বান্দরবানে সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধারের আদ্যোপান্ত জানিয়েছে র্যাব। একইসঙ্গে ম্যানেজারের কাছ থেকে নানান তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) সকালে পার্বত্য জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
র্যাবের কাছে ম্যানেজার নেজাম উদ্দিন সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলা এবং হামলার পরে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। ম্যানেজার র্যাবকে জানান, মঙ্গলবার রাতে অস্ত্রশসত্রে সজ্জিত শতাধিক সশস্ত্র কুকি-চীন সদস্য রুমা সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে ব্যাংক এবং আশপাশের এলাকায় ভীতি সঞ্চার করে তাকে খুঁজতে থাকে। লোকের মাধ্যমে জানতে পারে পার্শববর্তী মসজিদে এশার নামাজ পড়ছেন। সন্ত্রাসীরা মসজিদে প্রবেশ করে সব মুসল্লিকে জিম্মি করে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। পরে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এর আগে তিনি সন্ত্রাসীদের কৃষি কর্মকর্তা পরিচয় দিলে লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে পরিচয় নিশ্চিত হয় কুকি চিন। এ সময় সন্ত্রাসীরা এক ধরনের সামরিক পোশাক পরা ছিল। মুখমণ্ডল কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। ব্যাংকের চারপাশ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ঘিরে রেখেছিল।
ম্যানেজার জানান, সন্ত্রাসীরা জানতে চেয়েছে ঘটনার দিন ব্যাংকে কত টাকা নিয়ে আসা হয়েছে এবং ব্যাংকের ভল্টে মোট কত টাকা রক্ষিত আছে। সন্ত্রাসীরা অসত্রের মুখে ম্যানেজারের কাছে ব্যাংকের ভল্টের চাবি চাইলে তখন তিনি কৌশলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারপর তারা ভল্ট ভাঙতে চেষ্টা করে। পরে ম্যানেজারের কাছ থেকে আরও জানতে পারে, ভল্টে আঘাত করলে সেনসরের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ব্যাপারটি সোনালী ব্যাংকের হেড অফিস জেনে যাবে। তখন তারা ম্যানেজারকে অপহরণ করে। পাহাড়ি এলাকায় যাওয়ার পরপরই চোখ বেঁধে ফেলে। টানা দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা কোনও এক অপরিচিত পাহাড়ের ঝিরিপথে হাঁটিয়ে নিয়ে যায়। এই সময় তার সঙ্গে ১০-১২ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ছিল। পথে তারা চোখ খুলে দেয়। অন্ধকারে চলার সুবিধার্থে হাতে একটি বাটন ফোন ধরিয়ে দেয়। পথে তারা কিছু সময়ের জন্য বিশ্রামের সুযোগ দেয়। এরপর আবার হাঁটায়। রাত আনুমানিক আড়াইটায় নীরব অজ্ঞাত এক স্থানে তাকে নিয়ে গিয়ে ঘুমানোর সুযোগ দেয় এবং যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য তারা পাহারা দেয়।
ঘটনার পরদিন সকালে সামান্য নাশতা দিয়ে আবারও হাঁটিয়ে পাহাড়ি ঝিরিপথ দিয়ে অন্য একটি পাহাড়ের ঝিরিতে নিয়ে যায়। সেখানে প্রায় ৩০-৩৫ জনের মতো সশস্ত্র সন্ত্রাসী অবস্থান করছিল। এ সময় তারা কলার পাতায় করে গরম ভাত, ডাল ও ডিম ভাজি খেতে দেয়। পরে সেখান থেকে হাঁটিয়ে অন্য জায়গায় পুনরায় নিয়ে যায়। সেখানে ১৫-২০ মিনিটের মতো বিশ্রামের সুযোগ দেয়। সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার দিকে তারা ধাপে ধাপে বিশ্রাম এবং হাঁটার পর ভিন্ন একটি জায়গায় গিয়ে পৌঁছালে আবারও তাকে গরম ভাত, ডাল ও ডিম খেতে দেয়।
র্যাব জানায়, অপহরণের পর সন্ত্রাসীরা ম্যানেজারকে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেয় এবং কোনও প্রশাসনিক বা আইনি সহায়তা যাতে না নেয়, তার পরিবারকে সেজন্য সতর্ক করে। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের ওই সূত্র ধরে রযাব অবস্থান শনাক্ত করে। র্যাবের মধ্যস্থতায় সোনালী ব্যাংকের বান্দরবানের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে বান্দরবানের রুমা বাজার ও বেথেল পাড়ার মধ্যবর্তী কোনও এক স্থান থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।