সনদবিহীন ভুয়া পশু চিকিৎসক বিষ্ণু কুমার দাস ও তার সহযোগী শামীম আহমেদ পলাশ অপচিকিৎসার শিকার হয়ে নিঃস্ব, অসহায় এবং দুস্থ এক খামারির একমাত্র সম্বল গর্ভবতী গাভী ও বাছুর মারা গেছে। গাভীর বাচ্চা প্রসাব করাতে যেয়ে দড়ি দিয়ে পা বেঁধে টানা টানি এবং গাভীর জরায়ুতে হাত ঢুকিয়ে অতিরিক্ত টানাটানির কারণে ঘাড় ভাঙ্গা অবস্থায় জন্ম নেওয়া গরু বাছুরের মুত্যু হয়। এর ৩ দিন পর গাভী গরুটিও মারা যায়। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিমা জগন্নাথপুর গ্রামের মৃত বঙ্গ দাসের ছেলে কানাই লাল দাসের গরু খামারিতে। কানাই লাল দাস বলেন, রোববার সন্ধায় আমার দেশী জাতের গাভী গরুটির ডেলিভারির ভাব দেখে স্থানীয় পশু চিকিৎসক বিষ্ণু কুমার দাসকে বাড়িতে ডেকে আনি। প্রথমে বিষ্ণু অনেক চেষ্টা করেও ডেলিভারি করাতে ব্যার্থ হয়। পরে বিষ্ণু ও শামীম আহমেদ পলাশ নামে আরেকজন ভুয়া পশু চিকিৎসককে ডেকে আনেন। বিষ্ণু ও পলাশ ডাক্তার দুজনে মিলে দড়ি দিয়ে বেঁধে এবং সাড়াশি দিয়ে ডেলিভারি করায়। বাছুরটি ঘাড় ভাঙ্গা অবস্থায় পেটের মধ্যে মারা যায়। দীর্ঘক্ষণ ধরে বিষ্ণুর টানা টানির কারণে এমনটি হয়েছে। এরপর গাভীর প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এ সময় প্রায় ৩ হাজার টাকার ওষুধ লিখে দেন এবং গরুকে পানি খাওয়াতে নিষেধ করেন বিষ্ণু। ডেলিভারি করানো বাবদ ৭ হাজার টাকা দাবি করেন সে। আমি নিঃস্ব গরিব হওয়ায় তার টাকা দিতে পারিনি। যে কারণে বারবার আমার বাড়ি এসে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। এদিকে আমার গরু খুব সুস্থ হওয়ার কোন লক্ষন নেয়, এমনকি গরু খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। ঠিকমতো উঠে দাড়াতে পারছে না। আমার সুস্থ সবল গরুটি শুধুমাত্র অপচিকিৎসার কারণে বুধবার রাতে মারা যায়।
কানাইলাল দাসের স্ত্রী সাহা রানি বলেন, বিষ্ণু ডাক্তারের ভুল চিকিতসার কারনে আমার গরুর এই অবস্থায় পরিনত হয়েছে। আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে আমার বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে কোন রকমে দিনতিপাত করি। এই গরুটি ছিল আমার একমাত্র সম্বল সেটিও মরে গেলো। আমার ভালো বাছুর ও গরুটি মেরে ফেলল তারা। কে দেবে এই ক্ষতিপূরণ? আমি এর বিচার চাই।
বিষ্ণু কুমার দাস বলেন, হ্যাঁ আমি ওখানে চিকিৎসা দিয়েছি। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চিকিৎসা কেন দিচ্ছেন এমন কোন প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতে পারেননি। খামারির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে সেটি তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। অপর সনদবিহীন পশু চিকিৎসক শামীম আহমেদ পলাশ বলেন, বিষ্ণু আমাকে ওখানে ডেকে নয়ে গিয়েছিল। আমরা চেষ্টা করেছি বাছুর না বাঁচলে কি করবো বলেন। তিনি স্বীকার করেন প্রানী চিকিৎসার কোন সরকার অনুমোদিত বৈধ সনদপত্র তার নেই। তিনি আরও বলেন ভাই আমরা গরিব মানুষ। আমাদের ক্ষতি কইরেন না। উল্লেখ্য কালীগঞ্জ উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার রেজাউল করিম ২৩ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে ৩৩,০১,৪৪৩৩.২৫.০০১.২৩-৭৯৫ স্বারক নম্বরে একটি পত্র প্রেরন করে পৌর এলাকার পাইকপাড়া গ্রামের রঞ্জন কুমার দাসের ছেলে সনদ বিহীন ভুয়া পশু চিকিৎসক বিষ্ণু কুমার দাসকে। পত্রে পশুচিকিৎসা না দেওয়া নির্দেশ দেওয়া। সরকারি এই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভুয়া চিকিৎসক বিষ্ণু কুমার নিয়মিত পশু চিকিৎসা হালিয়ে যাচ্ছেন বীরদর্পে। দীর্ঘ হচ্ছে নিবন্ধনহীন ভুয়া পশু চিকিৎসকদের মিছিল। সরকারি বিধি-নিষেধকে তোয়াক্কা না করে উপজেলার সর্বত্র ভুয়া চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য আশঙ্কাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় গ্রাম গ্রামান্তরে জুড়ে হাতুড়ে পশু চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন রেজিস্ট্রেশনবিহীন কোম্পানির ওষুধ বিক্রি করে বনে গেছেন লাখপতি। খামারিদের কাছ থেকে ওষুধের মূল্য নিচ্ছেন ইচ্ছামতো। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও হাটবাজারে হাতুড়ে চিকিৎসকদের অনেকেই সাইনবোর্ড, প্যাড ও ভিজিটিং কার্ডে ‘ডাঃ’ পদবী ব্যবহার করে প্রানি সম্পদ আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন করছেন।কিছু রেজিস্ট্রেশনবিহীন ওষুধ কোম্পানির অসাধু বিক্রয় প্রতিনিধিদের যোগসাজশে হাতুড়ে চিকিৎসকরা নিজেদের পেশাকে হালাল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ওইসব হাতুড়ে চিকিৎসকদের অনেকেরই ন্যূনতম এসএসসি পাসের সার্টিফিকেট নেই। আর গ্রামের খামারিদের কাছে ওইসব ভুয়া চিকিৎসকরা নামকরা ডাক্তার হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল অ্যাক্ট ২০১৮ অনুযায়ী, যেকোনো প্রানীর ও পাখির লাইসেন্সবিহীন হাতুড়ে চিকিৎসা করলে ৩ বছরের কারাদন্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডেদন্ডিত করা হবে। কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় শতাধিক এর অধিক নিবন্ধনহীন পশু চিকিৎসক রয়েছে। এসব চিকিৎসকরা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ কিংবা সরকারি প্রশিক্ষন ও অভিজ্ঞতার সনদ ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। গ্রামের প্রত্যান্ত অঞ্চলে এসব হাতুড়ে প্রানি চিকিৎসকরাই ভেটেরিনারি ওষুধের দোকান গড়ে অনুমোদনহীন নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি করছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রানী সম্পদ ডঃ রেজাউল করিম এসব ভুয়া ডাক্তারদের নিকট থেকে মাসোহারা খায় এ কারনে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যাস্থা গ্রহন করেন না। কালীগঞ্জ উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ রেজাউল করিম বলেন, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বিষ্ণু কুমার দাসের প্রানী চিকিৎসার ফলে খামারির গরু মারা যাওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। ঘটনাটি আমি শুনেছি। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।