ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হরিণবেড় শাহজাহান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট রুল জারী করা হয়েছে। রিট আবেদনে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড এর চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের অভিভাবক শেখ শরিফ হাসান নয়ন চলতি মাসের ১১ তারিখ উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি হরিণবেড় শাহজাহান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোস্তাক উদ্দিন আহমেদের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন। ওই শিক্ষকের ‘ব্যাচেলর অব এডুকেশন’ (বিএড) ডিগ্রির সনদের বৈধতা ও ছাড়পত্রকে চ্যালেঞ্জ করা হয়। আদালত তার আবেদনটি আমলে নিয়ে একই মাসের ২১ তারিখ বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হক চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে একটি রুল জারি করেন। অভিযুক্ত শিক্ষক হরিণবেড় শাহাজান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোস্তাক উদ্দিন আহমেদ। বর্তমানে (২০২০ সাল থেকে) তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যার ইনডেক্স নম্বর (৩০৮৭৪১)। আদালতের রুলে উল্লেখ করা হয়, নিয়োগের শর্তানুযায়ী হরিপুর মাদ্রাসার পূর্ব অভিজ্ঞাতার দাবি করলেও পূর্ব প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র গ্রহণ করেননি। তিনি কর্মরত অবস্থায় ২০০৮ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএড ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারকনং-শিম/শা:১১/১৯-২(এম.পি.ও)/২০০৭/৭৫৭,তারিখ:১৫-০৫-২০০৮ পরিপত্রের (১) অনুচ্ছেদের নির্দেশ মোতাবেক কর্মরত অবস্থায় সরকারি টিচার ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রির সনদ অর্জন না করায় উক্ত সনদটি গ্রহণযোগ্য নয়।
এছাড়া অভিযোগ উঠে তিনি নিয়োগের সময় তিনি পূর্বের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হরিপুর সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসার ছাড়পত্র না নিয়ে নিজের হাতে একটি ছাড়পত্র বানিয়ে শাহাজান উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়োগ কমিটির কাছে জমা দেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবার পরে তিনি হরিপুর সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে একটি পদত্যাগপত্র জমা দেন। কিন্তু ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি ২/১৪ নং অধিবেশনে ওই শিক্ষকের পদত্যাগের আবেদন না মঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে একাধিকবার সরকারি অডিট টিম তাঁর তথ্য গোপনের বিষয়টি জানতে পেরে স্কুল কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি খালেদ মোবারক বলেন, ওই শিক্ষকের নিয়োগটি আমি সভাপতি থাকাকালীন সময়েই হয়। কিন্তু তার বিএড সনদটি যে অবৈধ এবং ছাড়পত্র না নিয়ে যে নিয়োগ পেয়েছেন তা প্রমাণ হয়েছে ২০১৭ সালের শিক্ষামন্ত্রণালয়ে অডিটের পর।
হরিপুর সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, হরিণবেড় শাহজাহান উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সময় তিনি আমাদের মাদ্রাসা থেকে কোন ছাড়পত্র নেয়নি। এখনো ওই মাদ্রাসার পদটি আগের মতোই বহাল রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শিরিন আক্তার বলেন, আমি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই শুনছি ওই শিক্ষকের বিএডের সনদটি নিয়ে অভিযোগ হয়েছে। যে অভিযোগ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আদালতের বিষয় আদালতেই নিষ্পত্তি হোক।
অভিযোগকারী অভিভাবক শেখ শরিফ হাসান নয়ন বলেন, মোস্তাক উদ্দিন আহমেদের বিএড সনদটি অবৈধ।কারণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা ছিলো, সরকার অনুমোদিত টিচার ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রি অর্জনের সনদ থাকতে হবে কিন্তু তা না করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দারুল ইহসান থেকে ২০০৮ সালে বিএড ডিগ্রি নেন। এমনকি তিনি পূর্বে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন সে প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্রও নেয়নি।
অভিযুক্ত শিক্ষক মোস্তাক উদ্দিন আহমেদ তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে জানান আমি যথাযথভাবে বিএড ডিগ্রি নিয়েছি। পরিপত্র অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দারুল ইহসাসের সনদের গ্রহণ যোগ্যতা আমি পাশ করা পর্যন্ত বলবৎ ছিলো। আমি যোগদানের সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনাপত্তি নিয়েছি। এর আগে আমার বিএড সনদটি জাল উল্লেখ করে একজন আদালতে মামলা করেন। কিন্তু বিজ্ঞ আদালত মামলাটি ২০২১ সালে খারিজ করে দেয়। এমনকি আমার সনদ বৈধ বলে রায় দেয়। নাসিরনগর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো.আজহারুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নিয়োগটি হয়েছে আজ থেকে ১২ বছর পূর্বে। তাই এই নিয়োগের বৈধতার বিষয়টি আমার জানা নেই।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-সেসিপ) কাওছার আহমেদ জানান, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দারুল ইহসান থেকে বিএড ডিগ্রির সনদ নিয়ে চাকরি করা বৈধ নাকি অবৈধ এটা আমি বলতে পারবো না। এটা নিয়ে কোর্টে মামলা চলমান। পূর্বের প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র না নিয়ে কিভাবে নিয়োগ পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাড়পত্র ছাড়া কোন ভাবেই ওই শিক্ষকের এমপিও হবে না। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।’