আসন্ন ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে ঘরমুখী এবং পরবর্তীতে কর্মস্থলমুখী বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্য ভ্রমণে রাষ্ট্রীয় সড়ক, নৌ ও আকাশ পরিবহন সংস্থাগুলো এবারো অনেকটা নির্বিকার। ফলে এ অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীকে পরিবার পরিজনের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করাসহ কর্মস্থলে ফিরতে বেসরকারি সেক্টরের কাছে জিম্মি থাকতে হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, এসব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা দেশের জনগনের টাকায় সারাজীবন বেতন-ভাতা গ্রহণ করলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সময়ে তাদের স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছা অন্ধত্বে ভোগেন। ফলে জনগনের দুর্ভোগের সীমা ছাড়িয়ে গেলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই নির্বিকার থাকছে। অথচ ঈদের আগে ও পরে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থাগুলো সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে কিছু বাড়তি যানবাহনের ব্যবস্থা করলে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তনের পাশাপাশি ঘর এবং কর্মস্থলমুখী বিশাল জনগোষ্ঠীর কিছুটা হলেও নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হতো। পাশাপাশি বেসরকারি পরিবহন সেক্টরের স্বেচ্ছাচারিতা থেকেও মানুষের রেহাই মিলতো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাসের অভাবে এবারো রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) বরিশাল ডিপো থেকে আসন্ন ঈদ-উল ফিতরের আগে ও পরে কোন বিশেষ বাস সার্ভিস থাকছেনা। ডিপোটিতে ৭০টি যাত্রীবাহী বাসের মধ্যে ‘অচল ও চলাচল অযোগ্য’ ১৬টি ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। অবশিষ্ট ৫৪টি বাসের ৫২টি বরিশাল-ঢাকা ছাড়াও বিভাগীয় সদর থেকে খুলনা, যশোর, রংপুর, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করছে। যেকারণে আসন্ন ঈদের আগে ও পরে বাড়তি যাত্রী পরিবহনের মত কোন বাস ডিপোটির হাতে নেই। সূত্রমতে, দেশের অন্যতম লাভজনক এ বাস ডিপোটিতে গত দুইবছরেও কোন নতুন কিংবা পুরাতন যাত্রীবাহী বাস সরবরাহ করেনি সংস্থাটির সদর দপ্তর। ফলে ১৮টি বাতানুকূল ও ৩৬টি দীর্ঘদিনের পুরনো বাস দিয়েই যাত্রী সেবা করছে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থাটি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিসি’র বরিশাল ডিপোর উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের বাড়তি কোন গাড়ী না থাকলেও বিদ্যমান বাস দিয়েই অতিরিক্ত ট্রিপে যাত্রী পরিবহনের চেষ্টা করবো
অপরদিকে রাষ্ট্রীয় নৌ-বাণিজ্য সংস্থা বিআইডব্লিউটিসি করোনা মহামারীর আগে থেকেই যাত্রী সেবাখাতে হাত গোটানোর পর থেকে গত চার বছরেও ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে দেশের একমাত্র অভ্যন্তরীণ রকেট স্টিমার সার্ভিসটি আর চালু করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। ফলে আসন্ন ঈদ-উল ফিতরের আগে ও পরে রাজধানীসহ চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে চাঁদপুর হয়ে বরিশাল অঞ্চলের যাত্রীরা বেসরকারি নৌযান মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতার কাছেই জিম্মি হয়ে পরার আশঙ্কা করছেন সচেতন যাত্রীরা। সূত্রগুলোর দাবি, গত ২০ বছরে রাষ্ট্রীয় নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানটি বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটের কথা বলে সরকারি শতাধিক কোটি টাকা ব্যয়ে উপকূলীয় দুইটি নৌযানের পুনর্বাসন ছাড়াও ‘এমভি বার আউলিয়া’, ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’ এবং ‘এমভি আইভি রহমান’ নামের তিনটি নতুন নৌযান সংগ্রহ করেছে। কিন্তু ২০২১ সালের মে মাস থেকে বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে উপকূলীয় স্টিমার সার্ভিসটি বন্ধ রয়েছে।
এছাড়াও রাষ্ট্রীয় আকাশ পরিবহন সংস্থা (বিমান) পদ্মাসেতু চালুর পর থেকে যাত্রী সংকটের ধুয়া তুলে বরিশাল সেক্টরের নিয়মিত ফ্লাইট সপ্তাহে তিনদিনে হ্রাস করে। ব্যাপক যাত্রী চাহিদার পরেও একবছর ধরে বরিশাল সেক্টরে ফ্লাইট বাড়ানোর কথা বলা হলেও আজ ৩১ মার্চ থেকে মাত্র একটি ফ্লাইট বৃদ্ধি করা হচ্ছে। অথচ বরিশাল-ঢাকা আকাশপথে ৩২শ’ টাকার টিকিট এখন বিমান বিক্রি করছে আট হাজার ছয়শ’ টাকা করে। বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আতিকুর রহমান বলেন, আসন্ন ঈদ-উল ফিতরের আগে ও পরে সরকারি আকাশ পরিসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বরিশাল সেক্টরের যাত্রীরা। এ ব্যাপারে বিমানের বরিশাল সেলস অফিসের জেলা ব্যবস্থাপকের সাথে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সেলস কাউন্টারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আসন্ন ঈদ-উল ফিতরের আগে ও পরে বরিশাল সেক্টরে কোন বিশেষ ফ্লাইট নেই। তবে অপর একটি সূত্র থেকে জানানো হয়েছে, ঈদের আগে আগামী ৮ ও ১০ এপ্রিল বরিশাল সেক্টরে দুইটি বিশেষ ফ্লাইট বরিশাল-ঢাকা আকাশ পথে চলবে।