পটুয়াখালীর কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুইজন প্রধান শিক্ষকের পদায়ন নিয়ে শিক্ষক,অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে বিব্রত ওই বিদ্যালয়ে পদায়ন হওয়া ও সিনিয়র দুই প্রধান শিক্ষকও। কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন নাজমুস সাকিব খান কনা। অথচ একই বিদ্যালয়ে গত ৬ মার্চ মঙ্গলসুখ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে পদায়ন করা হয়। কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য দেখিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাসরিন সুলতানা (আদেশ নং ৩৮.০১.০০০০.৪০০.১৯.০০১.২৪.২১২) সাক্ষরিত আদেশে জাহাঙ্গীর আলমকে ওই স্কুলে বদলি করেন। কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এই বদলী সংক্রান্ত মন্ত্রনালয়ের চিঠি পেয়েছেন। কিন্তু একই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন অবস্থায় কিভাবে ওই পদ শূণ্য দেখিয়ে এ বদলী করা হয়েছে এ বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেন নি। কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুস সাকিব খান কনা বলেন, এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য হয়নি। তিনি আজ (১০মার্চ) বিদ্যালয়ে উপস্থিত আছেন এবং যথানিয়মে হাজিরা খাতায় সাক্ষর করেছেন। তার বদলীর কোন অফিসিয়ালি চিঠি হাতে পাননি। অনুসন্ধানে জানা যায়, কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধাস শিক্ষক ও মঙ্গলসুখ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজেরা সমঝোতার মাধ্যমে মন্ত্রনালয়ে তদবির করে এ বদলীর জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু মঙ্গলসুখ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলমের কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদায়ন করলেও কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নাজমুস সাকিব খান কনাকে অণ্য স্কুলে পদায়ন না করায় একই বিদ্যালয়ে দুই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন নিয়ে জটিলতা সৃষ্ঠি হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলসুখ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মো. জাহাঙ্গীর আলম গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদায়ন নিয়ে একটি মামলা (নং ১৫৯৫/২০২০) আদালতে চলমান রয়েছে। মামলায় তার ওই বিদ্যালয়ে পদায়নে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন আউমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মুজিবুর রহমান। মামলায় বলা হয় প্রধান শিক্ষক পদায়ন নিয়ে মিথ্যা এফিডেভিড করে সাত জনের মধ্যে ছয় নম্বরে থাকা মো. জাহাঙ্গীর আলম ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এ বিষয়ে মঙ্গলসুখ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিঁনি ফোন কল রিসিভ করেন নি। তবে আজ (১০ মার্চ) তিনি বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় সাক্ষর করেছেন। কলাপাড়া উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান (মঙ্গলসুখ ক্লাষ্টার) বলেন, মঙ্গলসুখ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বদলীর মন্ত্রনালয়ের একটি চিঠি ৬ মার্চ তারা ই-মেইলে পেয়েছেন। বিষয়টি তাকে জানানো হয়েছে। তবে কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন অবস্থায় কিভাবে ওই পদ শূণ্য দেখিয়ে অণ্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে পদায়ন করা হয়েছে সে বিষয়টি তারা জানেন না। কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতানন্দ দাস বলেন, একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় তাকে বদলী না করে কিভাবে ওই পদ শূণ্য দেখানো হয়েছে সে বিষয়টি তারা বুঝতে পারছেন না। ফেব্রুয়ারি মাসে কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য ছিলো না। আজও সে চলতি দায়িত্বে আছেন। এদিকে একই বিদ্যালয়ে দুজন প্রধান শিক্ষকের পদায়ন নিয়ে শিক্ষকরাও রয়েছেন দোটানায়। কিভাবে এই অফিস আদেশ হলো সে বিষয়টি তারা বুঝতে পারছেন না। একইভাবে অন্ধকারে দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও। তারাও বলছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত।