গাজীপুরের কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে আপন মামা ও ভাগিনা নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের নামিলা গ্রামের মতিনের মোড় ও একই ইউনিয়নের বড়িবাড়ি চৌরাস্তা এলাকায় অপরজন নিহত হয়েছে। তারা হলো পাশ্ববর্তী ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার চাকুয়া গ্রামের মৃত মোঃ মাসুদের ছেলে মোঃ নাসির (২৫) এবং অপরজন একই থানার পাঁছাহার এলাকার মোঃ আবু সাইদের ছেলে ও নাসিরের মামা মোঃ হৃদয় (২২)। গণপিটুনি সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ হত্যাকান্ডের পক্ষে বিপক্ষে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের নামিলা গ্রামে মোঃ মোসলেম উদ্দিনের বাড়ি ও মোঃ মোস্তফার বাড়ির মাঝখানের পুকুরের পাড় দিয়ে ৫—৬ জন লোক গরু চুরির উদ্দেশ্যে প্রবেশ করছিল। এ সময় ঝোপের আড়ালে বসে থাকা স্থানীয় পাহাড়াদারদের একটি দল তাদেরকে ধাওয়া করে ডাক চিৎকার দিলে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে এসে ধাওয়া করে একজনকে আটক করে। এ সময় উত্তেজিত জনতা গণপিটুনি দিয়ে কয়েকদফা জিজ্ঞাসাবাদ ও ব্যাপক মারধর করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। একই সময় কিছু এলাকাবাসী অন্য একজনকে ধাওয়া করলে পার্শ্ববর্তী বড়িবাড়ি চৌরাস্তা মোড়ের একটি ধানক্ষেতে সে লুকিয়ে পড়ে। পরে উত্তেজিত জনতা তাকে ধান খেত থেকে খুঁজে বের করে পিটুনি দেয়। পরে তাকেও কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ ও মারধর করলে ঘটনাস্থলেই তারও মৃত্যু হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরণের বড় কাচি, প্লাস,কাটার ও রশি পাওয়া যায় বলে তারা দাবি করেন। সিংহশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার পারভেজ জানান, সম্প্রতি ওই এলাকায় ব্যাপকহারে গরু চুরি বেড়ে যাওয়ায় গ্রামবাসী নিজ নিজ মহল্লায় রাতে পাহারা বসিয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতে একজন কৃষকের গরু চুরি করতে কয়েকজন চোর আসেন। গ্রামবাসী গরু চুরির বিষয়টি টের পেয়ে একজোট হয়ে দুইজনকে গণপিটুনি দেয়। এতে নামিলা গ্রামে একজন ও পাশ্ববর্তী বড়িবাড়ি গ্রামের ধানক্ষেতে আরেকজন নিহত হয়। কাপাসিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বকর মিয়া জানান, গণপিটুনিতে নিহত একজনকে নামিলা ও অপরজনকে বড়িবাড়ি থেকে উদ্ধার করে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ময়নাতদন্তের জন্য তাদের লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাদের স্বজনরা লাশ শনাক্ত করেছে এবং তাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই এলাকার গ্রাম পুলিশ মোঃ জালালউদ্দিন বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে কাপাসিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা (নং—২৬/০৩/২৪) হয়েছে।