কিশোরগঞ্জের ভাটির হাওর অঞ্চল উপজেলার নিকলী বিস্তৃর্ণ হাওর, যতদুর চোখ যায় যেন হাওর আর হাওর। ১৩টি উপজেলা নিয়ে গঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলা। এর মধ্যে বাজিতপুর, নিকলী, কিশোরগঞ্জ সদর, কটিয়াদী, করিমগঞ্জ, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, কুলিয়ারচরের কিছু অংশ। এই কয়েকটি উপজেলা নিয়ে কৃষকের এক ফসলী জমিতে ফসল উৎপাদন ধান, ভুট্টা, গম, বাদাম, ক্ষিরা, মিষ্টিকুমড়া, এছাড়া গরু মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাঁস নিয়ে কার্তিক মাস হতে জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত জীবিকার প্রয়োজনে হাওরে কুড়েঘরে বসত করে জিরাতিরা। লোকালয় থেকে বহুদূর এই হাওর অঞ্চল। লক্ষ লক্ষ কৃষক শ্রেণির লোকের বসবাস। এই হাওর অঞ্চলের জিরাতির সঙ্গে মিশে আছে অনেক কষ্টে গাথা কাহিনী। বাপ-দাদা থেকে শুরু করে পূর্ব পুরুষেরাও এই জীবিকা নির্বাহ করে কৃষি জমির উপর নির্ভর করে যায়। অনেক সময় বিবি যখন ভাগ হয়ে যায় যেমন খরা, শিলাবৃষ্টি, বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়া তাদের কথা কেউ মনে রাখেন না। তখনি তাদের জীবনটা হয়ে এক দুর্বিষহ। তাদের মাথায় থাকে ঋণের বোঝা, ঋণের বোঝা সইতে না পেরে রাতের আধারে তাদের স্ত্রী সন্তান নিয়ে শহরে গিয়ে জীবন বাঁচায়, আবার স্বপ্নগড়ি আস্থার রহমতে পানি শুকাইলে আবার চলে যাবে হাওরে নিজেও বাঁচতে কিছুটা ঋণ ও পরিশোধ করবে। বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে জিরাতিরা সন্ধ্যা নামলে একঘোরে স্যাতসেতে পরিবেশ ও মশার কামড়ের মধ্যে ঘুমোতে হয়। নেই কোনো তেমন শীতের কাপড় তবুও জীবন চলছে। তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর না থেকে আল্লাহর উপর ভরসা করে চলতে হয়। চৈত্র বৈশাখ মাসে প্রচন্ড ঝড়,বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত কখনো ভরসার দয়াময় আল্লাহ। হাওরের জিরাতিদের সাথে আলাপ করলে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি ভয় আতঙ্কে থাকে। যখন আকাশ থেকে বজ্রপাত হয়। তাদের পোকা-মাকড় সহ গরু- ছাগল, বেরাবেরী রোগ কম হতো। কিন্তু বর্তমানে তা উল্টো হয়ে দাড়িয়েছে। কয়েকজন কৃষকদের সাথে আলাপ করলে জানা যায়, জিরাতিদের অনেক সুপেয় পানি ও বজ্রপাতের রোধের জন্য সরকারকে ভালো ব্যবস্থা নিলে বোরো মৌসুমের ইরি বোরো ধানের জন্য সার ও বীজ প্রতিবছর দিলে হাওরে লক্ষ লক্ষ টন ধান উৎপাদন হবে। এই বিষয়ে নিকলীর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন কৃষি উন্নয়নের বিষয়ে জানতে গেলে কৃষকদের কাছে যেতে হবে বলে উল্লেখ করেন।