তিন উপজেলার চিত্রা নদীর উপর একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল। কিন্তু সেতুটি ভেঙ্গে পড়ায় এলাকার মানুষ চিন্তায় পড়েছে। বর্তমানে তিন উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। এতে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কালীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমে ফাদিলপুর গ্রামের মৎস্য পাড়ায় চিত্রা নদীর উপরে বাশের সেতু দিয়ে মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা ছিল। সেটি ভেঙ্গে পড়েছে প্রায় ১৫ দিন। ফলে ২০টি গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এলাকাবাসীর চাঁদায় নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়েই এই অঞ্চলের মানুষ চলাচল করে আসছেন।
কালীগঞ্জ, কোটচাদপুর ও ঝিনাইদহ এই তিন উপজেলার প্রায় ২০ গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। বিকল্প কোনো পথ না থাকায় এই সাঁকো দিয়েই যাতায়াত করতে হয় গ্রামবাসিদের। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এলাকার মানুষ এই বাশের সাকো দিয়ে চলাচল করছে। স্থানীয়দের উদ্যোগে নির্মিত সাঁকোটি সপ্রতি বছর মেরামত করেন নিজেরাই। তবে এর একটি স্থায়ী সমাধান চান এলাকার বাসিন্দারা। বিশেষ করে ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ ও কোটচাদপুর উপজেলার শেষ সীমানায় চিত্রা নদীর উপর ফাজিলপুর মৎস্য পড়া নামক স্থানে স্থায়ী কোনো সেতু না থাকায় নিজেদের নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয়রা।
সাঁকোটির উত্তর পাশে গান্না বাজারের পাশে রয়েছে মশিউর রহমান কলেজ, ছবেদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গান্না প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব পাশে রয়েছে রামনগর এ এ- জে কলেজ, কেবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রামনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফাদিলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালুখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ আর ও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ স্বাধীনতার পর থেকে এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি লাঘবে কোনো সেতু নির্মাণ হয়নি। উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় এলাকার মানুষ বাঁশ-কাঠ অর্থ ও স্বেচ্ছা শ্রমে বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করেন। প্রতি বছর এলাকাবাসীর অর্থায়নে সাঁকোটি মেরামত করা হয়। এদিকে চিত্র নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে দু’পাড়ের কৃষক তাদের ফসল উৎপাদন, ফসল ঘরে ও হাটবাজারে নিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা ওয়াদা দিলেও তা বাস্তবে মিলছে না। তাই এলাকাবাসী চিত্রা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। ফাদিলপুর গ্রামের রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী চাঁদা তুলে নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। কিন্তু সেটিও ভেঙে গেছে। এক-দুই দিনের নয়, বছরের পর বছর এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তিন উপজেলার মানুষকে। ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো পার হতে গিয়ে অনেকবার দুর্ঘটনায় পড়তে হয়েছে অনেকের। বর্ষায় এ দুর্ভোগ পৌঁছায় আরও চরমে। সাঁকো মেরামতে সরকারি কোনো অনুদানও পাওয়া যায় না। তিন উপজেলার মধ্যে কালীগঞ্জের সুন্দরপুর দুর্গাপুর ইউনিয়ন, এলাঙ্গি ইউনিয়ন, গান্না ইউনিয়ন ও মহারাজপুর ইউনিয়নের চিত্রা নদীর উপর মানুষের চলাচলে ভরসা একটি মাত্র বাঁশের সাঁকো। কিন্তু সেই সাঁকোটিও নিয়মিত সংস্কার করতে না পারায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠার কারণে ভেঙ্গে পড়েছে।
ঝিনাইদহ সদর, কালীগঞ্জ ও কোটচাদপুর উপজেলার উপজেলা কাদিরকোল, ফাদিলপুর, ইকড়া, কালুখালি, সিংদহ, আলাইপুর, রামনগর, কুল্লাগাছা, গান্নাসহ অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ এই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন। স্থানীয়দের অর্থায়নে মোটা অংকের টাকা ব্যয়ে বাঁশের সাঁকোর কয়েক বছর ভালো গেলেও এখন অর্থের অভাবে বাঁশের সাঁকোটিও নিয়মিত সংস্কার করতে পারেনি। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়েই প্রতিদিন পারপার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ, যে কারণে সেতুটি ভেঙ্গে পড়লো। এ ছাড়া পণ্য পরিবহনসহ যাতায়াত সমস্যার কারণে পিছিয়ে রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান।
সাধারন মানুষ বলছেন সকলের কাছ থেকে চাঁদা তুলে এলাকার যুবকদের নিয়ে বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করা হয়। রামনগর গ্রামের মহিদুল উসলাম বলেন, এই বাশের সাকোর কারণে এলাকার মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়ে চলাচল করে থাকে। এখানে একটি স্থায়ী ব্রীজ হওয়া একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন।
আবার যশোর, ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ, কোটচাদপুর উপজেলায় যেতে হয় এই সাকো দিয়ে। অপর দিকে রয়েছে বাঘমারা বাজার, কালুখালি বাজার, কাদিরকোল বাজার, আলাইপুর ও সিংদহসহ বিভিন্ন বাজারে যাবার একমাত্র ভরসা ফাদিলপুর চিত্রা নদীর উপর বাশের সাকো। সাকোটি প্রায় ১০০ ফুট লম্বা। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা ভোটের আগে সবাই প্রতিশ্রুত দিয়ে থাকে ভোটে পাশ করলে এই এখানে স্থায়ী ব্রিজ করা হবে। কিন্তু অদ্যাবধি কোন জনপ্রতিনিধিই তাদের কথা রাখেনি। এলাকার কৃষকরা ও তাদের জমির ফসল অনা নেওয়া করে থাকে এই সাকো দিয়ে। এলাকার মানুষের প্রশ্ন একটাই আদেও কখন ও এখানে ব্রিজ হবে কিনা সেটা নিয়ে রয়েছে নানা শংশয়।