প্রথম ধাপে যে ১৫২ টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তার মধ্যে রয়েছে বিশ^বরেণ্য ক্রিকেটার কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের জন্মভূমি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ। আগামী ৮ মে’র এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে ১৫ এপ্রিল। ১৭ এপ্রিল মনোনয়নপত্র বাছাই, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২২ এপ্রিল এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ২৩ এপ্রিল। সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালিগঞ্জের ১২ ইউনিয়নে ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৪৩ হাজার। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে রমজানের মধ্যেই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে জোরেশোরে মাঠে নেমেছেন বর্তমান আওয়ামী লীগের ২ প্রভাবশালী নেতা। বিএনপি’র পক্ষ থেকে কেউ নির্বাচনের মাঠে না থাকলেও ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছেন জামায়াতের এক প্রার্থী। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদেও প্রার্থী দিচ্ছে জামায়াত। সবমিলিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ও মহিলা প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠ দখলে নেমেছেন অন্তত: একডজন প্রার্থী।
জানা গেছে, পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাঈদ মেহেদী। এবারও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যে অনেক আগে থেকেই গণসংযোগ শুরু করেছেন। এর আগে তিনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে পাঁচবছরের দায়িত্বকালে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সাথে তার দূরত্ব বেড়েছে অনেক। এজন্য ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে জোর আলোচনা চলছে সূধীমহলে। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করে কালিগঞ্জ উপজেলাকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গেছেন এমনটা দাবি করে আবারও নির্বাচিত হবেন বলে দাবি করেছেন সাঈদ মেহেদী।
বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শেখ মেহেদী হাসান সুমন। কুশুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে পদত্যাগ করে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে চমক দেখান প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বারবার নির্বাচিত সভাপতি এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ ওয়াহেদুজ্জামান এর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ মেহেদী হাসান সুমন। ওই নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি থেমে থাকেননি। বিগত ৫বছর উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত একাধারে গণসংযোগ করেছেন তিনি। সর্বস্তরের মানুষের কাছাকাছি থেকেছেন তিনি। সূধীজনের মতে, বিভিন্ন কারণে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন ইঞ্জিনিয়ার শেখ মেহেদী হাসান সুমন। নানা সমীকরণে শেখ মেহেদী হাসান সুমন আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে বিজয়ী হবেন বলে জোর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বেশ কিছুদিন যাবত প্রচারণা চালালেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তারালী ইউপি থেকে টানা তিনবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান পদে লড়বেন দুই প্রার্থী।
অপরদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে নলতা ইউপি’র চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান এর নাম শোনা গেলেও দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত না থাকায় তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে নিশ্চিত করেছেন। তবে বেশ জোরেশোরেই মাঠে নেমেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা জেলা শাখার সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমান। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করছেন। চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আজিজুর রহমান চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সে নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হলেও জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। জনগণ স্বত:স্ফূর্তভাবে ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জামায়াতের প্রার্থী আজিজুর রহমান।
এদিকে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে অন্তত: ৭ জন প্রার্থী গণসংযোগে নেমেছেন। তারা হলেন বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ নাজমুল ইসলাম, বিগত নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী প্রার্থী উজ্জীবনী ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক শেখ ইকবাল আলম বাবলু, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া মনসুর মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুর রউফ, কুশুলিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী মোফাখখারুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদের উপজেলা শাখার সভাপতি মুকুল বিশ^াস, হাফেজ মাওলানা মুফতী সাজ্জাদুর রহমান ও শেখ সিরাজুল ইসলাম। এছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে গণসংযোগ শুরু করেছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান দিপালী রানী ঘোষ, কৃষ্ণনগর ইউপি’র সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান শ্যামলী রানী মন্ডল, বিষ্ণুপুর ইউপি সদস্য ফারজানা শওকাত আফি, জেলা যুবলীগের নেত্রী আজমিরা সুলনাতা পাখি, জামায়াতের প্রার্থী সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জয়নব পারভীন এবং মথুরেশপুর ইউপি’র চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিমের মেয়ে সুরাইয়া আফরোজ সুমি।
সরেজমিনে দেখা যায়, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঈদ শুভেচ্ছার পোস্টার ছাড়া নির্বাচনী পোস্টার তেমন চোখে পড়ছে না। তবে পোস্টার বা ব্যানার তেমন দেখা না গেলেও উপজেলার সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে কে বিজয়ী হবেন আগামী ৮ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা বিজয়ী হবেন তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উপজেলাকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত জনপদ হিসেবে গড়ে তোলার পক্ষে কাজ করবেন। এছাড়া সীমান্ত নদীর বেড়িবাঁধ সংস্কার, সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও খাল দখলমুক্ত করে জলাবদ্ধতা মুক্ত উপজেলা গড়তে নজর দেবেন এমনটা আশা করেন স্থানীয় ভোটাররা।