বাবা ইট ভাটায় কাজ করে সেই ৩০ বছর ধরে, কত কষ্ট করে বাবা দুই ভাইকে যে মানুষ করতাছে তা বলার মত না! বাবার কষ্টের ফল একটু হলেও দিতে পারব এবার মনে হচ্ছে, বাবার কাছ থেকে ১২০ টাকা নিয়ে পুলিশের চাকরীর জন্য আবেদন করেছিলাম ঘাটাইল বাসস্ট্যান্ডের এক কম্পিউটার দোকান থেকে আর সেই ১২০ টাকা দিয়ে যে পুলিশে চাকরী আমার নিজ যোগ্যতায় হয়ে যাবে তা কখনো কল্পনাও করতে পারি নাই। আজ পুলিশের একজন সদস্য নির্বাচিত হয়ে নিজেকে গর্ববোধ মনে হচ্ছে। কথা গুলো কান্না চোখে বলছিলেন টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার জামুরিয়া ইউনিয়নের ঝলক ইট ভাটার শ্রমিক মোশারফ হোসেনের ছেলে সদ্য পুলিশে নিয়োগ পাওয়া বিপ্লব হোসেন। গতকাল বুধবার (১৩ মার্চ) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইন্সের ডিল শেডে ট্রেইনি রিক্রুট পুলিশ কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষার চুড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এসময় ফলাফল ঘোষণা করেন ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাফি। উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল জেলা সহকারী পুলিশ সুপার শরফুদ্দিন আহমেদ, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এড.জাফর আহমেদ সহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা। বিপ্লবের মত গোপালপুর উপজেলার অটো চালক আইয়ুব নবীর ছেলে নাজমুল হোসেনও পুলিশের চাকরী পেয়ে আনন্দে আত্মহরা।নাজমুল খবরের কাগজকে বলেন,জীবনের কষ্ট গুলো হয়তবা দূর হবে এখন। বাবা যখন অটো নিয়ে সকালে বের হয়ে যায় তখন মনে হয় যে এই কষ্টের শেষ হবে কবে। আজ পুলিশের একজন সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর মনে হচ্ছে বাবার কষ্টটা একটু হলেও কমাতে পারবো। নাজমুলের বাবা আইয়ুব নবী খবরের কাগজকে বলেন,ছেলেকে নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলাম,ছেলে কে পড়াশুনা করায়তেছি কিছু করতে পারবেনা কিনা এই ভয়ে। কারণ এখন সরকারী চাকরী নিতে গেলেই টাকা লাগে মানুষের কাছে শুনি। কিন্তু মাত্র ১২০ টাকা দিয়ে যে পুলিশে চাকরী হবে কখনো কল্পনাও করতে পারি নাই। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই এতো সুন্দর সচ্ছ ভাবে চাকরী পরীক্ষা করার জন্য। টাঙ্গাইল পৌরসভার সাকরাইল চরপাড়ার মৃত পুলিশ সদস্য সুরমান আলীর মেয়ে সুমা আক্তার বলেন, মায়ের ইচ্ছে ছিল বাবার মত পুলিশ সদস্য হব, তাই ছেট বেলা থেকে মায়ের কথা অনুযায়ী চলাফেরা করেছি। আজ বাবার মত পুলিশ সদস্য হওয়ায় নিজেকে যোগ্য সন্তন হিসাবে মনে করছি। বাবার যেমন ইচ্ছে ছিল মানুষের সেবা করার তেমনি আমিও সেবা করবো। টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার খবরের কাগজকে বলেন, স্মার্ট পুলিশ গঠন করার জন্য আমরা যোগ্য প্রার্থীদেরকে বাঅচই করেছি। আর এই কার্যক্রম চালু হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারী মাসের ১৬ তারিখে। নিয়োগ বোর্ডের যে সদস্য ছিল সবাই একদম সচ্ছ ছিল। যারা চান্স পেয়েছে সবাই যোগ্য প্রার্থী। মাত্র ১২০ টাকায় নিয়োগ পেয়েছে। কোন প্রকার সুপারিশ ও লেনদেনের সুযোগ ছিল না। প্রথমে ৪ হাজার ২শত জন আবেদন করেছিল, পরে ৩৮০০ জন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছিল। সেখান থেকে লিখিত পরীক্ষায় বাছাই হয়েছিল ১ হাজার ৫৮ জন। লিখিত পরীক্ষার ফলাফলে ৩০২ জন থেকে মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলে চুড়ান্ত ভাবে চান্স পেয়েছে ৯০ জনকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করেছি এবং আপেক্ষিক ভাবে ১৩ জনকে রেখেছি। মোট ১০৩ জনকে আমরা নিয়োগ দিব প্রাথমিক ভাবে।