প্রথিতযশা রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ মারা গেছেন। গত বুধবার আনুমানিক রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি স্বেচ্ছামৃতু্য বেছে নিয়েছেন। শিল্পীর পারিবারিক বন্ধু নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নিপা সারাবাংলাকে বলেন, 'ওনার (সাদি মহম্মদ) মা মারা যাওয়ার পর থেকেই এক ধরনের ট্রমার মধ্যে চলে যান। মানসিকভাবে ঠিক স্বাভাবিক ছিলেন না। মা হারানোর বেদনা সম্ভবত তিনি নিতে পারেননি। এভাবেই চলছিল। গত বুধবার রোজা রাখলেন। ইফতারও করলেন। এরপরই তিনি নীরবে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করছি।' গত বছরের ৮ জুলাই ৯৬ বছর বয়সে সাদি মহম্মদের মা জেবুন্নেছা সলিমউলস্নাহর মৃতু্য হয়। জেবুন্নেছা ১৫ বছর ধরে চলনশক্তিহীন ছিলেন, চলাফেরা করতেন হুইল চেয়ারে। সাদি মহম্মদ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, মায়ের এই শারীরিক অক্ষমতা তাকে পীড়া দিত। মায়ের মৃতু্যর পর তিনি আরও মুষড়ে পড়েন। সাদি মহম্মদের বাবা সলিমউলস্নাহ একাত্তরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। ওই সময় তার মোহাম্মদপুরের বাড়িতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের যাতায়াত ছিল। সেখানে বৈঠক করতেন তারা। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে শহিদ হয়েছিলেন তিনি। তার নামেই মোহাম্মদপুরের সলিমউলস্নাহ রোডের নামকরণ করা হয়। সাদি মহম্মদের ভাই শিবলী মহম্মদ বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য নৃত্যশিল্পী। পরিবারের ইচ্ছায় সাদি মহম্মদ বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে সে পড়ালেখা চালিয়ে যাননি তিনি। ১৯৭৫ সালে বৃত্তি নিয়ে চলে যান শান্তিনিকেতনে। বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রসংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। সেই থেকেই রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে পথচলা শুরম্ন সাদি মহম্মদের। তবে আধুনিক বাংলা গানও করেছেন তিনি। বিভিন্ন নাটক ও সিনেমায় অসংখ্য গানে পেস্নব্যাক করেছেন। রবীন্দ্রসংগীত ও আধুনিক বাংলা গান মিলিয়ে তার অ্যালবামের সংখ্যা পঞ্চাশের বেশি। রবীন্দ্রসংগীতের চর্চা ও প্রসারে সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন সাদি। পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন সেখানে। এর মধ্যে সুরকার হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ২০০৭ সালে, 'আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে' অ্যালবামের মাধ্যমে। ২০১২ সালে চ্যানেল আই আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করে সাদি মহম্মদকে। রবীন্দ্রসংগীতে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি তাকে ভূষিত করে রবীন্দ্র পুরস্কারে।