বর্তমানে দেশের ক্রিকেট পাড়ায় সবচেয়ে আলোচিত নাম মোস্তাফিজুর রহমান। টাইগারদের আসন্ন পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে এই কাঁটার মাস্টারের আইপিএল ছেড়ে দেশে আসা উচিত নাকি সেখানেই চেন্নাই সুপার কিংসের শিবিরে থেকেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করলে ভালো হবে তা নিয়েই চলছে আলোচনা। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে দুই দিন দুই রকমের মন্তব্য করেছেন বিসিবির দুই পরিচালক আকরাম খান ও জালাল ইউনুস। ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালালের মতে, এখন আর আইপিএল থেকে শেখার কিছু নেই মোস্তাফিজের, উলটো সেখানে তারা মোস্তাফিজের থেকে শিখবে। অন্যদিকে আকরামের বিশ্বাস, আইপিএলে থাকলেই ভালো করতে পারবেন কাঁটার মাস্টার। তা নিয়েই চলছে আলোচনা। এবার এ বিষয়ে জালাল ইউনুসের সঙ্গেই সুর মেলালেন ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও চলমান ডিপিএলের আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। বৃহস্পতিবার মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে বড় জয়ের পর এ প্রসঙ্গে সুজন বলেন, ‘কঠিন প্রশ্ন। উত্তর দেওয়া কঠিন। দেশ তো সবার আগে। সব সময়ই বলি এটা। দেশের প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে আনন্দের কিছু নেই। তবে পরিস্থিতি কী চায়, ওনারা (জালাল ইউনুস, আকরাম খান) কীভাবে চিন্তা করেছেন... আমি এখন জাতীয় দলের সেট-আপে নেই বলতে গেলে। অপারেশন্সের ভাইস-চেয়ারম্যান থাকলেও, আমি সেভাবে মিটিংগুলোয় যাচ্ছি না আবাহনীর খেলার কারণে। আমি জানিই না আসলে। তো আমি এ ব্যাপারে কিছু বলব না। নিশ্চিতভাবেই জালাল ভাই একটা চিন্তা থেকেই মন্তব্যটা করেছেন। আমি মনে করি, চেয়ারম্যান হিসেবে উনি ক্রিকেট অপারেশন্সের অভিভাবক। উনি যেটা বলেছেন, আমাকে সেটাই মানতে হবে যে, ওনার কথাই ঠিক। এটাই আমার ধরে নিয়ে যেতে হবে।’ এর আগে গেল পরশু জালাল ইউনুস বলেছিলেন, মোস্তাফিজের আর শেখার কিছু নেই। উলটো সেখানে তার কাছ থেকেই শিখবে আইপিএল খেলা অনেক ক্রিকেটার। এমন মন্তব্যের পরই মূলত এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আরও বেড়েছে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে ভারতীয় বেশ কিছু গণমাধ্যমও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তবে ঐ মন্তব্যের ভিন্ন প্রেক্ষাপটও দেখিয়েছেন সুজন। তিনি বলেন, ‘শেখার সবখানেই আছে। প্রিমিয়ার লিগেও শেখার আছে। আজকের একটা সিনারিও শেখার হতে পারে। সেটা নিয়ে সংশয় নেই। হয়তো-বা উনি এটা সেভাবে বোঝাননি। উনি বলেছেন, মোস্তাফিজ এত বছর ধরে ওখানে খেলছে। আর সে তো এখন আর তানজিম সাকিবের মতো না। ও এখন মোস্তাফিজ। মোস্তাফিজ এখন অনেক বড় নাম বিশ্ব ক্রিকেটে। হয়তো জালাল ভাই ঐ অ্যাঙ্গেল থেকেই বলেছেন যে, মোস্তাফিজের অভিজ্ঞতা যেটা আছে, ভারতের তরুণ পেসাররা ওর থেকে কাঁটার বা এরকম জিনিস শিখতে পারে। উনি কথাটা এটাই বলেছেন। এটাকে অন্য কিছু মিন করা ঠিক হবে না। দিন শেষে আমি মনে করি, দেশ সবার আগে। এটা মাথায় রাখতে হবে। মোস্তাফিজ যদি আইপিএল খেলতে পারত, আমিও খুশি হতাম। দেশের খেলা না থাকলে হয়তো সমস্যা হতো না। অনেকে হয়তো বলবে, নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা আইপিএল খেলছে। কিন্তু আমাদের তো দশটা মোস্তাফিজ নেই। এটাও চিন্তা করতে হবে।’ বেশ কয়েক সিরিজ ধরেই টাইগাররা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বেশ গোছানো ক্রিকেট খেলছে। সেই দলে গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য মোস্তাফিজও। তিনি বর্তমানে খেলছেন আইপিএলে, তার শূন্যতা পূরণের জন্যও অবশ্য একাধিক পেসার রয়েছেন, তবে ঘরের মাটিতে বাংলাদেশের তুলনায় কম শক্তির দল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লড়ার জন্য কাঁটার মাস্টারকে দেশে ফিরিয়া আনা কি আসলেও খুব দরকারি কি না, জানতে চাইলে সুজন বলেন, ‘আসলে সেরকম না, সেটাও পরিষ্কার করা হয়েছে যে মোস্তাফিজ আসবে মানেই যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলবে, ব্যাপারটা তেমন না। ওর ওয়ার্ডলোড ম্যানেজমেন্ট করার বিষয়টা তো জালাল ভাই বলেছেনই। তো আমার মনে হয় যে মোস্তাফিজ প্রথম দুই ম্যাচ না-ও খেলতে পারেন। কিন্তু হ্যাঁ, একটা সেটাপের সঙ্গে থাকা টা... একটা দল যেহেতু বিশ্বকাপে যাচ্ছে, দলের বন্ডিংয়ের ব্যাটারটা আছে, এগুলো সব কিছু মিলিয়েই হয়তো তারা এ ব্যাপারটা চিন্তা করেছেন। ব্যাপারটা এমন না যে মোস্তাফিজ না খেললে আমরা জিতব না। তাসকিন না খেললে বা অন্য কোনো টপ অর্ডারের ব্যাটার না খেললে যে বাংলাদেশ জিতবে না, এটা কোনো কথাই না। যেটা জালাল ভাই বলেছেন মোস্তাফিজের ওয়ার্কলোডকে ম্যানেজ করা, সেটা একটা বড় ব্যাপার। সত্যি কথাই, কারণ এর আগে একটা বিশ্বকাপে কিন্তু তারা ক্লান্ত ছিল, সে কারণেই তাদের পারফরম্যান্স ভালো হয়নি। গত টি-টোয়েন্টি আমরা ভালো করিনি। তো এইবার আমাদের জন্য আরেকটি সুযোগ ভালো কিছু করার। সেটার জন্য আমরা সবাই মুখিয়ে আছি।’