পাবনার চাটমোহর উপজেলা বোঁথর গ্রামে শুরু হয়েছে উপমহাদেশের বিখ্যাত মহাদেব ও চড়ক পূজা এবং তিন দিনব্যাপী মেলা। এই চড়ক পূজা ও মেলায় বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের অসংখ্য হিন্দুর সমাগম ঘটেছে। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন বড়াল নদের তীরের বোঁথর গ্রামটি হয়ে ওঠে তীর্থ ক্ষেত্রের কেন্দ্রবিন্দুতে। সিন্ধু সভ্যতা থেকেই চাটমোহরের বোঁথর গ্রামে এই চড়ক পূজা ও মেলা হয়ে আসছে। শত শত বছর ধরে চলছে এই পূজা ও মেলা।
মূলতঃ ২২ চৈত্র সন্ধ্যায় পাঠ ঠাকুরের পাটে ধূপ দিয়ে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। বোঁথর শিব মন্দির থেকে পাঠ ঠাকুর নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ি বাড়ি। ২৬ ও ২৭ চৈত্র ফুল ভাঙ্গা ও কালি নাচ শুরু হয়। তারপর প্রতিমা আসনে বসে। মেলা হয় চৈত্র মাসের শেষ দুই দিন ও পহেলা বৈশাখ। আগে মেলা হতো মাসব্যাপী। এখন হয় তিন দিন। চৈত্র সংক্রান্তির সন্ধ্যায় চড়ক গাছ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোরানো হয়। এর আগে পূজারীরা ফুল,দুধ ও চিনি দিয়ে চড়ক গাছে পূজা দেয়। মহাদেব মন্দিরের চালে বাতাসা ছিটায় মঙ্গলার্থে। চড়ক পূজা উপলক্ষে মহাদেব আসনে তোলা হয় ২৮ চৈত্র,৭ বৈশাখ নামানো হয়। ১৩ জন প্রধান বৃত্তাকে ৬ দিন উপবাস থাকতে হয়। শনিবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় চড়ক গাছ ঘুরানো হয়েছে। এরঅগে শুক্রবার ও শনিবার দিনভার পূজারীরা চড়ক গাছে পূজা দেয়।
বোঁথর একটি গ্রাম। চাটমোহর পৌর শহর সংলগ্ন বড়াল নদের উত্তর পাড়ের আদর্শ গ্রাম এটি। চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহে উৎসবমূখর হয়ে ওঠে গ্রামটি। দেশ-বিদেশের আত্মীয়স্বজন আসে এই মেলায়। একসময় চলনবিল অঞ্চলের সকল নতুন-পুরাতন জামাইকে আনতে হতো মেলা উপলক্ষে। সকল পণ্যই মিলতো এই মেলায়। হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতির ক্ষেত্র ছিল এই মেলা। সে সব এখন ইতিহাস। বোঁথর চড়ক পূজা ও মেলার যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা ঠিক থাকলেও,শুধু কমেছে মেলার জৌলুস। তরপরও এবছর প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে অসংখ্য আত্মীয়স্বজন এসেছে চাটমোহরের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে। তারা মেতেছে পূজা আর বৈশাখী উৎসব। পহেলা বৈশাখ তিন দিনব্যাপী মেলা শেষ হবে।