গলাচিপায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট, খাদ্যের অভাবে অনেক কৃষকই গরু-মহিষ বিক্রি করে পেশা বদল করছেন অনেকে। এদিকে চাহিদার তুলনায় ঘাস উৎপাদন কম হওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। উপজেলায় প্রায় দুই লাখ গরু-মহিষের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৫৭০ মেট্রিক টন খাদ্য দরকার। অথচ উৎপাদন মাত্র ২২০ মেট্রিক টন, প্রতিদিন ঘাটতি ৩৫০ মেট্রিক টন ঘাসের। বন বিভাগের সহায়তা পেলে উপকৃত হবে বলে জানান গবাদি পশুর মালিকরা। গবাদি পশুর মালিকরা জানান, গলাচিপা উপজেলার কৃষকরা আমন ধান ও রবিশষ্য চাষের পাশাপাশি গরু-মহিষ পালন করে। নিজস্ব খামার ও বনভ’মি এসব গবাদি পশুর খাদ্যের যোগান দিয়ে আসছিল। গত এক যুগ আগেও এ এলাকায় গো-খাদ্যের কোন সঙ্কট ছিল না। কিন্তু এক দশক ধরে দক্ষিণাঞ্চলের অনাবাদী ও পরিত্যক্ত ভূমিতে রবিশষ্য ও সবজির আবাদ বৃদ্ধি হওয়ায় গবাদি পশুর খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ি বাধের পাশেও এখন তরমুজ বা আলু চাষ হচ্ছে। এছাড়া প্রতিবছর আশি^ন মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ঘাসের সঙ্কট এমনিতে একটু বেশি থাকে। এসময় ক্ষেতে নানা ধরণের ফসল থাকে। তাই খোলা জায়গা না থাকায় গরুর পাল বা মহিষের বাথান চড়ানো সম্ভব হয় না। গলাচিপার পূর্ব গোলখালী গ্রামের কবির তালুকদার বলেন,‘ আমার বাথানে ১১টি মহিষ ছিল। ঘাসের অভাবে গত বছর সব বেইচ্চা দিছি। ঘাস না খাইতে পাইররা মইষগুলা রোগা হয়ে গেছিল। নিজের ধারেই খারাপ লাগত। তাই পশুগুলারে কষ্ট না দিয়া একসাতে সব বেইচ্চা দিছি।’ হোগলবুনিয়া গ্রামের মস্তফা কামার বলেন, ‘আমার বথানে ৫৬টি মইষ ও ৪৮টি গরু ছিলো। ঘাসের অভাবে খাওয়াতে না পাইররা ১৮মহিষ ও ১৫টি গরু বিক্রি করছি। বাকি মহিষ গরুর ঘাস জোগার করাই এখন কঠিন। আগে নিজের জমির খরকুটা খাওয়াতাম। বছরের অধিকাংশ সময়ই বনাঞ্চলে রাখতাম কিন্তু ্এখন বনাঞ্চলে গবাদি পশু প্রবেশ করতে দেয় না।’ গলাচিপা উপকূলীয় বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, উপকূলীয় এলাকাগুলোতে মোট১৬টি ম্যানগ্রোভ বনে ১৫ হাজার ২৯০ দশমিক ১৫ একর জায়গায় সবুজ বেষ্টনি রয়েছে। যেসব এলাকার গাছ প্রাপ্ত বয়স্ক হয়েছে সেখানে গবাদি পশু বিচরণ করলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু রিজার্ভ ফরেস্টে এমন সুযোগ দেওয়ার বিধান নেই। এ এলাকায় যেসব ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট রয়েছে তার সবগুলোই রিজার্ভ ফরেস্টের আওতায়। তাই বন আইনে ব্যক্তিগত খামারিদের গবাদি পশু চড়ানোর সুযোগ এখানে নেই। গলাচিপা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সজল দাস বলেন, রেকর্ড অনুযায়ী গলাচিপা উপজেরায় গরুর সংখ্যা ১ লাখ ৭৫ হাজার, মহিষের সংখ্যা ১৬ হাজার এবং ছাগল ৬০ হাজার ও ভেড়া সাড়ে চার হাজার। এসব গবাদি পশুর জন্য যদি প্রতিদিন গড়ে তিন কেজি ঘাস খাদ্য হিসেবে ধরি তাহলে কমপক্ষে ৫৭০ মেট্রিক টন ঘাস প্রয়োজন। কিন্তু প্রয়োজনের চেয়ে ঘাস উৎপাদন কম থাকায় খাদ্য সঙ্কট থেকেই যায়। উপজেলায় উন্নত জাতের ঘাস উৎপাদন হয় ১৫০ একর জমিতে। এ ছাড়া লোকাল পর্যায়ে ঘাস চাষ হয় ৬৫০ একর জমিতে । অর্থাৎ মোট ৮০০ একর জমিতে ঘাস চাষ করা হয়। এলাকায় প্রতিদিন উৎপাদন হয় মাত্র ২২০ মেট্রিক টন। এদিকে প্রতিদিন ঘাসের ঘাটতি রয়েছে ৩২০ মেট্রিক টন যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। আর এসব বিষয় মাথায় রেখেই কৃষকদের ঘাস চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। অপরদিকে চৈত্র মাস কেটে গেলে ঘাসের সঙ্কট আর থাকবে না। কৃষকরা উপকূলীয় এলাকাগুলোর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে গবাদি পশু বিচরণ করার সুযোগ পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছন।