আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখা, উন্নত পুলিশি সেবার লক্ষে ক্রাইম কন্ট্রোল, ট্রাফিক ও থানা কন্ট্রোল এবং সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিংয়ের জন্য ‘ইন্টিগ্রেটেড কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার’র উদ্বোধণ করা হয়েছে। ফলে বিভাগীয় শহর বরিশালের পুরো নগরী এখন পুলিশি নজরদারির মধ্যে চলে এসেছে। আর এ উদ্যোগটি গ্রহণ করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ জিহাদুল কবির বিপিএম সেবা, পিপিএম।
নগরীর বান্দরোডস্থ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের তৃতীয় তলায় ২ হাজার ৫০৮ স্কয়ার ফুট আয়তনের একটি কক্ষে স্থাপিত ইন্টিগ্রেটেড কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার থেকে ২৬০টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা নগরীকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এর আগে মেট্রোপলিটন এলাকায় নিয়োজিত পুলিশ অফিসার ও ফোর্সের কার্যক্রম নজরদারি করাসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র নজরদারির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন পুলিশ কমিশনার মোঃ জিহাদুল কবির। সেইলক্ষ্যে মহানগরী গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ২৬০টি উন্নত সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও দক্ষ জনবল নিয়োগ করা হয়েছে।
সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ সেল তিনভাবে কাজ করছে জানিয়ে পুলিশ কমিশনার মোঃ জিহাদুল কবির বলেন, প্রথমত এ সেন্টার থেকে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে বরিশাল মহানগরী এলাকার আইন-শৃঙ্খলা চিত্র সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। এছাড়াও মহানগরী এলাকায় অনুষ্ঠিত যেকোনো ধরণের জনসমাবেশের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষা করা; চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধীকে চিহ্নিত করণ, পূর্বে ঘটে যাওয়া অপরাধসহ আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কিত প্রকৃত লাইভ ভিডিও চিত্র ধারণ ও সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, স্থাপিত সিসি ক্যমেরার মাধ্যমে সহজেই বরিশাল মহানগরীর ব্যস্ততম সড়কের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও যানজট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তাৎক্ষণিকভাবে যানজট নিয়ন্ত্রণে বাস্তবসম্মত নির্দেশনা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। এ লক্ষে সেন্টারে একজন ট্রাফিক সাব ইন্সপেক্টর নিয়োগ করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনসহ দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে এ সেল কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
তৃতীয়ত, স্থাপিত সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের চারটি থানা পুলিশের সেবা দান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে। বিশেষ করে ডিউটি অফিসারের কক্ষ, গারদ খানায় আসামিদের বিষয়টি নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।
পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, অপরাধীরা এখন ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অপরাধ করছে। বাস্তবতা হলো এ অপরাধ দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই এ কমান্ড সেন্টারে স্থাপিত আইসিটি অ্যান্ড মিডিয়া সেলে একঝাঁক দক্ষ জনবলের মাধ্যমে ফেসবুক, ইউটিউবের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় যেকোনো ধরনের গুজব প্রতিরোধ এবং অনলাইন ভিত্তিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য ২৪ ঘন্টা সাইবার পেট্রোলিং করা হচ্ছে। ফেসবুক, ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বরিশাল সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হলে তা সাইবার পেট্রোলিং টিমের নজরে চলে আসছে। পাশাপাশি এ সেন্টার থেকে সার্বক্ষণিকভাবে বরিশাল সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদ পর্যবেক্ষণ এবং প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, এছাড়া ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার’ থেকে অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করার লক্ষে দক্ষ জনবলের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে বিদ্যমান সব ইউনিটসহ অপারেশনাল ফোর্সের সাথে যোগাযোগের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে এ সেন্টার থেকে যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিসহ স্বাভাবিক সময়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলের প্রকৃত তথ্য জানা, ফোর্স প্রেরণ, নিয়ন্ত্রণ এবং সংশ্লিষ্ট সবার সাথে সহজে তথ্য আদান প্রদান করা সম্ভব হয়েছে।
গত ৩১ মার্চ দুপুরে অত্যাধুনিক কমান্ড সেন্টারের উদ্বোধণ করেছেন পুলিশ কমিশনার মোঃ জিহাদুল কবির। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পূর্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় পুলিশ কমিশনার বলেছেন, নাগরিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সহযোগিতায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ তার সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করে নাগরিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। ‘ইন্টিগ্রেটেড কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার’ হবে এ প্রচেষ্টার অন্যতম হাতিয়ার।
উদ্বোধণী অনুষ্ঠানের অন্যান্যদের মধ্যে, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ফিন্যান্স) হাসান মোঃ শওকত আলী, উপ-পুলিশ কমিশনার (সিএসবি) অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদার, উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোঃ আলী আশরাফ ভূঞা, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোঃ ফজলুল করিম, সহকারী পুলিশ কমিশনার (স্টাফ অফিসার টু পুলিশ কমিশনার) প্রণয় রায় উপস্থিত ছিলেন।