সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগে দুই মাসব্যাপী শুরু হয়েছে মধু আহরণ মৌসুম। সোমবার (১ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া এই মধু আহরণ মৌসুম চলবে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত। সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জে থেকে পাশ-পারমিট নিয়ে আজ সোমবার নৌকায় করে দলবেঁধে মধু আহরণ মৌসুমের শুরুতে ম্যানগ্রোভ এই বনে গেছেন প্রথম দিনে কয়রার ৫ শাতাধিক মৌয়ালরা। এপ্রিলের শুরুতেই সুন্দরবনে গরান ও খলিশা গাছের ফুলের মধু সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। গরান ও খলিশা ফুলের মধু ছাড়াও বিশ্বঐতিহ্য এলাকা (ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড) সুন্দরবনে মে মাসজুড়ে থাকে কেঁওড়া ও ছইলা ফুল। বিভিন্ন গাছের ফুৃলের মৌচাক থেকে পর্যায়ক্রমে মধূ সংগ্রহ করবেন মৌয়ালরা। এর পর জুন মাসে শুরু হয় গেওয়া ফুলের মধু আহরণ। তবে, জুন মাস থেকে সুন্দরবনের সব ধরণের জলজ ও বনজ সম্পদ আহরনে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় গেওয়ার মধু সংগ্রহ সম্ভব হয়না। এবার বৃষ্টির কারনে সুন্দরবনের গাছে পর্যাপ্ত ফুল ফোটায় চলতি আহরণ মৌসুমে মধু সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা সুন্দরবন বিভাগ। সুন্দরবন বিভাগ ও মৌয়ালরা বলছে, গোটা সুন্দরবনে মধু আহরণের জন্য ১৫ মার্চ থেকে বন বিভাগ পারমিট (অনুমোতি) দেয়া হলেও সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের মূলত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে গরান ও খলিশা পর্যাপ্ত ফুল না ফোটায় গত কয়েক বছর ধরে মৌয়ালরা মধু আহরণে ১৫ দিন পিছিয়ে বন বিভাগ থেকে পাশ-পারমিট নিচ্ছেন। এবছর সুন্দরবন পশ্চির্ম বিভাগে মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ শ কুইন্টাল। আর মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ শ ৫০ কুইন্টাল। কয়রা উপজেলার ৪নং কয়রা গ্রামের মৌয়াল নুরুল ইসলাম ও মঠবাড়ি গ্রামের মৌয়াল রবিউল ইসলাম জানান, গতবছর তাদের দলের প্রত্যেক সদস্য দুই মণ করে মধু পেয়েছিলেন। পাস সংগ্রহ, সরকারি রাজস্ব এবং খাওয়া খরচ মিলিয়ে মৌসুমে তাদের প্রতিজনের খরচ হয় ১২ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর দুই মণ মধু বিক্রি করে একেকজন পেয়েছিলেন ৬০ হাজার টাকা। এবছরও আগাম বৃষ্টি হওয়ায় আশানুরুপ মধু পাবেন বলে মনে করছেন তারা। তাদের এলাকার সব মৌয়ালরা মধু সংগ্রহে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত মেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করছে মৌয়ালরা। মধু আহরণ মৌসুমের শুরুতে নৌকা মেরামত, মহাজনের কাছ থেকে দাদন নেওয়াসহ সকল প্রস্তৃতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করে বনে গেছেন সকল মৌয়ালরা। তাদের একেক দলে ১০ থেকে ১২ জন করে মৌয়াল রয়েছেন। এদেরমধ্যে কেউ ১৫ বছর কেউ ২০ বছর ধরে মধু আহরণ করছেন। বানিয়াখালী স্টেশ কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, তার স্টেশন হতে প্রথম দিনে ১৬ টি নৌকার বিপরিতে পাশ দেওয়া হয়েছে। পাশ দেওয়ার পুর্বে ১ এপ্রিল সকাল ৯ টায় স্টেশন চত্বরে এক সচেতনতামুলক সভা করে সঠিক পদ্ধতিতে মধু আহরন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে মৌয়ালদের। কয়রার ৫নং কয়রা গ্রামের মধু ব্যবসায়ী বিল্লা শেখ বলেন, গতবছর তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। এবছরও একই পরিমাণ বিনিয়োগের আশা আছে। গতবছর প্রায় ১৪ মণ মধু বিক্রি করেছি। প্রতিকেজি মধু খুচরা বিক্রি হয়েছে প্রকার ভেদে ১হাজার টাকা থেকে ১হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। সুন্দরবনের সবচেয়ে উৎকৃষ্টমানের যে মধু সেটা আসে খলিসা এবং গরাণ ফুল থেকে। খুলনা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষ (এসিএফ) এজডএম হাছানুর রহমন বলেন, পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগে খলিসা এবং গরাণ গাছে ফুল দেরিতে আসায় মধু সংগ্রহের নিয়ম এবং বনআইনের নীতিমালা অনুসরন করে ১ এপ্রিল থেকেই মৌয়ালদের ১৪ দিন করে পাস (অনুমতিপত্র) দেওয়া শুরু হয়েছে। বৃষ্টির কারনে এবছর গাছে গাছে ফুলের সমারোহ বেশি। এতে করে বোঝা যাচ্ছে গতবারের তুলনায় বেশি মধু আহরণ হবে। তবে, মৌসুমের শেষে জুন মাস থেকে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞার কারণে পুরো মৌসুম মধু মধুরণ সম্ভব হয় না। পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন বলেনএকেকজন মৌয়ালকে ১৪ দিনের জন্য পাস দেওয়া হয়। বনে প্রবেশ করার পর মুধ আহরণের জন্য ৯টি নির্দেশনা দেয়া হবে মৗয়ালদের। এসব নির্দেশনাগুলো হচ্ছে কোনো মৌয়াল মধু সংগ্রহের সময় মৌমাছি তাড়াতে অগ্নিকুন্ড, মশাল বা অনুরূপ কোনো দাহ্য পদার্থ এবং রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে পারবেন না। এই নির্দেশনা অমান্য করেল তার বিরুদ্ধে বন আইনে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।