শঙ্কা কাটিয়ে এবার গমের ভালো ফলন পাচ্ছে কৃষকেরা। ২০১৬ সালে গমের ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩ বছর গম আবাদে নিরুৎসাহিত করা হয় কৃষকদের। কিন্তু ব্লাস্ট প্রতিরোধ জাত উদ্ভাবন এবং গম ঝাড়া-মাড়াই আধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবনের পর গম আবাদ বাড়তে থাকে জেলার ৬ উপজেলায়। চলতি মৌসুমে জেলাতে গেল এক দশকের মধ্যে রেকোর্ড পরিমান গমের আবাদ হয়েছে। গম আবাদ বৃদ্ধির জন্য ৫ হাজার কৃষকের বিনামূল্যে বীজ সার প্রনোদনা দেয়া হয়েছিল। জমিতে গম বোপনের পর কৃষকেরা ব্লাস্ট বা গম নষ্ট হওয়ার আতঙ্কে ছিল। তবে কিছু জায়গায় ইদুরের আক্রমণ ছাড়া সকল শঙ্কা কাটিয়ে ভালো ফলনে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। জেলার কয়েকটি পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, কালীগঞ্জ শহরের ভূষিমালের পাইকারি অন্যতম বাজার, এখানে প্রতিমন গম আকার পরিষ্কার ভেদে সাড়ে ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত গম কিনছে। এছাড়া খুচরা বাজারে সাব্দারপুর বাজার, গোপালপুরে প্রতি কেজি ৪২ টাকা দরে সৌখিন ভোক্তাগনের গম কিনতে দেখা যায়। সবমিলিয়ে গম আবাদে এবছর লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জানান, চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহে ৫০০ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৫৭ হেক্টর আবাদ বেশি হয়েছে। গেল মৌসুমে ৪০০ হাজার ২৭৮ হেক্টর জমিতে গম আবাদ হয়েছিল। এ মৌসুমে সদর উপজেলায় ৭৯০হেক্টর,কালীগঞ্জে ৩২০,কোটচাঁদপুরে ১৩০,মহেশপুরে ৮২০, শৈলকূপায় ২০০ হাজার ৮৬০ এবং হরিনাকুন্ডুতে ৩১০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। শৈলকুপায় সবচেয়ে বেশি এবং কোটচাঁদপুর উপজেলায় কম পরিমানে গম আবাদ হয়েছে। এ পরিমাণ আবাদ থেকে ২১’ হাজার ১২৯ দশমিক ২ মেট্রিক টন গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এবছর গম কাটা শুরু করেছে চাষিরা। সদর উপজেলা বাজার গোপালপুর গ্রামের কৃষক ইবাদত হোসেন জানান, তিনি ১৭ কাঠা জমিতে গমের আবাদ করেছিলেন। কাটা ঝাড়া শেষ হয়েছে। ১৩ থেকে ১৫ মন গম উৎপাদন হয়েছে। সবমিলিয়ে তিনি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ করেছেন। হরিণাকুন্ডু উপজেলার হিজলী গ্রামের কৃষক মনি মিয়া জানান, পোকামাকড় ও গমের ব্লাস্টার রোগের কারণে গম চাষ থেকে সরে গেছিলাম। তবে এবছর কৃষি বিভাগ থেকে আশ্বস্ত করলে ২৫ শতক জমিতে গম চাষ করি। গমের ফলনও ভালো হয়েছে আবার পোকামাকড় বা ব্লাস্টার রোগের যে শঙ্কা ছিল সেটা হয়নি। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নূর-এ-নবী বলেন, উপজেলাতে ৭৯০ হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছে। গম চাষের জন্য শীতের আবহাওয়া বেশ উপযোগী। এবছর দীর্ঘ সময় ধরে শীত পড়েছিল,এছাড়া সঠিক সময়ে বীজ বপন করা হয়েছে। সবমিলিয়ে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবং গমে পোকামাকড় বা কোন সংক্রমণ দেখা যায়নি। যার ফলে এবছর গম আবাদে আশানুরূপ ফলন হয়েছে।