্ষা হচ্ছে নামে মাত্র। যে কোন রোগীর রোগ নির্ণয়ের জন্য প্যাথলজির সিবিসি, আরবিএস, এইচবিএস এজি, ইউরিন আরই, ভিডিআরএল, ক্রস ম্যাচিং এরমতো নরমাল রোগ নির্ণয় পরীক্ষাও এখানে না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন রোগীরা। প্যাথলজির সমস্ত টেস্ট হাসপাতালের সামনের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করতে হচ্ছে। অথচ এখানে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) হিসেবে ৩ জন কর্মরত রয়েছেন। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার কাঠিগ্রামের রোজিনা বেগম (৭০) বলেন, আমি সকাল ৮টায় পেট ব্যাথা নিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসেছি। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বসে থেকেও কোন ডাক্তার পায়নি। কুশলা গ্রামের আকলিমা খানম ও ইলি বেগম বলেন, দুপুর ১২ টার দিকে আল্ট্রা করাতে এসেছিলাম। এখানে দায়িত্বরত নার্স এখন আর হবে না বলে ফিরিয়ে দিয়েছেন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) কনিকা রায় বলেন, আসবাবপত্রের অভাবে রোগীদের রোগ নির্ণয়ের জন্য প্যাথলজির সরঞ্জামাদি স্থাপন করতে না পারায় আমরা রোগীদের সেবা নিতে পারছি না। কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নন্দা সেন গুপ্তা ঢাকায় ট্রেনিং এ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি। তবে এ সকল অভিযোগের বিষয়ে গোপালগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, কোটালীপাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আমি পেয়েছি। বিষয়টি আমি আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছি।