ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের পরমানন্দপুর গ্রামে খাস জায়গার দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় ৬ পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক লোক। ফলে ওই এলাকার ৪৪৫ জনের বিরূদ্ধে পুলিশ এ্যাসল মামলা হয়েছে। গুরূতর আহত হয়েছেন ৫ জন। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন পুলিশ। রাতে দিনে সেখানে থানা ও জেলা থেকে আসা অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান করছেন। গোটা পরমানন্দপুর গ্রাম এখন পুরূষশুন্য।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানায়, মাত্র ২০ শতাংশ খাস জায়গার দখলকে কেন্দ্র এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। উপজেলার পল্লী এলাকা পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে আইয়ুব খান ও জিয়াউল আমীনের মধ্যে গোষ্ঠীগত দ্বদ্ধ চলে আসছিল। একাধিকবার হামলা সংঘর্ষ ভাংচুর ও মামলার ঘটনাও ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে ধান শুকানোর জন্য সোনাউল্লাহর গোষ্ঠীর মান্নান মিয়া একটি খাস জায়গা কেটে লেপপোজ করছিলেন। একসময় এই জায়গাটির দখলে মালিক ছিলেন ছাদেক মিয়ার নামের এক লোক। তিনি মান্নান মিয়ার কাছে দখল বিক্রি করে চলে গেছেন। একই জায়গা লীজ সূত্রে মালিকানা দাবী করে মান্নানের কাজে বাঁধা দেন বুদ্ধির গোষ্ঠীর রাশেদ মিয়া। এর জের ধরে গ্রামের সহ¯্রাধিক নারী পুরূষ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পূর্ব বিরোধের জেরে কাঞ্চন আর আইয়ুব খানের লোকজন মান্নানের পক্ষে ও জিয়াউল আমীনের লোকজন রাশেদ মিয়ার পক্ষে সংঘর্ষে যোগ দেয়। একপর্যায়ে গোটা গ্রাম দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া আশপাশের গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী অরূয়াইল ইউনিয়নের ২/১টি গ্রাম থেকেও আত্মীয়স্বজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ফলে খন্ড যুদ্ধে সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ঘটনার ভয়াবহতা জেনে দ্রƒত সেখানে হাজির হন সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া। পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আ.স.ম আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে সরাইল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১৪ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৩ রাউন্ড টিয়ারসেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত স্থায়ী সাড়ে ৩ ঘন্টার সংঘর্ষে পুলিশ, নারী পুরূষসহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- এস আই নাজমুল হাসান, এস আই বাবুল হোসেন, কন্সটেবল মাহাবুবুর রহমান, মোমিন উল্লাহ, আবদুল আলিম ও মো. মামুন মিয়া। গুরূতর আহত তিন শিশু সহ ওসমান মিয়া (৫৫), কাঞ্চন মিয়া (১৬), টাক্কাবালি (১৬), জিয়াউর রহমান (১৬) ও মন মিয়াকে (৩০) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২০ জন ও পরে রাতে ওই গ্রামে অভিযান চালিয়ে আরো ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ২২ জন পুরূষ ও ১৮ জন মহিলা রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় এস আই বাবুল হোসেন বাদী হয়ে ১৪৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৩০০ সহ মোট ৪৪৫ জনের বিরূদ্ধে মামলা করেছেন। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, এই গ্রামে গোষ্ঠীগত দ্বন্ধ দীর্ঘদিনের। এরই জের ধরে আজকের এই সংঘর্ষ। পুলিশ দ্রƒত থানা থেকে ভৌগোলিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও পুলিশ দ্রƒত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়েছে। তাদের ছুঁড়া ইট পাটকেলে ৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আইন হাতে তুলে নিয়ে দাঙ্গা হাঙ্গামায় জড়িত কাউকে আমরা ছাড় দিব না। সকলের বিরূদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, এখানকার গোষ্ঠীগত সংঘাতকে বড় করার জন্য পাকশিমুল ইউনিয়ন ও অরূয়াইলের অনেক রাঘব বোয়ালরা দীর্ঘদিন ধরে গোপনে ইন্ধন দিচ্ছেন।