নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারী কলেজ। এ কলেজের পিছনে রয়েছে অনেক ইতিহাস। কলেজ চত্তরে রয়েছে স্বাধীনতার লাল রক্ত। সেই কলেজের অধ্যক্ষ ড.আতিয়ার রহমান। তিনি জামায়াত পরিবারের সন্তান। নিজেও জামায়াতে ইসলামী রাজনীতির সাথে জড়িত। সম্প্রতি তিনি কলেজে জামায়াত ও বিএনপি পন্থী শিক্ষকদের নিয়ে কলেজে মনগড়া শাসন শুরু করেছেন। এর ফলে কলেজে শিক্ষকরা হয়ে পড়েছে দুইভাগে বিভক্ত। প্রতিদিন এ নিয়ে কলেজে ঘটছে কোন না ছোট খাটো ঘটনা। সম্প্রতি তিনি ৭ মার্চ পালনে নিজেকে আড়াল করে রাখেন। কারণ ৭ মার্চ পালন করতে হলে সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করতে হবে। দিতে হবে জয় বাংলা স্লোগাণ। যা জামায়াত এবং বিএনপি পন্থী শিক্ষকরা কোনক্রমে সহ্য করতে পারবেন না। তাই মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর নাম মুখে না নিতে কলেজ অধ্যক্ষ ওইদিন বিএনপি মনা অন্য একজন শিক্ষককে দিবসটি পালনের দায়িত্ব দিয়ে তিনি অনুপস্থিত থাকেন।
সেদিন কলেজে দিবসটি পালন করতে গিয়ে ঘটে নানান ঘটনা। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধুর নাম সেখানে মুখে উচ্চারণ করা হয়নি। এ সময় কামাল হোসেন নামে এক শিক্ষক এসে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দেন। এতে করে অধ্যক্ষের পক্ষে থাকা শিক্ষকরা শুরু করেন কানাঘুষা। এক পর্যায় সেখানে বিক্ষোভ করে কলেজ শাখা ছাত্রলীগসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলাকালে জামায়াত সমর্থিত এক শিক্ষিকা এসে এক ছাত্রের গালে থাপ্পর মারে। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।পরদিন কলেজ অধ্যক্ষ এ সকল ঘটনার বিষয়ে কোন ধরনের তদন্ত কমিটি বা সুরাহার ব্যবস্থা না করে তিনি উল্টো জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দেয়া শিক্ষক কামাল হোসেনকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেন। এতে করে কলেজে আরো বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়।
ওই সকল সমস্যার সমাধান টানতে ২০ মার্চ কলেজে যান সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিন, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবু, সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হকসহ অন্যান্য নেতারা। তারা অধ্যক্ষের কক্ষে বসলে সেখানে চরম বিশৃংখলা দেখা দেয়। অধ্যক্ষের পক্ষের ৪ জন শিক্ষিকা একই সাথে উচ্চ স্বরে চিল্লাচিল্লি করতে থাকেন। এ সময় কোহিনুর নামে একজন শিক্ষিকা বলেন জয় বাংলা বলতেই হবে এমন তো কোন কথা নেই। তাছাড়া এটা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। ওই শিক্ষিকার মুখে এমন কথা শুনে সেখানে আওয়ামী লীগের নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। আজ আওয়ামী লীগ সরকার দেশ শাসন করছেন। দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তারপরও কলেজ শিক্ষিকা মহান নেতা বঙ্গবন্ধুকে ছোট করে দেখলো। যা কোন ক্রমে মেনে নেয়া যায় না। এ সময় অধ্যক্ষ ছিল নিরব।
আমাকে কলেজের ইংরেজি শিক্ষক প্রফেসর কামাল হোসেন বলেন, গত ৭ মার্চ ছিল জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস। ওই দিন জামায়াত পন্থি কলেজ অধ্যক্ষ ড. আতিয়ার রহমান অনুষ্ঠান এড়াতে আরেক শিক্ষক বিএনপি পন্থি গোলজার হোসেনকে দায়িত্ব দিয়ে সড়ে পড়েন। অনুষ্ঠানের দিন দায়িত্ব নেয়া শিক্ষক জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু না বলায় সেখানে উত্তেজিত হয়ে ওঠে ছাত্রলীগসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন কলেজ অধ্যক্ষ দোষী শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ধরনের পদক্ষেপ না নিয়ে আমাকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করেন।এতে ছাত্র ও অন্যান্য শিক্ষকরা ক্ষুব্দ হয়ে ওঠেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা বলেন,অধ্যক্ষ কোন কারণ ছাড়াই ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে রেখেছেন। তিনি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ফি নেয়ার পরও তা করছেন না। তিনি সমান চোখে সবাইকে দেখেন না। ফলে শিক্ষকদের মধ্যে এখন দুটি গ্রুপ। শিক্ষকদের মধ্যে যদি গ্রুপ তৈরি হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা কি শিক্ষা পাবে। সৈয়দপুর পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবু ও সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, অধ্যক্ষ হলেন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে জড়িত। তাই তিনি এ সরকারকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। সুকৌশলে তিনি জামায়াত ও বিএনপি পন্থী শিক্ষকদের একত্রিত করে কলেজ নিজের মত পরিচালনা করেন। যা অনিয়ম ও নিন্দনীয় কাজ। তারা এ ধরনের অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি করেন। সাথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে অসন্মান করায় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়।