সকল জল্পনা ও কল্পনার অবসান ঘটিয়ে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর জেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারনায় মাঠে নেমেছেন বিরোধীদল জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। তবে জাপা থেকে এককভাবে প্রার্থী না হওয়ায়, তারা পরিবর্তনের পক্ষে আওয়ামী লীগের নতুন মুখের প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগে মাঠে নেমেছেন।
অপরদিকে জেলার দশটি উপজেলার ৮৭ ইউনিয়নের ১ হাজার ১১৬টি গ্রামে আওয়ামী লীগের প্রায় অর্ধশতাধিক প্রার্থী দীর্ঘদিন থেকে মাঠে গণসংযোগ করে আসছেন। এরমধ্যে নয়টি উপজেলার ভোট হলেও মেয়াদোর্ত্তীন না হওয়ায় একটিতে (মেহেন্দীগঞ্জ) নির্বাচন হচ্ছেনা। সবমিলিয়ে এবার আসন্ন ঈদ-উল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের আনন্দের সাথে বাড়তি আনন্দ হিসেবে যোগ হয়েছে উপজেলা নির্বাচন। দুটি সর্ববৃহত উৎসব নির্বাচনের আগে হওয়ায় এবার প্রার্থীদেরও খরচ বেড়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথমধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন মাঠে থেকে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও বঙ্গবন্ধুর বোনজামাতার নামে প্রতিষ্ঠিত শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন। সম্ভ্রাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারনায় রয়েছেন, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম ছবি, সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মধু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনছার আলী হাওলাদার ও স্বেচ্ছাসেবী এস.আর সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রধান সমন্বয়কারী এবং বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির জেলা শাখার সাবেক সভাপতি মোঃ আব্দুল মালেক।
প্রথমধাপের বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা। একইসাথে প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান মাসুদ ও যুবলীগের সহসস্পাদক রাজিব আহমেদ তালুকদার। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে বাবুগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে জনতার প্রার্থী হিসেবে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক মেধাবী ছাত্র মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মোঃ আদনান আলম খান বাবু। ওই উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার খালেদ হোসেন স্বপন এবং ভাইস চেয়ারম্যান ফরজানা বিনতে ওহাব চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নিজেদের ঘোষণা দিয়েছেন।
উজিরপুর উপজেলার বর্তমান জনপ্রিয় চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু, সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এসএম জামাল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুখেন্দ শেখর বৈদ্য ও শোলক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী হুমায়ুন কবির, জাসদ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল প্রচার-প্রচারনায় রয়েছেন।
বানারীপাড়া উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ গোলাম ফারুক, সাধারণ সম্পাদক মাওলাদ হোসেন সানা, সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য মামুন-উর রশিদ স্বপন তালুকদার, সহ-সভাপতি জিয়াউল হক মিন্টু এবং জাসদ নেতা সাজ্জাদ হোসেন প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে আগৈলঝাড়া উপজেলায় পাঁচজন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। অতিসম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির ছোট ছেলে সেরনিয়াবাত আশিক আব্দুল্লাহ চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নিজেকে ঘোষনা করার পর এতোদিন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করা প্রার্থীরা নিশ্চুপ হয়ে গেছেন। তবে শেষপর্যন্ত ওই উপজেলায় সাবেক এক চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।
গৌরনদী উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে ব্যাপক ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন লাগিয়ে ১০ জন প্রার্থী দোয়া ও সমর্থন চেয়ে আসছিলেন। এরইমধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান পৌর মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা দেওয়ার পর আটজন প্রার্থী নিশ্চুপ হয়ে গেছেন। তবে শেষপর্যন্ত প্রতিদ্বন্ধীতা করার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী ও পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি মনির হোসেন মিয়া। চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে মুলাদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে প্রচার-প্রচারনায় মাঠে নেমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জহির উদ্দীন খসরু। ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে উপজেলাজুড়ে পরিচিত জহির উদ্দীন খসরুর পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এবার প্রকাশ্যে গণসংযোগে মাঠে নেমেছেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। বরিশাল-৩ (মুলাদী ও বাবুগঞ্জ) সংসদীয় আসনটি দীর্ঘদিন থেকে জাতীয় পার্টির দখলে থাকলেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মুলাদীতে জাতীয় পার্টির কোনো নেতা নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছেন। যেকারণে জাপার নেতাকর্মীরা জহির উদ্দীন খসরুর পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনী মাঠে গণসংযোগে নেমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। এছাড়াও মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান মিঠু খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ইউসুফ আলী, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
হিজলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন উপজেলা পরিষদের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান (সদ্য প্রয়াত) মোঃ বেলায়েত হোসেন ঢালীর একমাত্র ছেলে মোঃ নজরুল ইসলাম রাজু ঢালী। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলতাফ মাহমুদ দিপু সিকদার, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহজাহান তালুকদার, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম স্বপন চৌধুরী এবং হরিনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুর রহমান সিকদার প্রার্থী হতে পারেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার একাধিক সম্ভ্রাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বলেছেন, সংসদ সদস্য ও জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের শতভাগ প্রতিশ্রুতি পেলে প্রতিটি উপজেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রার্থী হবেন বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছেন। কোনধরনের প্রভাব থাকবেনা জানিয়ে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস জনকণ্ঠকে বলেন, যেহেতু এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক থাকছেনা, তাই প্রার্থী নিয়েও কোন বক্তব্য নেই। শুধু একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই আমাদের লক্ষ্য থাকবে। জনগন যাকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনে করবেন, তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য থাকবে, নির্বাচন নিয়ে যেন নিজেদের মধ্যে কোনধরনের সংঘাতের ঘটনা না ঘটে।