জন্মভিটার ছায়াঘেরা পরিবেশ আর শৈশবের স্মৃতির কথা জার্মান প্রবাসী মেয়েদের কাছে বলার পর মেয়েরা বায়না ধরেন, বাবার জন্মভিটা দেখতে আসার। মেয়েদের দাবি পূরণে জার্মান থেকে বাংলাদেশে আসেন নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ডিজাইনার শংকর ব্যানার্জী। সাথে ছিলেন তার মেয়ে জার্মানির একটি টেলিভিশনের সাংবাদিক শকুন্তলা ব্যানার্জী, শিল্পী শর্মিলা ব্যানার্জী এবং ভাইয়ের মেয়ে চিকিৎসক দেবী ব্যানার্জী ও জামাতা লুকাস ওয়ালপট। বাংলাদেশে আসার পর সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্তর আগ্রহে প্রথমে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলায় মনসা মঙ্গল কাব্য গ্রন্থের রচয়িতা বিজয় গুপ্তের প্রতিষ্ঠিত মনসা মন্দির পরিদর্শন করেন। শুক্রবার সকালে একুশে পদক প্রাপ্ত সাংবাদিক অজয় দাসগুপ্ত বলেন, গত ১২ মার্চ বিকেলে শংকর ব্যনার্জী তার মেয়েদের নিয়ে পৈত্রিক ভিটা বরিশালের বাবুগঞ্জের রহমতপুর পরিদর্শন করেন। শংকর ব্যানার্জী তার নিজ ভিটায় যখন এসে দাঁড়িয়েছেন, তখন তিনি তার কন্ঠে গেয়ে ওঠেন-‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ এসময় ভিন্ন এক আবেগ অনুভূতি তার চোখেমুখে ফুটে ওঠে। তার মেয়েরাও পূর্ব পুরুষের ভিটায় দাঁড়িয়ে অনেকটা আপ্লুত হয়ে পরেন। অজয় দাসগুপ্ত আরও বলেন, জন্মভিটায় এসে স্মৃতিচারণা করে জার্মান প্রবাসী নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ বর্তমানে ৮৫ বছর বয়সের শংকর ব্যানার্জী বলেছেন, ২০০৩ সালের দিকে কাজের সুবাদে তিনি একবার চট্টগ্রামে এসেছিলেন। সেখানে তার এক বন্ধুর সাথে কথার প্রসঙ্গে বরিশালে তার জন্মভিটার কথা জানান। ওইসময় তার বন্ধুর প্রবল আগ্রহে তিনি বরিশালে এসেছিলেন। এরপর খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, এটা বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর এলাকায় পরেছে। পরে সেখানে এসে স্থানীয়দের সহায়তায় নিজের জন্মভিটা শনাক্ত করেন। বর্তমানে এই পরিবারের ৫০ একরেরও বেশি জায়গাসহ বসত বাড়িতে বরিশাল আঞ্চলিক হর্টিকালচার সেন্টার অবস্থিত। ওই জমি অধিগ্রহণ করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে কৃষির বিভিন্ন প্রদর্শনী খামার। শংকর ব্যানার্জীর উদ্বৃতি দিয়ে সাংবাদিক অজয় দাসগুপ্ত জানান, ১৯৪৭ সালের ২৩ আগস্ট তার (শংকর) পরিবার কলকাতায় গিয়ে আর ফেরেনি। তার বাবা প্রফুল্ল ব্যানার্জী এলাহাবাদ কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও বেশ কিছুদিন অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৬০ সালে পড়াশোনার জন্য জার্মানিতে পাড়ি জমান শংকর। পড়াশোনা শেষ করে সেখানেই জার্মান মেয়ে গ্যাব্রিয়েলকে বিয়ে করে থিতু হন। প্রথমে টেক্সটাইল মিল করে ব্যবসা শুরু করেন। পরে তিনি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ডিজাইনার হিসেবে পেশা বেছে নিয়েছেন। জার্মানি ছাড়াও বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে তিনি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ডিজাইন করেছেন। শংকর ব্যানার্জীর এখনো এই দেশ ও মাটির প্রতি গভীর মায়া হৃদয়জুড়ে। তার কথায় সেটা ফুটে উঠেছিল জানিয়ে সাংবাদিক অজয় দাসগুপ্ত বলেন শংকর ব্যানার্জী বলেছেন, এ দেশের জন্য তিনি কিছু করতে চান, এজন্য তার মনটা সবসময় আকুলি-বিকুলি করে। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে তার একটি প্রস্তাব গৃহীতও হয়েছিল। বরিশাল সিটি করপোরেশনে ওয়েস্টম্যানেজমেন্ট থেকে বিদ্যুৎ তৈরির একটি প্রস্তাব নিয়েও তার সাথে আলোচনা চলছে। শংকর ব্যানার্জীর মেয়ে শকুন্তলা ব্যানার্জী পূর্বপুরুষের ভিটায় ফেরার অনুভূতি জানিয়ে বলেছেন, এ এক ভিন্ন অনুভূতি, যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম এই জায়গাটায় আসব, এই মাটি স্পর্শ করব। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এটা জীবনের শ্রেষ্ঠতর এক মুহুর্ত। আরেক মেয়ে শর্মিলা ব্যানার্জী বলেছেন, পিতৃপুরুষের এই জায়গা যে এত সুন্দর, এত মনোরম, সেটা কল্পনায়ও ছিল না। এটা কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। আমরা বারবার এখানে ফিরতে চাই, পূর্বপুরুষদের স্পর্শ অনুভব করতে চাই।